Logo
×

Follow Us

কবিতা

তালেবানদের কবিতা

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২১, ১৬:৫০

তালেবানদের কবিতা

তালেবানদের কবিতা

এগুলি মূলত আফগানদের কবিতা। মার্কিনবিরোধীদের মুক্তি সংগঠন তালেবান। যারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে লড়ে যাচ্ছে মার্কিনদের বিরুদ্ধে, গত দিনকয়েক আগে তারা সফল হয়েছে, নিজ বাসভূমে পুনঃস্থাপন করেছে তাদের শক্তি। আফগানিস্তান- প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্যও এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককেই বোঝায়।

আগানিস্তানের শিল্প-সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এদেশে যেমন একদা উর্দু সাহিত্যের কদর তৈরি ছিল- তা আজও রয়েছে তেমনি আফগান সাহিত্যও পরিচিত হোক নতুনভাবে। তালেবানদের এ কবিতাগুলি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ২০১২ সালে প্রকাশিত পোয়েট্রি অফ দ্যা তালেবান বই থেকে নেওয়া। ভাষান্তর করেছেন মীরওয়াইস রহমানি ও হামিদ স্তানিকজাই। সম্পাদনা করেছেন অ্যালেক্স স্ট্রিক ভান লিনশোটেন ও ফেলিক্স কিউন। দুজনেই কিঙস কলেজ লন্ডনে ওয়ার স্টাডিতে পিএইচডি করা। কবিতাগুলি ভাষান্তর করেছেন কায়েস সৈয়দ।

বিসমিল্লাহ ওয়ারদাক
আমি হয়ে গেলাম গরিব, ফকির

আমি হয়ে গেলাম গরিব, ফকির
তুমি হলে জনপ্রিয়, তারপর রাজপুত্র
আমি হয়ে গেলাম ভবঘুরে, যাযাবর
তুমি দেখলে আর হাসতে শুরু করলে
আমি হলাম নিপীড়িত, তারপর গৃহহীন
তুমি হলে প্রস্তুত মেরে ফেলতে আমাকে
কোনো সমস্যা নেই, এসব পরিস্থিতি কেটে যাবে
তুমি স্মৃতি হয়ে গেলে আমার জীবনে
-২২ আগস্ট ২০০৮


মাফতৌন
সোনালি পৃষ্ঠা

এ শহরে মানুষগুলো একে অপরের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়
এ শহরে কারো ইচ্ছাই পূরণ হয় না
যতোদিন পর্যন্ত তোমার রক্ত পিপাসু চোখ তাদের কোটরে নড়ছে
এ শহরে চলতে থাকবে হত্যা
তারা বেড়ে ওঠবে, সবুজ হবে আর ছড়িয়ে দেবে বাতাস
এ শহরে আমি রোপন করেছি একটি অপরিণত প্রেমের বীজ
খান নবাব নেতা শাসক
প্রত্যেকেই এ শহরে আঘাত করেছে আমার হৃদয়ে
চেষ্টা করি ভুলতে কিন্তু তা অসম্ভব, কি করা উচিৎ আমার?
এ শহরে আমার জীবনের সোনালি পৃষ্ঠাগুলো উড়িয়ে দেয়া হয়েছে বাতাসে
বিধাতা ভালো জানেন জ্ঞানী আর চালাক লোকেরা কোথায় চলে গেছে
এ শহরে কিছু পাগল ক্লান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়
পূর্বে তারা ব্যবহৃত হতো ডালপাল আর ফুলের তোড়া বাঁধতে
এ শহরে এখন দড়ি ব্যবহৃত হয় ফাঁসি দেয়ার জন্য
হে মজনু! এ শহর থেকে এখন পালিয়ে যাওয়াই ভালো
কারণ মানুষদের কেটে ফেলা হচ্ছে টুকরো টুকরো করে
-১ সেপ্টেম্বর ২০০৮


আব্দুল বশির এবরাত
আমি এখনও কথা বলছি

একটি মোমবাতির মতো আমি প্রকাশ্যে হাসি আর গোপনে কাঁদি
আমি শুধু চিৎকার করতে পারি তীব্র আর্তনাদে আর এরপর অদৃশ্য

যদি শত্রু কাঁপতে থাকে আর পালিয়ে যায় আমার কাছ থেকে
আমাকে দাফন করার পরও তা-ই করতে থাকবে

কিন্তু আমার এই কথাগুলো শোনো আর উপলব্ধি করো
আমি এখনও দাঁড়িয়ে আছি আমার মৃত্যুর পরও

যদি আমি অদৃশ্য হয়ে যাই
আমি সব সময় উপস্থিত হবো মনে

আমি ঘাসের মতো শুকিয়ে যাবো না
আমি এখনও বলে যাচ্ছি কলমের ভাষায়

উদাহরণ হিসেবে আমি তোমাদেরকে একটি কঠিন তিরস্কারের শিক্ষা দেবো
ইনশাল্লাহ তোমরা তা কখনোই ভুলবে না
-১৯৯০ এর দশকে লেখা


অপেক্ষা
আমি আমার রাত কাটাই তোমার প্রত্যাশায়
দীর্ঘ রাতগুলো কাটাই তোমার অপেক্ষায়

আমি তোমার দরজায় পানপাত্র পরিবেশক
এখনও বিচ্ছেদের বিষাক্ত শারাব ঢালি

সর্বদা তোমার শোকে
আমার শার্টের দিকে গড়িয়ে যায়
উষ্ণ অশ্রুর জলপ্রপাত
-রেডিওতে সম্প্রচারিত : লেখক অজ্ঞাত
১৯৯০ এর দশকে লেখা


অস্থির রাখাল
ও রাখাল, তোমার বাঁশির সুর স্মৃতিবিধুর
পৃথিবীর সভ্যতার সাথে বেদনাবিধুর
এই ধূলিময় মরুতে তুই একাই কাটাও রাত
হলো বাঁশির সুরে গাওয়াই তোমার কাজ, ও রাখাল
তোমার জীর্ণ চুল আর ধূলোয় ভরা দাড়ি খুভ গম্ভীর
সময় না জানা ও রাখাল
আল্লাহ নেকড়েকে উধাও করে দিক
শেয়াল তোমাকে ফেলতে পারে অসুবিধায়
কয়েক মাস ধরে বাড়ি থেকে দূরে ও রাখাল
তোমার গানের সুর যেনো ফুরিয়ে না যায় যাত্রায়
মরুভূমির বুকে যেনো তুমি যেনো ক্ষুধার্ত না হও প্রিয়
তোমার ফাটা পা আর রুক্ষ্ম হাতের যত্ন নেবে কে?
তুমি দেখোনি সান্ত¡না বা আশীর্বাদ, ও যাযাবর রাখাল
মুচি তোমার জুতায় নখ ঠেলে ক্লান্ত
তুমি খুঁজে পাওনি নতুন জুতা, ও সৌন্দর্যবিহীন রাখাল
তুমি হয়তো তুমি বুঝতে পেরেছো নশ্বর জীবনের রহস্য
উপকরণের জগতে অবিশ্বাসী ও রাখাল 
-এপ্রিল ১৯৯৮


বিসমিল্লাহ সাহার
আমার ঈশ্বর

হে ঈশ্বর, আমি তোমার জন্য চিৎকার করে কাঁদি
আমি আমার ভুলের জন্য তোমার দরবারে ক্ষমাপ্রার্থী
এই গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্যই তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো
এমন একটি গন্তব্য যেখানে যেতে আমি বিস্মিত
দুঃখের বিষয় এই যে, আমি আমার সারা জীবনের পাপের গালিচা নিয়ে
চলে যাচ্ছি এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর আঙিনা থেকে
আমার, সাহার এর পাপ তোমার আশীর্বাদের চেয়ে কম
যদি তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমি হবো অত্যন্ত গর্বিত
-১৯৯৮


আব্দুল গাফফার বারিয়্যালাই
প্রার্থনা

প্রার্থনায় খুলেছি মুখ
সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে
আমার শরীরকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে
তুমি নামিয়ে এনেছো তোমার আশীর্বাদ
পৃথিবী আর আকাশ একসাথে দেখতে
আমার হৃদয়ের দাগ তৈরি করে সূর্যের মতো একটি মোমবাতি 
আমার আশার ফুল ফুটে তোমার আশীর্বাদে
তার সুগন্ধ দিয়ে সবদিক সুরভিত করতে
ভাবের অস্পষ্টতার সমাবেশে আমাকে তুমি বানাও অনুবাদক
রহস্যে ভরিয়ে দাও আমার জবান
আমার মনকে নিয়ে আসো শব্দের বাইরে
আমাকে দেখাও মনের বিকাশের ধাপ
বারিয়্যালাই এর ভয়ের কোল আশায় পরিপূর্ণ
আশীর্বাদে পুষ্ট হওয়ার জন্য সে এনেছে একটি উপহার
-১৯৯০ এর দশকে লেখা


কারাগারের দীর্ঘশ্বাস
আমার সাহসী ভাই!
আমার সহযাত্রী বন্ধু!
আমার তাওহীদি সঙ্গী!
হে আমার দুর্গের সঙ্গী!
তুমি কখনো আমার কথা ভেবেছো?
তুমি কখনো আমাকে মনে করেছো?
আল্লাহর দোহাই লাগে আমার সহানুভূতিশীল ভাই!
বলো! যখন তোমার জন্য খাবার রাখা হয় দস্তখানার উপর
আমার শুকনো গলা আর ঠোঁটের কথা কি স্মরণ করো?
যখন তুমি তোমার নরম মনোরম বিছানায় যাও
আমার হাতকড়া আর শেকলের কথা কি কল্পনা করো ?
আমার সহযাত্রী বন্ধু!
আমার তাওহীদি সঙ্গী!
বলো! এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর কসম
যখন তুমি বাসায় পৌঁছাও
তোমার সন্তানরা তোমার চারপাশে জড়ো হয়
তোমার স্ত্রী বসে তোমার সামনে
তুমি কি অনুতপ্ত
আমার স্ত্রীর অশ্রু আর
আমার সন্তানদের চিৎকার?
আমার বৃদ্ধ দাদির কান্না ও দীর্ঘশ্বাস?
এগুলোর জন্য তুমি কি মাঝে মাঝে দুঃখবোধ করো?
এগুলো কি মাঝে মাঝে কষ্ট দেয় তোমাকে?

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫