
বিএনপির লোগো। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসানীতি বাংলাদেশের ব্যক্তিবর্গের ওপর প্রয়োগ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, তাদের জন্য চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করার বিষয়ে দলের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ভার্চুয়ালি দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে আগামী ৫ অক্টোবর চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এ যাত্রায় ভিসানীতি প্রয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
ভিসানীতির প্রয়োগে বিরোধী দলের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে দলের নেতারা তেমন বিচলিত নন বলে জানান। বিএনপি মনে করে, ভিসানীতি প্রয়োগ হবে সেসব ব্যক্তিবর্গের ওপর, যারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্দোলন করে আসছে। ভিসানীতি বরং বিএনপির আন্দোলনকে যৌক্তিকতা দিয়েছে। আর বিরোধী দল মানে শুধু বিএনপি নয়।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পেয়ে হতাশ ছিলেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কয়েক দিন আগেও পরিস্থিতি উত্তরণের পথ খুঁজছিল দলটি। ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ায় এখন প্রেক্ষাপট বদলাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। এ রকম প্রেক্ষাপট চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে বিএনপি।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অক্টোবরের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
চলমান আন্দোলন আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এর পরের কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে এখন সঠিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তাদের মতামত নিয়ে পরবর্তী স্থায়ী কমিটিতে আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করে পাঁচ অক্টোবরের পর ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে যে ধরনের রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রেক্ষাপটে অক্টোবরের মাঝামাঝি সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করাই এখন বিএনপির লক্ষ্য।
নির্বাচন কমিশন অক্টোবরের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। এর আগেই এক দফার আন্দোলন নিয়ে একটি দফারফায় যেতে চায় বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা ঘেরাও এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সম্প্রতি ভৈরব থেকে সিলেট রোড মার্চ শুরুর আগে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার এক সমাবেশে বলেন, সরকার সহজে কথা শুনবে না। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে সরানোর জন্য নেতাকর্মীদের শপথ নেওয়ার কথা বলেছেন।
তবে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিএনপির এক দফা মানানো বেশ কঠিন বলে মনে করছে দলটির নেতারা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে ৩৬ দিনের একটি আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কর্মসূচির নামে, উল্টোপাল্টা করলে প্রতিরোধ করা হবে।