Logo
×

Follow Us

কবিতা

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা

Icon

হাসান হাফিজ

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৫:৫৫

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা

প্রতীকী ছবি

নৈরাশা আপাতজয়ী

স্তব্ধতার সঙ্গে হয়তো দেখা হবে
হোক দেরি, ক্ষতিবৃদ্ধি নাই
এতকাল পুড়ে পুড়ে যে মানুষ অঙ্গার হয়েছে
জনসীমা চড়ারোদ বৈষয়িক বিষলতা কোলাহল থেকে
নিভৃতে লুকিয়ে খুব সহজেই পার পাবে, সে সুবিধা নাই
ভালো কিছু হবে বলে ধৈর্যপোড়া অপেক্ষায় আছে
এ সাধনা বৃথা ও নিষ্ফলা হবে নয়তো মিশবে শূন্যতায়
তেমন বিশ্বাসও কিছু নাই
ভিত্তি আর বাস্তবতা নাই
মানুষের ‘মেল’ দেখে কলুষ পাপের চর্চা দেখেশুনে
নিজেদের মধ্যে লোভ নগ্নতা ঈর্ষার চাষ
রক্তারক্তি নৈরাশ্য বেদনাপুঞ্জ বৈষম্যের পুঁজ
এতটা প্রবল তীব্র, দেখে কবি ভাবে
নিজেই নিজেকে গুম
করে ফেলতে পারলে ভালো হয়,
সে ভুবনে হয়তো এই ক্ষুদ্রতা ও হতাশ্বাস নাই
কিন্তু গুম হওয়ারও মতন
অবকাশ কোথায় কখন
মিলবে কিনা কোনোমতে, সংশয় রয়েছে
এই দ্বন্দ্বে ধোঁয়াশায় প্রগতি ও জীবন আহত
পরাস্ত হয়েছে কাম ক্রোধ রিপু আরণ্য আবেগ
স্তব্ধতা ও শূন্যতার ঘাই দেখছি জাগরূক চরাচরে
নিরঙ্কুশ দাপট দৌরাত্ম্য শুধু এদেরই প্রবল
অন্য কারো অস্তিত্বের কোনোরূপ আলামত নাই...

নির্মোহ সে, আসে-যায় না কিছু

সমুদ্র তো জেগে থাকে সারা দিন, সারা রাত।
তার চোখে তন্দ্রা ঘুম নেই।
            জাগতিক ক্লান্তিকষ্ট অনুতাপ
                    আক্ষেপ ভ্রুক্ষেপ কিছু নেই।
নেই-ই যদি, কীভাবে সে পৃথিবীতে আছে?
আদি থেকে আছে, হয়তো থাকবে অন্তিম অবধি।
সমুদ্রের তৃষ্ণা বড় বেশি। সমুদ্রসমান।
ভাঙনের ক্ষমতাও। তুলনায় সৃজনের 
            চেষ্টা ও তাগিদ বেশ কম।
নিরাসক্ত নির্মোহ থাকার শিল্প
            পুরোপুরি আয়ত্ত করেছে।

সমুদ্রকে ঈর্ষা করে সামান্য মানুষ।
ঈর্ষাবোধ জাগরূক বলেই তো
        এমন ক্ষুদ্রতা শুধু মানুষেরই-
        এ বিচ্যুতি ওদেরই মানায়
        সমুদ্রের নয়,
মানুষ পুড়ুক তাপে যন্ত্রণায় শিলীভূত হোক
        সমুদ্রের আসে যায় না কিছু...

কী কারণে মানুষ পারে না 

কবিতার ছুটিছাঁটা নাই। থাকলে ভালো ছিল। 
ছন্দ গেঁথে গেঁথে, মর্মর পাথরে আত্মা, ধূপ ধুনো
নিপুণ মিশ্রিত করে সৌধ গড়ে তোলা। সোজা কাজ নয় 
কবিতার জন্ম মৃত্যু নাই। আদি থেকে বর্তমান। সেই কবে শুরু। 
এত যে প্লাবন, দাহ, সুনামি-প্রলয়-তারপরও কবিতারে কেউ 
ছুঁয়ে দেখতে পারেনি, পারে না। মানুষ এগিয়ে যায় প্রগতিসড়ক ধরে
কবিতাও অগ্রগামী। সময়েরও চেয়ে দ্রুত বেগে ধাবমান, 
বড় বেশি কষ্ট হয় অনুবর্তী হতে। এত গতি নাই মানুষের।
হিংসা ও বিদ্বেষ আছে। স্বার্থ চিন্তা ক্রোধ কাম সক্রিয় জাগর।
আরো আছে অন্তহীন লোভ আকাশের মতো উঁচু এবং বিশাল, 
এ কারণে কবিতাকে সম্পূর্ণত ধরতে পায় না ভঙ্গুর মানুষ।

ফেসবুক 

হঠাৎই বেমক্কা প্রশ্ন, ফেসবুকে আছ? 
ঢোঁক গিলে জানাই সখেদে, নাই। নাই। 
প্রশ্নকর্তা বাঁকা চোখে তাকিয়ে সামান্য হাসে। 
অত বেশি আধুনিক, প্রযুক্তি-পাগল
হতে কিন্তু দুনিয়ার সকলে পারে না
বোকাসোকা মানুষেরও দরকার কিছুমিছু আছে 
অনেক মানুষ আছে তাহাদের ফেস নাই 
তাদের ফ্যাশনও নয় ফেসবুক। এটাও সান্ত্‌বনা!
শাদামাঠা স্বভাবের, ঠাট্টা করে বলতে পারো
নির্বোধ, সেকেলে। আচ্ছা বেশ, বলো। 
ফেসবুক ব্যতিরেকে মন্দ কিছু আছি?
দূরে নই একেবারে, প্রযুক্তির অত কাছাকাছি
থেকেও তো ছাড়া ছাড়া, সম্পূর্ণত নাই 
এই কথা অকপট সারল্যে জানাই। 
ফেক আইডি সংবলিত মানুষের
এমন বুকের পাটা সৎসাহস আসলেই নাই...

অভিমান : ঠিকুজি কুলুজি

পাথরখণ্ডের মতো নিশ্চলতা ঔদাসীন্য
তোমার তো ছিল না কোনোদিন, থাকলে জানতাম!
চাইলেও কিছুতেই সেই গুণ (!) আয়ত্ত হবে না
তুমি হচ্ছো স্যাঁতসেঁতে আহ্লাদিত অভিমান,
নিতান্তই আত্মগত,ভিতরে লুকানো কিছু নোনা ভাপ
চোখে তুমি মায়াকাড়া অশ্রু হয়ে ফোটো
সর্বদা যদিও নয়,কখনো সখনো ঘটে এই বিপর্যয়
অনেকেই ভুল বোঝে, সেরকমই হওয়া স্বাভাবিক!
পৃথিবীতে শুধুমাত্র কবিই পেরেছে ছুঁতে লাবণ্য রক্তিম
তোমার অন্তঃস্থ মর্ম একমাত্র নির্জনতা কবিই ছুঁয়েছে,
নিজেকে উজাড় করে ভালোবেসে বুলিয়েছে হাত
নিবিয়েছে দহনের সুষুপ্তি আগুন; কিন্তু পুরো কী পেরেছে
এই ঋণ কোনোদিনই কোনোভাবে শোধ করা যায় না হে
আয়ু আর অভিমান এই লপ্তে পুরো খরচা হলে হোক
অভিমান, তোকে আর এই ভূমে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেব না
অনেক হয়েছে ক্ষতি, সর্বনাশ বীজ আমি অজান্তে বুনেছি
এই দীর্ঘ তপস্যায় ঝরে গেছে জীবনের বহু দিন রাত
সুতরাং অভিমান, নিজের অহং সত্তা সামলেসুমলে রেখো
বেমক্কা বিপদে পড়লে রক্ষে করতে আসবে না কেউ..

পিপাসা-প্রতাপ

জীবনতৃষার মধ্যে কী আছে লুকোনো?
এক রকম নির্লজ্জতা অভিলাষ
আরো কিছুদিন আরো অন্তত কয়েকটা দিন
যদি থাকা যায়, টায়েটুয়ে টিকে থাকা যায়
পঙ্গু হয়ে নাহয় নিতান্ত নুলো প্রতিবন্ধী হয়ে
চক্ষুলাজ সেই মর্মে বিসর্জন দিতে রাজি আছি
আহারে বাঁচার তৃষ্ণা ভয়ানক রোদন পিপাসা
যুক্তির ধারো না ধার, অহর্নিশি আবেগে উছলাও
ধুঁকতে ধুঁকতে অবসন্ন ক্লান্ত হয়ে ছিবড়ে হও
বেমালুম ভুলে যাও সবকিছু, নিজ সত্তা পরিচয়
এমন নাছোড়বান্দা স্বভাব তোমার ছিল
বুঝিনি তো আগেভাগে তৃষ্ণা তাই ক্রোধসহ জাগে
এই জাগরণ চাচ্ছে মৃত্যুকে হটিয়ে দিতে
মৃত্যু তার রক্তরাঙা চোখ
কী প্রচণ্ড শীতল ছোবল 
সামান্য স্থগিত রাখবে এরকম আশাই কোরো না
নির্দিষ্ট সময়ে ঠিক ফণা তুলবে
হয়ে উঠবে অলঙ্ঘ্য নিষ্ঠুর ক্রুর হন্তারক
এ গজব ঠেকানোর সাধ্য কারো নাই
মুমূর্ষু যতই কাতরে বলতে থাক 
জীবন তোমাকে আমি চাই চাই চাই

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫