সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। একই দিন সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সরকার ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির অতীত রাজনৈতিক কর্মসূচির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তারা ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালে আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আবারও তারা সেই ধারায় ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা ক্ষমতাসীনদের। গণসমাবেশের নামে ঢাকায় অবস্থানের ষড়যন্ত্র তাদের ছিল। কিন্তু সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এবার পদযাত্রার নামে তৃণমূলে সহিংসতা করতে পারে বলে দাবি করে তা মোকাবিলায় ইউনিয়ন ইউনিয়নে সতর্ক পাহারায় থাকবে তারা।

সংঘাত সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগই চেষ্টা করছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতারা বলছেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি দলটির পক্ষ থেকে প্রথম ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) সেটি হওয়ার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ একদিন পরে (৫ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূচির জন্য তারা ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে। তারপর বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। এতেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য উসকানি দিয়ে বিএনপিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়া।

বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে দেশবাসী ও আওয়ামী লীগ আবারও সন্ত্রাসের আশঙ্কা করছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দলীয় কর্মসূচিতে তিনি বলেন, পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে, তাদের আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কায় আমরা শান্তির সমাবেশ করেছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে আমরা শান্তি সমাবেশ করব।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, শনিবার সকাল থেকে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ইউনিয়নে আসবে। পরে সেখানে থেকে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হবে। দলের পক্ষ থেকে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিয়ে, সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে।

পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিলেই তাঁরা (আওয়ামী লীগ) পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপি কর্মসূচি দিলেই তাঁরা প্রতিবাদ কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে আর তাঁরা নাকি শান্তির কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধা দেওয়া চলবে না। লাখো জনতা রাস্তায় নেমে প্রমাণ করেছে গুলি করে, হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে গণজোয়ার বন্ধ করা যাবে না। 

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (জেটেব) আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

আমির খসরু আরও বলেন, বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগের এই পাল্টা কর্মসূচি থেকে বোঝা যায় যে, তাঁদের রাজনৈতিক দৈন্য এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়েও জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। বিএনপির কর্মসূচিকে তাঁরা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

এদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, আমাদের কর্মীরা রাজপথ থেকে গড়ে উঠা কর্মী। কারও সঙ্গে পাল্টা কর্মসূচি আমরা দিচ্ছি না, আমরা আমাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি দিচ্ছি। আমাদের এই স্বাভাবিক কর্মসূচি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-পোর্ট লিঙ্ক রোডে জেলা প্রশাসন আয়োজিত চট্টগ্রাম ফুল উৎসব উদ্বোধনের পর তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজপথে দেখলে মনে হয় ওদের (বিএনপি) গায়ে কাঁটা বিদ্ধ হয়। সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, দেশে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে আছে এবং রাজপথেই থাকবে। বিএনপির কর্মসূচির দিকে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি এবং শান্তি সমাবেশ করছি। কারও সঙ্গে পাল্টা কর্মসূচি আমরা দিচ্ছি না। আমাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিএনপি ও তাদের বাইরেরও দুয়েকজন এমন কথা বলছেন। সরকারে থাকি কিংবা না থাকি, যখন ছিলাম না তখনো রাজপথে ছিলাম, এখন সরকারে আছি, ভবিষ্যতে থাকলে তখনো রাজপথে থাকব।