
ছবি: সংগৃহীত
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে চড়ুই আকৃতির অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি পাখি তাদের প্রজনন ভূমি সাইবেরিয়া থেকে চার হাজার দুশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে শীতের পরিযায়ী পাখি হয়ে আসে! আবার মার্চের শেষে প্রজনন ভূমিতে ফিরে যায়।
পাখিটির নাম খয়রা লাটোরা, ইংরেজি নাম Brown Shrike। মূলত মাঝে মাঝে খেয়ে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে এই দীর্ঘ পথে এরা বেশ কয়েকবার থামে। এভাবে পুরো ভ্রমণ সময়ে ওদের আনুমানিক মাসখানেক সময় লেগে যায়। শীতকালে বেশ কয়েকটি লাটোরা এদেশে আসে। তবে তাদের মধ্যে খয়রা প্রজাতিটিই সর্বাধিক।
এ প্রজাতির পাখি উপনিবেশ প্রথা দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে চলে। গন্তব্যস্থানে এসে হাজির হওয়ার পর চটজলদি নিজস্ব এলাকা নির্ধারণ করে ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের বছরের সীমানাটিই পুনর্দখল করে নেয়। পুরো মৌসুম সেখানে কাটায় এবং অন্য পাখিকে সীমানার মধ্যে ঢুকতে দেয় না। কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করলে আক্রমণাত্মকভাবে তাড়া করে বের করে দেয়। এ জন্য এই পাখিগুলোকে কসাই পাখি বলেও ডাকা হয়। এরা শিকার হিসেবে কোনো টিকটিকি বা বড়সড় পোকাকে প্রথমে একটি পেরেক, তারকাটা অথবা গাছের শক্ত কাঁটার সঙ্গে গেঁথে ফেলে হত্যা করে। পরে সেটি ভক্ষণ করে।
খয়রা লাটোরার দৈর্ঘ্য ১৮ সেন্টিমিটার, ওজন ৩২ গ্রামের মতো। মাথার ওপর থেকে পিঠ হয়ে লেজ পর্যন্ত খয়েরি রং, পাখা কালো। বুকে হালকা সাদার মধ্যে আঁশটে। পা কালো। লাটোরা শ্রেণির পাখির প্রধান শনাক্তকরণ চিহ্ন এদের চোখের ওপর কালো ব্যান্ড থাকে। তাই ইংরেজিতে এদেরকে ‘ব্যান্ডিট ব্যান্ড’ও বলা হয়।
শীতকালে এ পাখিটি দেশের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। কোনো পরিষ্কার খুঁটি বা ডালের ওপর শিকারের আশায় বসে থাকে এবং উচ্চস্বরে অনবরত চেঁচামেচি করে। খাদ্য তালিকায় আছে- টিকটিকি, ঘাসফড়িং এবং বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়। মে-জুন মাস এদের প্রজনন মৌসুম। স্ত্রী পাখিটি গাছের মধ্যে তৈরি বাসায় ৩-৬ টি ডিম পাড়ে। ১২-১৬ দিন স্ত্রী একাই তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। পুরুষটি তখন স্ত্রী পাখিটিকে খাদ্যের জোগান দেয়। বাচ্চা ফোটার পর উভয়ে তাদের যত্ন নেয়। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ছানারা উড়ে যাবার মতো হয়।
খয়রা লাটোরা পৃথিবীর বিস্তীর্ণ স্থানজুড়ে উপস্থিত আছে। এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ নেই। তাই আইইউসিএন পাখিটিকে হুমকিমুক্ত তালিকায় রেখেছে।
লেখক : কাজী সানজীদ, পাখি পর্যবেক্ষক