
প্রতীকী ছবি
আজকের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। আফগান সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন।
দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্যও এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হলো পশতু জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিককেই বোঝায়। এখানে শিল্প-সংস্কৃতির চিরায়ত এক সম্পদ লোকগাথার চর্চা। এখানকার কবিতাও শত শত বছর আগে থেকেই সমৃদ্ধ। মওলানা জালাল উদ্দীন রুমির প্রভাবও কম নয়, এখানে বসবাসকারী নাগরিকরা কেবল যুদ্ধের ময়দানে দীপ্ত নয়। প্রেমময় কবিতা লিখতেও সিদ্ধহস্ত। সাম্প্রতিক সময়ের আফগান কবিদের কয়েকটি প্রেমের কবিতা প্রকাশ করা হলো।
আব্দুল শুকুর রিশাদ
স্বাধীনতা
লাইলি না থাকলে মজনুর বেঁচে থেকে কী লাভ?
হৃদয়ই না থাকলে
ফাঁপা শরীর থেকে কী লাভ?
মাটির শরীরের ভেতর হৃদয় হলো প্রদীপ
এই প্রদীপ যেন নিভে না যায়;
খাঁচা ছেড়ে পাখি উড়ে গেলে
খাঁচা ভেঙে ফেলার যোগ্য
হৃদয় না থাকলে ফাঁপা বুক
দ্রুত মরে যাওয়াই শ্রেয়-
জীবন থাকা জিনিসের চিরস্থায়িত্ব দায়
হৃদয় মরলে দেহকেও মরে যেতে হয়
আর তাই-ই হয়।
স্বাধীনতা প্রতিটি জাতির শরীরের হৃদয়
স্বাধীনতা ছাড়া জাতি আর চিরস্থায়িত্ব উভয়ই মৃত
শাহজেব ফকির
আত্মা
গ্রামটাকে অদ্ভুদ মনে হচ্ছে
এ হলো বিচ্ছেদ
যেন আমার প্রিয়তমা তাকে ছেড়ে চলে গেছে
আত্মা দেহ ছেড়ে না গেলে
শরতে শুকিয়ে যাওয়া ফুলের মতো
কেঁপে কেঁপে ওঠে
শরৎ এসেছে এখন আমার ভালোবাসায়
উসকোখুসকো চুল নিয়ে আমি একা থাকি দুর্বোধ্য
বহুদিন ধরে আমার হৃদয় ব্যথিত
মুহূর্তের মধ্যে তা আমার জীবনে গর্ত খোঁড়ে
প্রতিটি ঘটনা যেন এক একটি তীর
ওহ ফকির! ব্যথিত হওয়া ভালো
কে বলেছে তোমাকে ভালোবাসা সহজ?
ফারাহ ইমতিয়াজ
নববর্ষ
ও নববর্ষ-
নিয়ে এসো সুখ আর ফুলের সুবাস
নিয়ে এসো আরো একবার বসন্ত
নিয়ে এসো আরো একবার রক্তিম ফুলের গুচ্ছ
রাঙিয়ে দাও আমার জীবন
আনো রঙের বাহার
লাইলি-মজনুর স্মৃতির মাধুরী
তোমার সঙ্গে নিয়ে এসো এসবের কিছু
আলোকিত করো স্থান আর আনো বর্ণিলতা
সঙ্গে করে নিয়ে এসো লাল লাল ফুল ও সমৃদ্ধি
সুবাসিত করো বাতাস আর পরিণত করো বসন্তে
সঙ্গে করে নিয়ে এসো ফারাহর প্রশান্তি
আব্দুল্লাহ
শেখো
পাপিয়ার মতো মধুর সুরে কথা বলতে শেখো
পাপিয়ার সঙ্গে ফুলের নীরব কথাকে শেখো
মাথা ঢাকো
বেড়িয়ে এসো ফুল থেকে
বাতাসের মধ্য দিয়ে মৃদুমন্দ হাওয়ার মতো ফুঁ দিতে শেখো
পাখির মতো আর কতদিন বাঁচবে?
ঈগলের মতো স্বাধীনভাবে উড়তে শেখো
বাড়াও গতি
দ্রুত এগিয়ে দাও কাফেলা
কাছাকাছি-ই গন্তব্য
ঘণ্টার মতো তোমার কণ্ঠ প্রসারিত করতে শেখো
ছাড়ো আরাম
গ্রহণ করো কষ্ট
ও আগ্রহদীপ্ত আফগান
মাতৃভূমির বেদনা ও শোকে কাঁদতে শেখো
ভাষান্তর : কায়েস সৈয়দ