করোনার ক্ষতিপূরণ পেতে সরকারি চাকরিজীবীদের আবেদনের পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৪৩

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আবেদনের হিড়িক পড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। প্রতিদিন আসছে কয়েক শ’ আবেদন। ভুয়া সার্টিফিকেটসহ অসংখ্য আবেদনও জমা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চার হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এরই মধ্যে যে আবেদন জমা পড়েছে, তাতে এ সংক্রান্ত সরকারী বাজেটে বরাদ্দ টাকায় সংকূলান হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উৎসাহ দিতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। এক্ষেত্রে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্রেডভেদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলা হয়।
এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার লোভে দুর্নীতিগ্রস্ত রিজেন্ট হাসপাতাল ও জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা তথা জেকেজি হেলথ কেয়ারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে কভিড-১৯ পজিটিভের সার্টিফিকেট সংগ্রহের হিড়িক পড়ে যায়।
পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেড়ে যায়। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদনের পাহাড় জমতে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে। ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ করোনায় মারা যাওয়া সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া শুরু করেছে।
এদিকে প্রতিদিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর থেকে আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ পেতে কয়েক শ’ আবেদন জমা পড়ছে। কিন্তু ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির আশায় যারা আবেদন করছেন তাদের অর্থপ্রাপ্তির বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করছে অর্থ বিভাগ। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ভুয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে তাদের প্রদত্ত সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান বন্ধের বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনা করে দেখা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা যত দ্রুতসম্ভব বন্ধ করে দেয়াই ভাল।
করোনায় আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে উপরোক্ত বিষয়গুলো সামনে আশায় অর্থ বিভাগে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক আবেদন এসে জমেছে তা গুনে দেখা হয়নি। তবে চার হাজারের বেশি আবেদন ইতোমধ্যে জমা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার কয়েক ধাপে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু সাধারণ ছুটির মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ মাঠপর্যায়ের কর্মীরা সেবা দিয়ে যান।
ক্ষতিপূরণ দেয়া প্রসঙ্গে গত ২৩ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ওই পরিপত্রে আরো বলা হয়, ২০১৫ এর বেতন স্কেল অনুযায়ী, ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ, মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ এবং মারা গেলে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ এবং মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা পেতে আইনী প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমে মৃতু্বরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের দাবি-সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবেন। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীরা কেবল এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সৃজনকৃত খাতে করোনা (কভিড-১৯) সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় ক্ষতিপূরণ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করা হবে। অর্থ বিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদনপ্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারী আদেশ জারি করবে। এ ক্ষতিপূরণ বর্তমানে প্রচলিত অন্য যে কোন প্রজ্ঞাপন/আদেশে বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এ পরিপত্রের নির্দেশনা কার্যকর হবে।