
এশীয়-শাবুলবুলি। ছবি : শ্রাবণ খায়ের
এই পাখিটির ইংরেজি নাম Indian Paradise Flycatcher. ব্যতিক্রমী সৌন্দর্যের কারণে নামের সঙ্গে স্বর্গ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। এর রূপমাধুর্য বাস্তবেই স্বর্গীয়। শালিকের মতো আকৃতির পাখিটি আমাদের বনেবাদাড়ে দেখতে পাওয়া যায়। আমবাগানে এর উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। পানির কাছাকাছি অবস্থান এদের পছন্দ।
এই প্রজাতির পুরুষ পাখিকে দুই রঙে দেখা যায়, একটি দারুচিনি রঙের অন্যটি সাদা। উভয়ের মাথা ও ঝুঁটি কালো। পাখিটি লম্বায় ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক পাখির অস্বাভাবিক লম্বা লেজ থাকে যেটি ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। অর্থাৎ তখন পুরুষ পাখিটির মোট দৈর্ঘ্য হয়ে যায় ৫০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী পাখির ডানা ও লেজ দারুচিনি, বুক কালচে সাদা, মাথা ও ঝুঁটি কালো। ওদের লম্বা লেজ গজায় না। এদের প্রজননকাল মে থেকে জুলাই। গাছের পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য।
কাজাখস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে উপমহাদেশ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া পর্যন্ত এশীয় শাবুলবুলির বিস্তৃতি রয়েছে। এরা সংখ্যায় পর্যাপ্ত হওয়াতে আইইউসিএন পাখিটি বিলুপ্তি হুমকিমুক্ত মনে করে। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই।
বাংলাদেশে অধুনা কোনো কোনো নব্য বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রীদের মধ্যে যে কোনো মূল্যে একটি ভালো ছবি তোলার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারটি উদ্বেগজনক। এটা করতে গিয়ে তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রজনন ঋতুতে পাখিদের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার, বিশেষ করে বন বিভাগের তরফ থেকে কঠোর নিয়মনীতি বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। গাজীপুর সাফারি পার্কে প্রজনন ঋতুতে প্যারট এভিয়ারির ভিতর দর্শকদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। এটি একটি যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। দেশের সব বন্য পাখির জন্য বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।
উন্নত দেশগুলোতে, এমনকি পাশের বৃহৎ দেশটিতেও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রীদের নিয়ে একই ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই ইস্যুটি নিয়ে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষরা মিলে নীতিমালার ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির উপর একটি গাইড বই তৈরি করেছেন এবং সেটি মেনে চলার জন্য আলোকচিত্রীদের উৎসাহিত করছেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না, নীতিমালা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও থাকছে।
লেখা : কাজী সানজীদ