গ্রেটা টুনব্যার্গ প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ২০১৮ সালের আগস্টে। সুইডেনের গণমাধ্যম তখন সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। শুক্রবারের স্কুল বাদ দিয়ে গ্রেটা ঠিক তখনই সংসদের সামনে একা বসে বিক্ষোভ শুরু করেন। তার পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ছড়িয়ে পড়ে সব স্কুলে। অনেক শিক্ষার্থী যোগ দেয় তার সঙ্গে। গ্রেটা টুনব্যার্গ এখন সারা বিশ্বেই সুপরিচিত। ইতিমধ্যে ‘বিকল্প নোবেল’ও জিতেছেন ১৯ বছর বয়সি গ্রেটা।
২২ পেরোনো সেভের্ন কুলিস-সুজুকিকে সবাই বেশি চেনে ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেইরোর আর্থ সামিটে দেয়া দুর্দান্ত এক ভাষণের কারণে। সেই থেকে ক্যানাডিয়ান এই তরুণীকে সবাই ‘বিশ্বকে পাঁচ মিনিটের জন্য স্তব্ধ করে দেয়া সেই মেয়ে’ হিসেবেই চেনে।পরিবেশবিদ ডেভিড সুজুকির সন্তান সেভের্ন মাত্র নয় বছর বয়সে প্রতিষ্ঠা করেন এনভায়র্নমেন্টাল চিল্ড্রেনস’স অর্গ্যানাইজেশন (ইসিও)। সেই প্রতিষ্ঠানও শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিদ শোতেচাত রোসকে-মার্টিনেজও বিশ্বখ্যাতি পেয়েছিলেন খুব কম বয়সে। বয়স ১৬ হওয়ার আগে জাতিসংঘে তিনবার জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাষণ দিয়ে ফেলা শোতেচাত এখন আর্থ গার্ডিয়ান্সের তরুণ পরিচালক। ভালো গান জানেন। ২০১৫ সালে তার কম্পোজ করা গান ‘স্পিক ফর দ্য ট্রিজ’ সেবছরের জাতিসংঘ পরিবেশ পরিবর্তন সম্মেলনের থিম সং-এর মর্যাদা পায়।
ইন্দোনেশিয়ার এই দুই বোন মেলাতি উইজসেন এবং ইসাবেল উইজসেন বালি দ্বীপ প্লাস্টিকের ব্যাগমুক্ত করার আন্দোলন ‘বাই বাই প্লাস্টিক ব্যাগস’-এর সুবাদে এখন বিশ্ববিখ্যাত। দুই বোনের এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। মেলাতির বয়স তখন ১০ আর ইসাবেলের ১২। ছবিতে জার্মানির বাম্বি অ্যাওয়ার্ড হাতে মেলাতি এবং ইসাবেল।
২০১২ সালে তালেবান জঙ্গিদের হামলায় গুরুতর আহত হয় স্কুলছাত্রী মালালা ইউসুফজাই। সেই মালালা এখন তারকা মানবাধিকারকর্মী। ইতিমধ্যে নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৪ সালে নোবেল জেতেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে। সেই সুবাদে এখনো তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সি নোবেলজয়ী। ওপরের ছবিতে লেবাননের এক স্কুলে সিরীয় শরণার্থী শিশুদের হাতে নিজের আত্মজীবনী ‘আই অ্যাম মালালা’ তুলে দিচ্ছেন মালালা।
বেঁচে থাকলে ইকবাল মাসিহর বয়স হতো ২৯ বছর; কিন্তু পাকিস্তানের এই অ্যাক্টিভিস্টকে ২০০৯ সালে কার্পেট মাফিয়ারা গুলি করে হত্যা করে। ইকবালের অপরাধ- মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কার্পেটের দোকানে কাজ শুরু করে, টানা পাঁচ বছর অনেক অত্যাচার সহ্য করার পর সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য শিশুদেরও মুক্ত করার আন্দোলন শুরু করেছিল। শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় তার কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয় কার্পেট মাফিয়ারা।
জাম্বিয়ার থান্ডিয়ে চামার স্কুলের অনেক শিক্ষক এইডসে ভুগে মারা যায়। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল; কিন্তু স্কুল বন্ধ হলেও থান্ডিয়ে লেখাপড়া বন্ধ হতে দেয়নি। ৬০জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে মিছিল করতে করতে পৌঁছে গিয়েছিল এলাকার আরেকটি স্কুলে। সেখানে গিয়ে দাবি জানিয়েছিল, ‘‘আমাদের সবাইকে এই স্কুলে পড়ার সুযোগ দিতে হবে৷’’ স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেয়। পরে এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে মন দেয় থান্ডিয়ে।
সাউথ আফ্রিকার এইডসবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট এনকোসি জনসন এইডসে ভুগে মারা যায় ২০০১ সালে। এইডসে আক্রান্ত বলে ১৯৯৭ সালে জোহানেসবার্গের একটি স্কুলে সে ভর্তি হতে পারেনি। বাকি ছোট্ট জীবনে এইডস আক্রান্ত শরীর নিয়েই এইডসের বিরুদ্ধে অনেক কাজ করেছে এনকোসি। দত্তক মা-র সহায়তায় এইচআইভি আক্রান্ত শিশু এবং তাদের মায়ের জন্য একটা আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল। ২০০৫ সালে তাকে মরণোত্তর চিল্ড্রেনস পিস প্রাইজ দেয়া হয়।
২০১৬ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে জীবনের প্রথম টুইটটি করেছিলবানা আবেদ। মাত্র তিনটি শব্দ লিখেছিল সেখানে, ‘‘ আই ওয়ান্ট পিস৷’’ সেই থেকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ সিরিয়ার ছোট্ট এই মেয়েটির ফলোয়ার বেড়েই চলেছে। এখন তার মোট ফলোয়ার দুই লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি। টুইটারে ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে শুধু সিরিয়ায় শান্তি ফেরানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানায় বানা।