
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান। ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা আগামীকাল শনিবার (১০ জুন) সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা হবে। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে।
সেখানে দ্বিতীয় জানাজার পর সিরাজুল আলম খানের মরদেহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
জেএসডি সভাপতি আরও বলেন, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে সিরাজুল আলম খানের মরদেহ মোহাম্মদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে গোসল করানো শেষে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে মরদেহ রাখা হবে। পরে শনিবার বায়তুল মোকাররমে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে মারা যান।
৮২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক অনেক দিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ৭ মে রাতে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা নিয়ে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় গত ১ জুন দুপুরে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছিল। এরপর অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল।
১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে সিরাজুল আলম খানের জন্ম। তাঁর বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর থেকে চিরকুমার সিরাজুল আলম খান রাজধানীর কলাবাগানে তার ভাইদের সঙ্গেই থাকতেন। তিনি কখনও জনসম্মুখে আসতেন না। এমনকি কোনো বক্তৃতা-বিবৃতিও দিতেন না। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
ষাটের দশকের প্রথমার্ধে সিরাজুল আলম খানসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার উদ্যোগে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। এ সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এ সময় সিরাজুল আলম খানের নেপথ্য নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রতিষ্ঠা হয়। কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামে ডাকতেন। রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৩, ১৯৭৬ ও ১৯৯২ সালে তিনি কারারুদ্ধ হন।