
নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার। ছবি: সংগৃহীত
জার্মানির বার্লিনে বাস করা বাংলাদেশি কবি দাউদ হায়দারের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক। গত ১২ ডিসেম্বর থেকে তিনি বার্লিনের একটি হাসপাতালে ‘কৃত্রিম কোমায়’ আছেন।
দাউদ হায়দার বর্তমানে বার্লিনের নয়েকোলন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালটির চিকিৎসক গুলিউও কাটালডেগিরমেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে দাউদ হায়দারের শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটজনক।’
নিকট সুহৃদ মাইন চৌধুরী গতকাল সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) হাসপাতালে কবিকে দেখতে যান। মাইন চৌধুরী বলেন, চিকিৎসকেরা তাকে জানিয়েছেন, দাউদ হায়দারকে ১২ ডিসেম্বর প্রথমে স্থানীয় রাইনিকেডর্ফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে নয়েকোলন হাসপাতালে আনা হয়। তিনি সম্ভবত পড়ে গিয়েছিলেন। তার মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাকে কৃত্রিম কোমায় রাখা হয়েছে।
কবির ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফ হায়দার বলেন, যেটুকু জানা গেছে, বাসার সিঁড়িতে অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে কে বা কারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে। চারদিনেও তার জ্ঞান ফিরেনি।
কবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু জার্মান প্রবাসী মাইন চৌধুরী পিটু জানান, গত ১২ই ডিসেম্বর থেকে দাউদ হায়দারের সেলফোনে কল করছিলেন তিনি। রিং হয় কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। এটা তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে। উদ্বিগ্ন অবস্থায় তিনি কবির বার্লিন শহরের Reinickendorf এলাকার বাসায় যান। পৌঁছে দেখেন বাসা তালাবদ্ধ। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশের নোটিশে আনেন। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের নির্দেশে রেসকিউ টিম দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি 'নিখোঁজ' মর্মে পুলিশকে ছবি এবং শনাক্তকরণে সহায়ক তথ্যাদি সরবরাহ করে গত ১৫ই ডিসেম্বর থানায় রুটিন মামলা হয়। সেই মামলার সূত্র ধরে জার্মান পুলিশের অনুসন্ধানে বাসস্থান থেকে বহুদূরের একটি হাসপাতালে নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় ভর্তি থাকা দাউদ হায়দারের সন্ধান মিলে।
তার সঙ্গে ৩৩ বছরের ঘনিষ্ঠতার কথা জানিয়ে চৌধুরী পিটু বলেন, আমি অল্প আগে তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ছিলাম। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ম্যাসিভ স্ট্রোক করেছেন তিনি। মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে অনেক, পাঁজরেও আঘাত পেয়েছেন। আমরা এখন জেনেছি তিনি বাসার বাইরের সিঁড়িতে পড়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী (অজ্ঞাত) হৃদয়বানরা তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে তাকে পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
কবি দাউদ হায়দার এখন কৃত্রিম কোমায় রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মেশিনের সাহায্যে তাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। আইসিইউতে আমি যেটা দেখলেন তিনি জাস্ট পড়ে আছেন।
জার্মান প্রবাসী কবির স্বজন দুলাল উলফাত (জসিম) বলেন, চিরকুমার দাউদ হায়দারের আগে থেকেই একাকিত্বসহ বয়সজনিত নানা জটিলতা রয়েছে। জীবনের এই কঠিন সময়ে কবির জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনায় জন্ম নেয়া দাউদ হায়দারের বহু পরিচয় রয়েছে। একাধারে তিনি কবি, লেখক এবং সাংবাদিক। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৭৪ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন দাউদ হায়দার। প্রথম ১৩ বছর ভারতে এবং ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি জার্মানিতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার কবিতা ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ প্রকাশিত হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য মামলা হয়। দেশব্যাপী শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মাথায় ২১ মে তৎকালীন শেখ মুজিব সরকার তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে।