পৃথিবীর অন্যতম সেরা ৫ ‘স্টিল ফটোগ্রাফ’

দীপংকর গৌতম

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম

আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম

ইতিহাস শুধু অক্ষরেই থাকে না, থাকে ছবিতেও। কখনো কখনো সময়ের সাক্ষ্য বহন করে চলে একজন আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ধরা পড়া কোনো ছবি। হয়ে থাকে সময়ের একটি বিশ্বস্ত দলিল। 

একজন আলোকচিত্রী বহু ছবি তোলেন সারাদিনে-সারাজীবনে। অগণিত ছবি উঠে আসে ক্যামেরার লেন্সে। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা সময়ের ছায়া ফেলা ছবি, তা সে নিজেও হয়তো জানে না। প্রতিদিন এই জনারণ্যে কোটি কোটি ছবি তোলা হয়। এর মধ্যে এমন কিছু ছবি আছে যা কথা বলে মানুষের, সময়ের, ইতিহাসের। হাজার না বলা কথার চেয়ে অনেক বেশি মুখর হয়ে উঠেছে সেসব ছবি। 

রুক্ষ মরুভূমি থেকে যুদ্ধের মাঠ, বন্যা-সুনামি-ভূমিকম্প থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সব বাধা অতিক্রম করে একজন আলোকচিত্রী কোনো একটি ছবির মাধ্যমে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তুলে এনেছেন ক্যামেরার আলো-ছায়ার অবগুণ্ঠনে। যেটা হয়ে গেছে ইতিহাস। এমন ইতিহাসের অজস্র অক্ষর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেসব ছবি তার থেকে ৫টি ছবি পাঠকের জন্য...


অসহায় সানচেজের চোখ

১৯৮৫ সালের ১৩ নভেম্বরের সকাল। কলম্বিয়ার আরমেরো নামে ছোট গ্রামের কাছে নেভাদো দেল রুইজ আগ্নেয়গিরিতে হঠাৎ শুরু হলো অগ্ন্যুৎপাত। আগ্নেয়গিরির লাভা মুহূর্তে মিশে গেল নদীর জলে। ধ্বংস হয়ে গেল ১৩টি গ্রাম। মৃত্যু হলো ২৩ হাজার মানুষের। এর মধ্যে একটি মেয়ে অমায়রা সানচেজ, বয়স মাত্র ১৩ বছর। একটি ভবনের নিচে আটকে পড়েছিল। চারদিকে আগ্নেয়গিরির ফুটন্ত লাভা আর মাঝে সানচেজ। উদ্ধারকর্মীরা সানচেজকে উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। উদ্ধার সম্ভব হলো না। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কিশোরী সানচেজের চোখে আকুল চাহনি! প্রকৃতির নির্মমতার কাছে মানুষ যে কত অসহায়তা তুলে ধরে। সানচেজের এই ছবিটিই যেন তা যুগ যুগ ধরে বুঝিয়ে দিয়ে যায়। বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী ফ্রাঙ্ক ফাউরনিয়া ছবিটি তুলেছিলেন।


‘দ্য ফলিং ম্যান’

২০০৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী আমেরিকার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। সন্ত্রাসবাদী হামলায় ভেঙে পড়েছিল আমেরিকার গর্বের টুইন টাওয়ার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পরপরই স্থানীয় সময় সকাল ৯.৪১-এ একজন ব্যক্তিকে নর্থ টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখা যায়। যেন আমেরিকার সম্মান লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। সংবাদ সংস্থা এপির চিত্রসাংবাদিক রিচার্ড ড্রিউ সেই সময় লোকটির মাটিতে পড়ার আগে এই ছবিটি তুলেছিলেন।


দালির বিড়াল, দালির চেয়ার, দালির জলের ছবি

বিশ্বখ্যাত শিল্পী সালভাদর দালি, যিনি নিজেই একাধিক বিশ্বজয়ী ছবির স্রষ্টা। কিন্তু তাকে নিয়ে তোলা একটি ছবি নিয়েই তোলপাড় হয়েছিল। সালভাদর দালি, তার তিনটি বিড়াল, জল ও চেয়ারের সমন্বয়ে ছবিটি তুলেছিলেন ফিলিপ হেলসম্যান নামের এক ফটোগ্রাফার। ছবিটি তুলতে সময় লেগেছিল মোট ৬ ঘণ্টা! দিতে হয়েছিল ২৮টি শট! এ ছবিটিই সেই ফটোগ্রাফারের স্বপ্নের ছবি।


সাহস দিয়ে যে মানুষটা ট্যাংক থামিয়ে দিলেন

১৯৮৯ সালের ৫ জুন। তিয়েনআমেন স্কোয়ার তখন প্রতিবাদে জ্বলছে। সরকারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের বিরুদ্ধে তখন বিক্ষোভ দিকে দিকে। বিক্ষোভ দমন করতে চীনা সেনাবাহিনী এগিয়ে আসছে সাঁজোয়া ট্যাংক নিয়ে। হঠাৎই ট্যাংকের সামনে এসে দৃপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গেলেন এক ব্যক্তি। সাদা শার্ট পরা সেই লোকটিই যেন হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদের একটি সাহসী বর্ণমালা। একটা গুলি যেখানে মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়, সেখানে এই ব্যক্তি কিনা নির্ভয়ে ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন! এমন সাহস সে পায় কোথা থেকে! এভাবেও যে প্রতিবাদ হয়, তা কি ভাবা গিয়েছিল এর আগে? ব্যতিক্রমী এক নির্ভীক হৃদয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তার এই প্রতিবাদের জেরে বেশ কয়েকটি ট্যাংককে কিছুক্ষণ থামিয়েও রেখেছিলেন তিনি। এ ছবিটি তুলেছিলেন চিত্রগ্রাহক জেফ ওয়াইডেনার। নির্ভীক সেই মানুষটির পরিচয় আজ পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।


অপেক্ষায় খাদক

১৯৯৩ সালে এই ছবিটি প্রকাশ হয়েছিল ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায়। ছবিটি প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। একটা কঙ্কালসার জ্যান্ত বাচ্চার দিকে চেয়ে বসে আছে শকুন। যেন বাচ্চাটির মৃত্যু হলেই সে ঝাঁপিয়ে পড়বে খাবারের ওপর। সুদানের দুর্ভিক্ষের এ ছবিটি তুলেছিলেন বিখ্যাত আলোকচিত্রী কেভিন কার্টার। জনপ্রিয়তা ও সমালোচনা, দুটিই জুটেছিল এই ছবির কপালে। ছবিটির জন্য ১৯৯৪ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পান কার্টার। ছবিটি প্রকাশ হতেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ছবি তোলার পাশাপাশি কি শিশুটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারতেন না কার্টার? বিশ্বজোড়া এই প্রশ্ন উঠতেই কার্টার অবসাদে চলে যেতে থাকেন। তীব্র মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে ১৯৯৪ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন। 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh