
গত মে মাসে উত্তর পাকিস্তানের হাসানাবাদের হিমবাহী হ্রদের জল উপচে বন্যা সৃষ্টি হয়। ভেসে যায় বাড়িঘর। ধ্বংস হয় দুইটি জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও একটি সেতু। এতে ৭৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

এই পার্বত্য অঞ্চলে অর্ধশত কোটি মানুষের বসবাস। জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জন্য ডেকে আনছে নানা ধরনের বিপদ। হিমবাহের বরফ গলায় তারা পড়ছেন উভয় সংকটে। মে মাসে পাকিস্তান সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৩৩টি হিমবাহী হ্রদ অস্বাভাবিক গরমের কারণে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। আবার সেখানকার ৭০ শতাংশ মানুষ পানীয় জলের জন্য এই হ্রদগুলোর উপর নির্ভরশীল। এর অর্থ হিমবাহ চিরতরে গলে গেলে তারা জলের সংকটে পড়বেন।

হিমালয়, কারাকোরাম ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা নিয়ে গঠিত এশীয় পার্বত্য অঞ্চল। চীন থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত এই এলাকায় ৫৫ হাজার হিমবাহ আছে। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাইরে পৃথিবীর স্বাদু জলের সবচেয়ে বড় উৎস এটি। এই জল এশিয়ার ১০ টি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় যার উপর নির্ভরশীল ২০০ কোটি মানুষ। এরমধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের জলে নির্ভরশীল ৭৫ কোটি মানুষের জীবন।

জাতিসংঘের ইউএনডিপির তথ্য অনুযায়ী, হিমলায় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে না পারলে মধ্য এশিয়ার দুই তৃতীয়াংশ বরফ চলতি শতকের শেষাংশে হারিয়ে যেতে পারে। ক্লাইমেট রিস্ক ইন্ডেক্সে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় যেসব দেশ বেশি বিপদে তার দশটিতে আছে পাকিস্তান ও নেপাল৷ ভারত ও আফগানিস্তান আছে শীর্ষ কুড়িতে।

গলতে থাকা হিমবাহের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ হিমালয় অঞ্চলের ২৫০ টির বেশি হাইড্রোলিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হুমকিতে আছে। সেগুলো নতুন করে নকশা করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। কেননা বরফ গলে গেলে জল সংকটে পড়বে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো।

বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ু দূষণ রোধ হিমবাহ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। এই অঞ্চলে কালো কার্বনের পেছনে ইটের ভাটা ও জীবাষ্ম জ্বালানি দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দায়ী। দ্বিতীয় বৃহৎ দূষণকারী ডিজেল গাড়ি, যার কারণে সাত থেকে ১৮ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়।

হিমালয়ের বরফ গলার পেছনে ভূমিকা রাখছে সার্বিকভাবে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। কিন্তু এজন্য ভুক্তভোগী হওয়া দেশগুলোর দায় সামান্যই। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্যাস নিঃসরণে পাকিস্তানের ভূমিকা মাত্র এক শতাংশ। অন্যদিকে আফগানিস্তান ও নেপালের দায় আরো কম। কিন্তু এই দেশগুলোতেই বন্য, ভূমি ধস কিংবা জলের সংকট ক্রমশ বাড়ছে।
তীব্র তাপদাহে ক্রমাগত গলছে হিমালয়ের বরফ, যার উপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ। বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী অন্য অঞ্চলের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে হিমালয়।-ডয়েচে ভেলে