খুলির আয়তনের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক কতটুকু?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩৩

প্রতীকী ছবি। ছবি- ডয়চে ভেলে
প্রাণীর মস্তিষ্কের আয়তনের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সরাসরি সম্পর্ক নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। একটি গবেষণায় ৩৯টি মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে তুলনা করে জানা গেছে, শরীরের ওজনের সঙ্গে মস্তিষ্কের আয়তনের অনুপাত প্রাণীর দক্ষতা বা পারদর্শিতার মাত্রার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
জুরিখ ইউনিভার্সিটির বিবর্তন বিষয়ক জীববিজ্ঞানী সান্ড্রা হেল্ডস্টাব বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছেন। তিনি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মাথার খুলি পরীক্ষা করছেন।
গবেষণায় গোষ্ঠীগত আচরণের মতো সামাজিক বিষয় ও প্রাণীগুলোর জীবনযাপন পদ্ধতিও বিবেচনা করা হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাণী হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রায় অভ্যস্ত, সেগুলোর মস্তিষ্ক সাধারণত ছোট হয়। অন্যদিকে মাংসাশী প্রাণীর মস্তিষ্ক তৃণভোজী প্রাণীর তুলনায় বড় হয়।
এ কারণে মস্তিষ্কের আয়তন পরিমাপ করতে সান্ড্রা হেল্ডস্টাব বিভিন্ন প্রাণীর খুলির ভেতর সীসার পেলেট ভরে দেন। এমনই একটি নমুনা দেখিয়ে তিনি বলেন, “এটি ম্যাকাক অর্থাৎ আদি বানর প্রজাতির খুলি। তাতে প্রায় ১০০ মিলিমিটার ভরা যায়। অর্থাৎ গ্রাউন্ডহগের তুলনায় অনেক বেশি জায়গা রয়েছে। সেটিতে মাত্র ১৫ মিলিমিটার জায়গা রয়েছে। অর্থাৎ সেই মস্তিষ্কের আকার আট গুণ কম। এবার ডেটাবেসে সেই তথ্য যোগ করতে হবে।”
সান্ড্রা হেল্ডস্টাবরা নানা স্তন্যপায়ী প্রজাতির ১,২০০ মস্তিষ্ক তথ্যভাণ্ডারে সংগ্রহ করেছেন। তিনি ও তার এক সহকর্মী এর সিংহভাগ কাজ করেছেন। মাসের পর মাস ধরে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মিউজিয়াম ঘুরে খুলির মধ্যে সীসার পেলেট ভরে পরিমাপ করেছেন।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সান্ড্রা বলেন, “তিমির মাথার খুলি পরিমাপের কাজ আমার কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনা ছিল। সেটি ছিল স্পার্ম হোয়েল। ১০ লিটারের বালতি দিয়ে আমরা তার মধ্যে পেলেট ভরেছিলাম। সেটা দিয়ে খুলির অর্ধেক অংশ ভরা সম্ভব হয়েছিল। সত্যি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। স্পার্ম হোয়েলের কঙ্কাল বিশাল। খুলিটির আয়তনই আমাদের থেকে অনেক বেশি। ছোট ছোট পেলেট দিয়ে আমরা সেটি ভরিয়ে দিয়েছিলাম।”
মস্তিষ্ক ঠিক কোন পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠে তা জানতেই গবেষণা চালাচ্ছেন সান্ড্রা। মস্তিষ্কের বেড়ে ওঠার জন্য এর “খোরাক” কীভাবে তৈরি হয় সেটিও জানার চেষ্টা করছেন তিনি। কোন প্রাণীর মস্তিষ্কের ওপর কোন বিষয়গুলো প্রভাব রাখে তা বুঝতে তিনি প্রাণীগুলোর খাদ্যাভাস ও বসবাসের স্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
কম বয়সে কতটা নির্ভরযোগ্যভাবে প্রাণী তার খাদ্য জোগাড় করতে পারে- এই বিষয়টিও মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য জরুরি বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
সান্ড্রা হেল্ডস্টাবের ভাষায়, “আমরা সদ্য জানতে পেরেছি যে, খাদ্যের জোগান নির্ভরযোগ্য হতে হবে। যেমন বিভিন্ন প্রাণীর শাবকরা অনেক সময় খাবার নিয়ে এসে দেওয়ার মতো কাউকে না পেলে নিজেরাই খেয়ে নেয়। কিন্তু তাদের বাবা-মায়েরা সেটি করে না। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও অনেক প্রাণীই নিজের ক্ষুধা চেপে রেখে শাবকদের জন্য খাবার সংগ্রহ করে।”
উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য, ধীর গতিতে বৃদ্ধি এবং সামাজিক স্তরে নানা ধরনের শিক্ষা মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বুদ্ধিমান প্রাণীর ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে।