
ছবি: সংগৃহীত
শিকারি পাখিদের মধ্যে ধলাপেট-সিন্ধু ঈগল একটি রাজকীয় পাখি। এর ইংরেজি নাম White-bellied Sea Eagle. নামটিই বলে দেয়, এরা সাগরের কাছাকাছি বাস করে। আমাদের দেশে উপকূলে আছে এবং বেশ সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। পাখিটি চিল থেকে আকৃতিতে বড়।
এ পাখির মাথা, বুক, পাখার নিচ ও লেজ সাদা। পিঠ ও পাখার ওপরের দিক ধূসর কালচে। বড় বাঁকানো মাংসাশী শক্ত এবং ঠোঁট কালচে ধূসর। পা-জোড়া ধূসর-হলদে এবং তাতে রয়েছে শিকারি পাখির শক্ত কালো নখর। ঈগলদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, স্ত্রী পাখিটি পুরুষ থেকে সামান্য বড়। তার দৈর্ঘ্য ৩১-৩৫ ইঞ্চি, ওজন ২.৫-৪.৫ কেজি। পুরুষটি দৈর্ঘ্যে ২৬-৩১ ইঞ্চি এবং ওজন ১.৮-৩ কেজি। উভয়ের পাখার বিস্তার ৫.৮-৭.২ ফুট। মৎস্যভুক এই পাখিটি ছোঁ মেরে মাছ শিকার করে। খাদ্য তালিকায় আছে- মাছ, কচ্ছপ, সাপ ও অন্যান্য ছোট পাখি। পরিস্থিতি বুঝে মরা পশুর মাংসও খেতে পারে।
উপমহাদেশ থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এ পাখির বিস্তৃতি রয়েছে। আইইউসিএনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পাখিটি বিলুপ্তির হুমকির মধ্যে নেই। তাই এ পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তাও কম। এদের আয়ুষ্কাল ত্রিশ বছরের মতো।
এই ঈগল সারাজীবনের জন্য জুটি বাঁধে। তবে কোনো একজনের মৃত্যু হলে, নতুন জুটি খুঁজে নেয়। একটি জুটি বহু বছর ধরে একই বাসা পুনর্ব্যবহার করে। ফলে প্রতি প্রজনন ঋতুতে কিছু সংস্কারের কারণে বাসাটির আকৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদের প্রজনন ঋতু স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। উপমহাদেশে সেটি অক্টোবর-মার্চ। পানির কাছাকাছি উঁচু গাছে কাঠি ও গাছের ডাল দিয়ে তারা বেশ বড়-সড় বাসা তৈরি করে। বাসার ভেতরটি ঘাস ও সাগরের শ্যাওলা দিয়ে নরম করা হয়। স্ত্রী পাখিটি সে বাসায় সাধারণত দুটি হাল্কা সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ছয় সপ্তাহ তা দেওয়ার পর সেখান থেকে ছানা ফোটে। প্রথম দিকে পুরুষ পাখিটি খাবার নিয়ে আসে এবং স্ত্রী পাখিটি তা বাচ্চাদের মুখে তুলে দেয়। বাচ্চারা বড় হতে থাকলে উভয়ে খাবার সংগ্রহের কাজে লেগে যায়। ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ছানারা উড়ে যাবার মতো পরিণত হয়। তবে প্রায় ছয় মাস অথবা পরবর্তী প্রজনন ঋতু পর্যন্ত তারা বাসাটির কাছাকাছি বসবাস করে থাকে।
লেখক : কাজী সানজীদ, পাখি পর্যবেক্ষক