
প্রতীকী ছবি
চোখ বুজলেই নদীটিকে দেখতে পায় দৈত্য। তার প্রিয় নদী কালীগঙ্গা। সে পূর্ণিমার প্রথম দিন, বিকেলে, সূর্য ডোবার একটু আগে এসে দাঁড়ায় কালীগঙ্গার পাড়ে। প্রতি পূর্ণিমার প্রথম দিন ঠিক এই সময় নদী থেকে উঠে আসে জলপরী। জলপরীর পরনে ফালি ফালি কাটা সোনালি আলোর পোশাক। এত সুন্দর যে কেবল চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু জলপরীর চোখ অস্বাভাবিক শীতল, ক্লান্ত ও বিষন্ন। চোখের মণিতে শত বছরের নিষ্ঠুর বিষণ্ণতা। তবুও দৈত্য এই চোখটির জন্য বসে থাকে নদীটির পাড়ে।
আজও কালীগঙ্গার পাড়ে একলা, নিঃসঙ্গ বসেছিল দৈত্য। পশ্চিম আকাশজুড়ে অস্তগামী সূর্যের লাল আভা। দৈত্যের বিষণ্ণ দুই চোখ মুগ্ধতায় ভরে ওঠে। সে ভাবে, সত্যি তো, চলে যাবারও তা হলে একটা রঙ থাকে, থাকতে হয়। তবে সে কেন জীবনটাকে এত বর্ণহীনভাবে, বিঁধুর থাকে; কষ্ট পায়।
জলপরী আসবে বলে, সেই কবে থেকে, কালোজলের কালীগঙ্গার পাড়ে সূর্য ডোবার কালে বসে থাকে দৈত্য। জলপরীর কথা ভাবলেই তার চোখ দুটি কালীগঙ্গার জলের উচ্ছ্বলতা পায়, তার দু’চোখের ম্লান বিষণ্ণতা জলের তোড়ে ভেসে যায় কোন দূরে। দৈত্য ভাবে, জলপরী এলে তাকে সে কি দেবে। এমন কিছু সে দেবে, যা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, কেবল অনুভব করা যায়। সে তাকায় ডুবে যাওয়া সূর্যটার দিকে, কি সুন্দর রক্তিম আভা ছড়িয়ে চলেছে। জলপরীকে দেবে বলে দৈত্য অস্তগামী সূর্যের লাল আভা থেকে একটুখানি লাল নখে তুলে নিল। সেই লাল আভাটুকু জলপরীকে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই দৈত্য অবাক হয়ে দেখলো জলপরীর নখে সূর্যের আভা নয়, দৈত্যের হৃৎপিণ্ডের রক্ত লেগে আছে। বিকেলের সূর্যের লাল আভাটুকু আর জলপরীকে দেওয়া হলো না দৈত্যের, কোনোদিনই নয়। সূর্যটা ডুবে গেল অতঃপর। সেই মুহূর্তে, চরাচর ব্যাপ্ত গাঢ় বিষণ্ণতায় ডুবে যেতে যেতে কালোজলের কালীগঙ্গার জলের তোড়ে বিপন্ন দৈত্য শোনে জলের লেখা এপিটাফ।
জামশা, কালীগঙ্গা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০