
নন্দদেবী চূড়া
হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন, বিশাল প্রাকৃতিক ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে একটি পারমাণবিক চুল্লি। সত্য এ কাহিনি অবলম্বনে সহজেই একটি হলিউডি থ্রিলার মুভি তৈরি হতে পারে।
রুক্ষ এবং ঠান্ডা পরিবেশে ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের কুমায়ন ও গারোয়াল জেলাদ্বয়ের মাঝামাঝি হিমালয়ের গভীরে মনে হয় একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে নন্দদেবী শৃঙ্গ। এটি ভারতের ভেতর অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এতদঞ্চলের সবচেয়ে পূজনীয় দেবীর নামেই এই শৃঙ্গের নামকরণ। মনে করা হয় শৃঙ্গটি তার অবস্থান কেন্দ্রসমূহের একটি।
কঠিন পার্বত্য পরিবেশের কারণে এই শৃঙ্গটিতে আরোহণ অত্যন্ত দুঃসাধ্য। এটির তিন দিকে রয়েছে সুউচ্চ সব শিখর যার কোনোটির উচ্চতা সতেরো হাজার ফুটের নিচে নয়। শুধু একদিকে আছে খাড়া একটি নদী ঋষিগঙ্গা ও সংলগ্ন গিরিপথ, যেটি দিয়ে নন্দদেবী শৃঙ্গের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। একই সঙ্গে অনিন্দ্য সুন্দর এবং ভীতি-জাগানিয়া একটি শৃঙ্গ এই নন্দদেবী।
আরোহণের দিক থেকে এভারেস্ট থেকে অনেক কঠিন-এই নন্দদেবীর বিজয় সম্ভব হয় ১৯৩৬ সালে বহু ব্যর্থ অভিযানের পর। এই শৃঙ্গের কাছাকাছি কোথাও লুকিয়ে আছে মানুষের তৈরি একটি যন্ত্র; যেটির মধ্যে রয়েছে ৫ কেজি প্লুটোনিয়াম যা নাগাসাকির উপর নিক্ষেপিত আণবিক বোমার প্লুটোনিয়াম পরিমাণ থেকে মাত্র ১ কেজি কম। সম্ভাব্য ৯০০ বছরের মেয়াদকাল নিয়ে সেটি এই পর্বতের গভীরে পাথরের ভিতর স্থায়ীভাবে বসে আছে।
যা নিয়ে আজকের এই কাহিনি
এটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কার্যক্রমের অংশবিশেষ। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারত সরকারের কাছে হিমালয়ের শিখরে একটি গোপন পর্যবেক্ষণ ও শ্রবণ যন্ত্র বসানোর প্রস্তাব দেয়। উদ্দেশ্য : চীনের পারমাণবিক কার্যক্রমের উপর গুপ্তচরবৃত্তি চালানো। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে তিক্ত অভিজ্ঞতার পর ভারত সাদরে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে ভেবে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রসর হয়। বলা বাহুল্য, তাদের ধারণা ভুল ছিল না। ভারত রাজি হয়ে যায়। ঠিক এর আগের বছরই অর্থাৎ ১৯৬৪ সালে চীন তার প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়।
সিআইএ এবং ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) যৌথ উদ্যোগে ১৯৬৫ সালের অক্টোবর মাসে এই অতিগোপন মিশনটি পরিচালিত হয়েছিল। অংশগ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের চৌদ্দজন এবং ভারতের চারজন দক্ষ পর্বতারোহী।
সেই সময়ই ক্যাপ্টেন মোহন সিং কোহলি প্রথম একটি ভারতীয় পর্বতারোহী দল নিয়ে এভারেস্ট জয় করেন। তিনি ছিলেন সেই দলের নেতা। যখন তিনি সেই বিজয় গৌরবে স্নান করছিলেন, ঠিক তখনই মার্কিন ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা পর্যবেক্ষণ যন্ত্রটি পর্বত চূড়ায় বসানোর গোপন মিশনে নির্বাচিত দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার শরণাপন্ন হয়। যেহেতু পর্বতের সুউচ্চ চূড়ায় পরিকল্পিত এই কাজটি অত্যন্ত দুরূহ, এটি সেনাবাহিনীর নিয়মিত মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের সদস্যদের দ্বারা সম্ভব ছিল না। তাই এভারেস্টজয়ী ক্যাপ্টেন কোহলিই ছিলেন এ মিশনে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি।
ঘটনাটি সম্বন্ধে ক্যাপ্টেন কোহলির বর্ণনা বেশ উপভোগ্য। তার রচিত স্পাইজ ইন দি হিমালয়াসে তিনি বলেন, তার বিশ্বাস এ ধারণাটির জন্ম ওয়াশিংটনে এক ককটেল পার্টিতে। আলোচনাটি শুরু হয় যখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফির স্টাফ ফটোগ্রাফার ব্যারি বিশপ এবং যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনীর চিফ অব স্টাফ কার্টিস লিমে এক সঙ্গে মদ্যপান করছিলেন। তাদের দুজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কমন কিছু ছিল না। কিন্তু বিশপ যখন হিমালয়ের উপর চতুর্দিক দেখার মতো একটি অনন্য সুবিধাজনক স্পটের কথা জানান, লিমে হঠাৎ করে গভীর মনোযোগী হয়ে পড়েন।
কোহলি আরও বলেন, নন্দদেবীতে আরোহণ কাজটি মোটেও সহজসাধ্য নয়। বহুদিন যাবৎ মানুষ ঋষিগঙ্গা ধরে উপরে আরোহণের চেষ্টা করে আসছে। এর অর্থ বিশাল আকৃতির অসংখ্য ঢালু পাথরখন্ড বেয়ে উপরে ওঠা। যার পরে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি সিঁড়ি, যা পাথরের দেয়ালের গায়ে সাজানো রয়েছে। এই সিঁড়িগুলোকে স্থানীয়রা বেশ উপযুক্ত নাম দিয়েছে-স্বর্গমুখী সিঁড়ি। আপনি যদি এই পুরো পথটি অতি সাবধানে পা ফেলে সফলভাবে পার হয়ে যেতে পারেন তাহলে, সত্যিসত্যিই নন্দদেবীর স্বর্গীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আবার একটি পদক্ষেপ ভুল হলেই, হাজার হাজার ফুট পতনের মাধ্যমে পাথুরে গিরিপথে হারিয়ে গিয়ে আরো ত্বরিত স্বর্গে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, নন্দদেবী শৃঙ্গের উপরেই পর্যবেক্ষণ যন্ত্রটি স্থাপন করা হবে। শৃঙ্গটির উচ্চতা ৭,৮১৬ মিটার বা ২৫,৬৪৩ ফুট। সেখান থেকে চীনের বিভিন্ন পারমাণবিক কার্যক্রম সহজেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এখন ব্যাপার হলো, যন্ত্র চলতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তেল বা ব্যাটারির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলেও; সুউচ্চ শৃঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি হিসেবে তা অকার্যকর। তখন, একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি হিসেবে পরমাণু শক্তিচালিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে যন্ত্রটি বহু বছর কার্যকর থাকবে বলে আশা করা যায়।
আগেই বলা হয়েছে এই শৃঙ্গে আরোহণ এভারেস্টে আরোহণ থেকে কঠিনতর। সে কারণে, এই অভিযানটি ছিল অত্যন্ত দুরূহ। তথাপি চীনকে ঠেকানোর অদম্য স্পৃহায় উভয় পক্ষই এই মিশন বাস্তবায়ন করতে একমত হয়। বলা বাহুল্য, তখন পর্যন্ত মহাশূন্যের স্যাটেলাইট থেকে এখনকার মতো শত্রুপক্ষের উপর নিবিড় গোয়েন্দাগিরি চালানোর প্রযুক্তি মানুষের করায়ত্ত হয়নি।
সমস্ত কিছু বিবেচনায়, অভিযাত্রী দলটির নিম্নোক্ত যন্ত্রগুলো বহন করার দায়িত্ব নিতে হয় :
-১০ ফুট অ্যান্টেনাসহ পর্যবেক্ষণ/শ্রবণ যন্ত্র
-দুটি ট্র্যানসিভার সেট
-পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদক জেনারেটর
পারমাণবিক জেনারেটরের জ্বালানির সাতটি প্লুটোনিয়াম ক্যাপসুল একটি বিশেষ কনটেইনারে রাখা হয়। সবগুলো উপাদান মিলে পুরো সিস্টেমটির ওজন হয় ৫৬ কেজি। পুরো দলটির অতি স্পর্শকাতর এই মিশনের গোপনীয়তা বজার রাখার শপথ গ্রহণের পর, তাদেরকে উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আলাস্কার মাউন্ট ম্যাককিনলিতে নিয়ে যাওয়া হয় বিশেষ ট্রেনিংয়ের জন্য।
দলটির সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের পর্বতারোহী জিম ম্যাকার্থিকে প্লুটোনিয়াম রডগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেদেশের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন ১৯৬৫ সালের পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে তাকে ভয়ংকর ঝুঁকি এড়িয়ে সেগুলো সঠিকভাবে হ্যান্ডল করার কাজ শিখিয়ে দেয়। দলের অন্যান্য সদস্যদের বহনযোগ্য লাগেজের বিপজ্জনক বৈশিষ্ট্য এবং তা থেকে যতটা সম্ভব মুক্ত থাকার উপায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
দলটির প্রত্যেকের মাসিক বেতন এক হাজার ডলার ধার্য করা হয়। সে সময় এই পরিমাণটি ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। দেশকে বিশেষ সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে তারা সবাই বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার হবেন ঠিকই, কিন্তু শর্ত থাকে যে কোনো অবস্থাতেই তারা এই মিশনের খবর কারও কাছে প্রকাশ করতে পারবেন না। বরং সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রচার করা হবে এই ইন্দোমার্কিন পর্বতারোহী দলটি মার্কিন বিমান বাহিনীর জন্য অতি উঁচু পর্যায়ের ফ্লাইটের গবেষণার কাজে প্রেরিত হয়েছিল। প্রস্তুতি শেষে ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় মিশনটির নাম দেওয়া হয় অপারেশন হ্যাট।
সাধারণ মানুষের মনোযোগ এড়ানোর উদ্দেশ্যে সব পর্বতারোহীকে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হেলিকপ্টারে করে নন্দদেবীর বেস ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের সব খাদ্যদ্রব্য, মালপত্র এবং আলাদাভাবে গুপ্তচরবৃত্তির পুরো সিস্টেমটি একটি সিসার কাস্কেটে ভরে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী পোর্টারদের মাধ্যমে সরু গিরিপথের মধ্য দিয়ে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পোর্টারদের কাছে কাস্কেটটি ঠিকই অস্বাভাবিক ঠেকেছে। সেটির ওজন ছিল অত্যন্ত বেশি এবং তাদের অনেকেই বলছেন সেটির ভিতর থেকে তাপ বের হচ্ছিল।
পর্বতারোহী দলটি বেস ক্যাম্পে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে স্থিতিশীল হওয়ার পর; তাদের ‘বিশেষ লাগেজ’ নিয়ে পর্বতারোহণের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নন্দদেবীর শৃঙ্গের দিকে ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা শুরু করে। আরোহণের পথে তারা বেশ কয়েকটি ক্যাম্প স্থাপন করেন এবং অক্টোবরের মাঝামাঝি সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণের মতো অবস্থানে পৌঁছে যান। শৃঙ্গটি তখন তাদের সেই ক্যাম্প থেকে মাত্র দুহাজার ফুট উপরে। কিন্তু তখন তারা বিরূপ প্রকৃতির দ্বারা বাধাগ্রস্ত হন।
একটি প্রচণ্ড ঝড় ওই অঞ্চলে আঘাত হানে। ফলে বাকি পথটুকু পাড়ি দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সে অবস্থায় ২৩,০০০ ফুট উচ্চতায় ওঠানো ৫৬ কেজি ওজনের যন্ত্রটি বয়ে বেড়ানো কোনোমতেই সম্ভব ছিল না। এমতাবস্থায় দলনেতা অভিজ্ঞ পর্বতারোহী ক্যাপ্টেন কোহলি দলের সদস্যদের জীবনকে প্রাধান্য দেন এবং যন্ত্রটি সেখানে রেখে পিছনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তার যুক্তি ছিল, পুনরায় অভিযান চালানো খুবই সম্ভব। কিন্তু একটি জীবন চলে গেলে তা কোনোভাবেই রিপ্লেস করা সম্ভব নয়। অতঃপর যন্ত্রটি সেই ক্যাম্পে রেখে সব পর্বতারোহী নিরাপদে নেমে আসার পর অভিযানটির পরিসমাপ্তি ঘটে।
১৯৬৬ সালে বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই সেই একই দল পরবর্তী অভিযানে নেমে পড়েন এবং নন্দদেবীর সুউচ্চ লেভেলে গত শরতে ফেলে আসা সেই যান্ত্রিক সিস্টেমের খোঁজ করতে থাকেন, বিশেষ করে পারমাণবিক ডিভাইসটির। খুঁজতে খুঁজতে তারা তাদের সর্বশেষ ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হন। কিন্তু সেখানে পাওয়া গেল শুধু বিশাল পাথর এবং বরফ খণ্ড, যন্ত্রটির কোনো চিহ্নমাত্র নেই।
তখন তারা খবরটি সিআইএ এবং আইবিকে জানান। ধারণা করা হয় কোনো এভাল্যাঞ্চ এসে সেগুলোকে অন্যত্র নিক্ষেপ করেছে যা পুরু বরফের আস্তরের নিচে ঢাকা পড়েছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু ভিন্ন ধরনের কারণও কানাঘুষা হতে থাকে। কেউ বলেন কোনো পাকিস্তানি পর্বতারোহী দল এসে যন্ত্রটি নিয়ে গেছে। সিআইএর ভিতরে কেউ কেউ বলেন, নিজেদের গবেষণা কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আসলে ভারতই সেটি গায়েব করে দিয়েছে।
যন্ত্রটি আজ অবধি পাওয়া যায়নি
চীনের উপর গোয়েন্দাগিরি করতে মরিয়া সিআইএ এবং আইবি পরবর্তী সময় আবারও ১৯৬৭ সালে একই ধরনের অভিযান চালায় পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার শৃঙ্গ নন্দকোটে। এবার তারা ২২,৫০০ ফুট উচ্চতার সেই শৃঙ্গে একই ধরনের আরেকটি যন্ত্র বসাতে সক্ষম হয়। বেশ কিছুটা স্থান খুঁড়ে সেটি বসানো হয়। চালু করার পর এর কম্পন এবং উত্তাপ দেখে বোঝা যায় যে সেটি চালু হয়েছে।
কিন্তু সেটিও দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের মুখ দেখেনি। বছরখানেক চীনা পারমাণবিক কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য পাঠানোর পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ অনুসন্ধানের জন্য আবারও একটি অভিযাত্রী দল পাঠানো হয় যার নেতৃত্বে ছিলেন আগের মতোই ক্যাপ্টেন কোহলি। তারা সেটির কাছে গিয়ে দেখেন পারমাণবিক জেনারেটরের প্রচণ্ড তাপে যন্ত্রটি গলে গিয়ে পাথরের ভিতরে আট ফুট দেবে গেছে। এসব দেখে এই ধরনের গোয়েন্দাগিরির চিন্তাভাবনা পুরোপুরি ত্যাগ করা হয়। এবার তারা যেকোনো ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়ানোর উদ্দেশ্যে অনেক কষ্টে পুরো সিস্টেমটিকে উঠিয়ে হেলিকপ্টারে করে ফেরত নিয়ে আসেন। এরই সঙ্গে পরিসমাপ্তি ঘটে সিআইএ এবং আইবি পরিচালিত হিমালয়ের শৃঙ্গ থেকে চীনের উপর গোয়েন্দাগিরির সব ধরনের কার্যক্রম।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৬৫ সালে হারিয়ে যাওয়া পারমাণবিক ডিভাইসটির প্রসঙ্গ এখন উঠল কীভাবে! ফেব্রুয়ারি ২০২১ উত্তরখণ্ড রাজ্যে অসময়ে আকস্মিক বন্যা হয়। উপগ্রহ চিত্র থেকে ধারণা করা হয়, সম্ভবত বৈশ্বিক উষ্মতার কারণে গ্লেসিয়ার গলে এই বন্যা সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু উত্তরাখন্ডে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই মনে করেন, এই বন্যার জন্য সেই হারিয়ে যাওয়া ছোট পারমাণবিক ডিভাইসটিই দায়ী। সেটি বিস্ফোরিত হয়ে বন্যা হয়েছে।
২০০০ দশকের মাঝামাঝি নন্দদেবী থেকে পানি ও পলির নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। একটি থেকে ‘কোনো সমস্যা নেই’ রিপোর্ট পাওয়া গেলেও, অন্যটি বলেছে সেই জেনারেটরে ব্যবহৃত প্লুটোনিয়ামের মতো বস্তুর উপস্থিতির লক্ষণ দেখা গেছে। রিপোর্টটি ভারতীয় সরকারের কাছে প্রেরণ করা হলে, তা নিয়ে লোকসভায় ব্যাপক হৈচৈ হয়। কিন্তু সে ব্যাপারে আজ অবধি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ধারণা করা হয় ডিভাইসটি গলে প্লেসিয়ারে না মিশে সেটি পর্বতের পাথরের ভিতর ঢুকে গেছে।
রাষ্ট্রীয় পদ্মভূষণ পদকপ্রাপ্ত এভারেস্টে প্রথম ভারতীয় দলনেতা ক্যাপ্টেন কোহলি আজও জীবিত, বয়স ৯১ বছর। তাকে ষাট দশকের সেই গোয়েন্দা মিশন সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে বলেন, মিশনটি নিয়ে আমি গর্বিতও নই, লজ্জিতও নই।
আমাদের কারও কারও চিন্তা হলো, হিমালয় থেকে নেমে আসা পানি তো আমাদের নদীগুলোতেও চলে আসে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কিছু ভেবে দেখেছি কি!
(তথ্যসূত্র : লাইভ হিস্ট্রি ইন্ডিয়া এবং বিবিসি নিউজ প্রিন্ট ভার্সন)
লেখক : প্রকৃতি ও ইতিহাস অনুসন্ধানী