Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

রাজনীতিতে একঘরে সরোয়ার, আমন্ত্রণেও সাড়া দেয়নি বরিশাল বিএনপি

Icon

খান রুবেল, বরিশাল

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৬

রাজনীতিতে একঘরে সরোয়ার, আমন্ত্রণেও সাড়া দেয়নি বরিশাল বিএনপি

মজিবর রহমান সরোয়ার। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে অনেকটা একঘরে হয়ে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। দলের সভা-সমাবেশে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না তিনি। এমনকি কেন্দ্রীয় এই নেতার আমন্ত্রণেও সাড়া দিচ্ছেন না স্থানীয় নেতারা।

দীর্ঘদিন পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মজিবর রহমান সরোয়ার।

এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাদের নিজে ফোন করে আমন্ত্রণ জানান তিনি। কিন্তু তার এ আমন্ত্রণে সাড়া দেননি কেউ। যে কারণে নিজ অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়েই জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন করেছেন বরিশাল সিটির প্রথম মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার।

তবে দলের একজন সিনিয়র নেতার আমন্ত্রণে সাড়া না দেয়ার ঘটনাটি দলীয় মহলে বেশ সমালোচনার ঝড় তুলেছে। যদিও আমন্ত্রণ পেয়েও অংশগ্রহণ না করার কারণ হিসেবে নানা অজুহাত তুলে ধরেছেন জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর কাউনিয়া সাধুর বটতলা এলাকায় মমতাজ মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার।

দীর্ঘদিন পরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য জেলা ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়ক, সদস্য সচিব এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্যসহ শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানান মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি নিজেই সব নেতাদের ফোন করে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেউ সেই অনুষ্ঠানে আসেননি বলে জানিয়েছেন সরোয়ার অনুসারী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আয়োরুল হক তারিন।

এই নেতা বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ার আমাদের সবার নেতা। তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব। অথচ বরিশালে স্থানীয়ভাবে বিএনপির কোন প্রোগ্রামে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে কোন আয়োজনে আমন্ত্রণ পেলে অবশ্যই তিনি সেখানে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমাদের সবার নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করেন মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি চেয়েছিলেন সবাইকে নিয়েই এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করবেন। এজন্য তিনি নিজেই সব নেতাদের ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ এই আয়োজনে অংশ নেননি।

তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, আমি কোন আমন্ত্রণ পাইনি। তবে আমি অন্যদের মাধ্যমে জেনেছি সে একটি আয়োজন করেছেন। আমাকে তিনি দাওয়াত দিলে অবশ্যই সেখানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতাম। কেননা তিনি তো আমার দলের নেতা, মানে আমারও নেতা।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, আমন্ত্রণ পেয়েছি। সরোয়ার ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত কারণে যেতে পারিনি। আমার বাসায় দীর্ঘবছর পরে বিদেশ থেকে আমার ভাতিজারা এসেছিলেন। তাছাড়া এখানে আমার আহবায়ককে দাওয়াত দেয়া হয়নি। সরোয়ারভাই তাকে দাওয়াত দেয়ার জন্য আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু সরোয়ার ভাই নিজে দাওয়াত না দেয়ায় আমার আহবায়ক সেখানে যাননি। তিনি যেখানে যাননি সেখানে আমি গেলে দলের মধ্যে একটা গ্রুপিং দেখা দিতো। কিন্তু আমরা চাচ্ছি গ্রুপিংয়ের ঊর্ধ্বে থেকে দলের জন্য কাজ করতে।

এ বিষয়ে জানতে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খান বলেন, আমাকে সরোয়ার ভাই ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি ঢাকায় অবস্থান করছি বিধায় অনুষ্ঠানে থাকতে পারিনি।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন বলেন, বৃহস্পতিবার সারাদিন অনেক প্রোগ্রাম ছিল। পেশাগত কাজও ছিল। তাছাড়া আমার নিজেরও একটি মামলার হাজিরা ছিল। যেকারণে সারাদিন অনেক ব্যস্ততার কারণে রাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাছাড়া প্রচণ্ড শীতের কারণে হতে পারে অন্য নেতারা কেউ তার আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চান একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, ওইদিন রাতে অনেক শীত পড়েছিল। তাই বাসা থেকে বের হতে পারিনি। আয়োজনটা দিনে হতে যেতে পারতাম। তাছাড়া সারাদিন দলের অনেকগুলো প্রোগ্রাম ছিল। সেগুলোতে অংশগ্রহণ করে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ি।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবা উদ্দিন ফরহাদ বলেন, আমন্ত্রণ পেয়েছি। সরোয়ারভাই নিজেই ফোন করেছিলেন। যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ওইদিন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আটকে গিয়েছিলাম।

তবে মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভেকেট বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন বলেন, আমি ফেসবুকে একটি ছবি দেখে যানতে পেরেছি তিনি বরিশালে কোন প্রোগ্রাম করেছে। তবে কোথায় করেছেন সেটা জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি।

এই নেত্রী বলেন, তিনি (মজিবর রহমান সরোয়ার) যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা ভালো। এখানে নেতারা গেলেও অন্যায় ছিল না। তবে শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা এবং মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আলাদাভাবেই কর্মসূচি পালন করেছে। হতে পারে নেতারা এজন্যই ব্যক্তির গুরুত্ব না দিয়ে সংগঠনের গুরুত্ব দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ভাবলাম বরিশালে যখন উপস্থিত আছি তখন সবাইকে নিয়েই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন করি। এজন্য আমি সবাইকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমার কাজ ছিল আমন্ত্রণ জানানোর, আমি জানিয়েছি। কিন্তু তাদের মনে কি আছে সেটা তো আর আমি জানি না।

তিনি বলেন, আমি পারিবারিক কোন আয়োজন করেনি। এখানে আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালনের জন্য আলোচনা সভা ও দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করেছি। এটা নিয়ে কোন রাজনীতি বা বিবাদ থাকার কথা না। এখন তারা কেন আসলো না সেটা বলতে পারব না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫