Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

শিশুকে শেখান গুড টাচ, ব্যাড টাচ

Icon

এহতেশাম শোভন

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৯:২৫

শিশুকে শেখান গুড টাচ, ব্যাড টাচ

গ্রাফিক্স: সাম্প্রতিক দেশকাল

কোমলমতি শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বেড়ে চলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দশ বছরের কম বয়সী শিশুরা। যাদের ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতাই তৈরি হয়নি, তারাও এ ধরনের ঘটনার শিকার হচ্ছে। বেশিরভাগ সময় নিজের পরিচিত বা কাছের মানুষের দ্বারাই এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। সতর্ক না হলে এ ধরনের ঘটনায় শিশুর শৈশব বিভীষিকাময় হয়ে উঠতে পারে; যা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ছোট বয়স থেকে শিশুকে গুড টাচ এবং ব্যাড টাচ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।

জড়তা কাটিয়ে উঠুন

অভিভাবকরা অনেকেই শিশুর সঙ্গে এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেন। কিন্তু ‘‌গুড টাচ’‌ ‘‌ব্যাড টাচ’ বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষা শুরু হওয়া উচিত বাড়ি থেকেই। তাই সব ধরনের দ্বিধা দূর করে যত সহজ ও সাবলীলভাবে সম্ভব শিশুকে এ বিষয়ে বুঝিয়ে বলুন। খেলতে খেলতেই শিশুকে এ বিষয় সম্পর্কে জানানো সম্ভব।‌ এ সময় শিশুর কৌতূহলী কোনো প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন না। যতটুকু সম্ভব যথাযথ শব্দ ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর দিন। 

শিশুর শরীরের সীমানা সম্পর্কে ধারণা দিন

শিশুকে বলুন সাধারণত আমরা শরীরের যে অংশগুলো সবসময় ঢেকে রাখি সে অংশগুলো আমাদের একান্ত অংশ। তাকে জানান, ঢেকে রাখা অংশে কেউ স্পর্শ করতে পারে না এবং শরীরের এ অংশগুলোতে কারও স্পর্শ করার অধিকার নেই। শুধু গোসল আর তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সময় বাবা-মা স্পর্শ করতে পারবে। এ ছাড়া বাবা-মায়ের উপস্থিতিতে ডাক্তার চিকিৎসার প্রয়োজনে স্পর্শ করতে পারবে।

শিশুকে স্পর্শের পার্থক্য বুঝিয়ে বলুন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুকে আদর করার ছলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে শিশুর পক্ষে গুড টাচ ও ব্যাড টাচের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে শিশুকে এভাবে বোঝানো যেতে পারে যে...

গুড টাচ হলো সেই স্পর্শ, যাতে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং এ ধরনের স্পর্শের মাধ্যমে ভালোবাসা, আদর, স্নেহ ইত্যাদি বোঝায়। প্রয়োজনে তাকে নিজেদের কিছু উদাহরণ দিতে পারেন। যেমন মা তোমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে। বাবা গালে চুমু খাওয়া, দাদা-দাদুর কোলে নেওয়া, বন্ধুর হাত ধরে খেলা করা ইত্যাদি সবই ভালো স্পর্শ।

ব্যাড টাচ হলো যে স্পর্শে তুমি অস্বস্তিবোধ কর এবং তাকে বাধা দিতে চাও। যদি কেউ তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার শরীরের একান্ত অংশে স্পর্শ করে, সেগুলো হলো ব্যাড টাচ। এ ছাড়া কেউ যদি তোমাকে স্পর্শ করে আর এ কথা কাউকে না বলতে অনুরোধ করে তাহলে এগুলোও ব্যাড টাচ।

শিশুর ভালো বন্ধু হোন

এ ধরনের আচরণের শিকার অধিকাংশ শিশু কারও সঙ্গে ঘটনা সম্পর্কে বলে না এবং নীরবে তা মেনে নেয়। কারণ বাবা-মায়ের সঙ্গে তার তেমন সম্পর্ক তৈরি হয় না। তাই শিশুর সঙ্গে সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করুন। শিশু সারাদিন কী কী করেছে এ বিষয় সম্পর্কে বলতে চাইলে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। শিশুকে আশ্বস্ত করুন যে, তার প্রতি আপনি সচেতন এবং নিশ্চিত করুন শিশু যেন আপনার সঙ্গে সব বিষয়ে শেয়ার করে। 

অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে শিশুর করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দিন

শিশুকে শুধু সতর্ক করেই নয় এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে কী করতে পারে, সে বিষয়েও শিক্ষা দিতে হবে। শিশুকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে বলুন-

  • কারও ছোঁয়া খারাপ লাগলে প্রতিবাদ করতে শেখান।
  • ঘটনাস্থল থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে আসার এবং ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির সামনে একা যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলুন।
  • এ রকম আচরণ কেউ করলে চুপ করে না থেকে কাছাকাছি বিশ্বস্ত কারও কাছে গিয়ে কী ঘটেছে সব খুলে বলতে এবং প্রয়োজনে চিৎকার করতে বলুন।
  • শিশুকে বলুন, যে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে তাকে ভয় না পেতে এবং কোনো কারণে নিজেকে দোষারোপ না করতে।  

সচেতন হতে হবে অভিভাবককেও

আদর দূর থেকেই ভালো। অতিথিকে বলুন, আপনার বাচ্চা গায়ে হাত দিয়ে আদর করা পছন্দ করে না। নিজেরাও অযথা বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে আদর বন্ধ করুন। সে বুঝতে শিখবে, এ রকম করা যায় না। বাচ্চা কাউকে বেশি ভালোবাসছে দেখলেও সজাগ থাকুন। কেন,‌ কারণ খুঁজুন।

  • শিশুর আপত্তি থাকলে তাকে কারও কোলে যাওয়ার জন্য বা চুমু দেওয়ার জন্য জোর করবেন না।
  • আপনার প্রাণচঞ্চল শিশুটি হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেলে তার কারণ জানার চেষ্টা করুন।
  • খেয়াল করুন কারও নাম শুনলে বা কাউকে দেখে শিশু ভয় পাচ্ছে কি না। তাহলে চেষ্টা করুন শিশুর সঙ্গে কথা বলে তার এই ভীতির কারণ জানতে।
  • বাচ্চাকে কেউ বেশি আদর করছে দেখলেও সতর্ক হোন।  
  • শিশুকে কারও কোলে দেওয়া এবং কোলে বসিয়ে আদর করা থেকে বিরত রাখুন।
  • নিজেরাও শিশুদের পছন্দের অপছন্দের গুরুত্ব দিন।
  • শিশুকে মুল্যবোধের শিক্ষা দিন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫