বিএনপির মহাসমাবেশ (ফাইল ছবি)।
একদফা দাবিতে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। সে অনুযায়ী আগামী ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া শারদীয় দুর্গাপূজার দুই-একদিন আগে ১৮ বা ১৯ অক্টোবর ঢাকায় বড় সমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম দিতে পারে দলটি। দাবি না মানলে পূজার পর থেকে চূড়ান্ত ধাপের এই আন্দোলন শুরু হবে- যা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যেও যদি সরকার দাবি না মানে তাহলে আন্দোলনের কর্মসূচি তফসিলের পরও চলতে থাকবে। তবে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না দলটি।
২ অক্টোবর রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে এমন আলোচনাই হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে আন্দোলনের কর্মসূচি কী হতে পারে তা নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট ও দলগুলোর পরামর্শও নিয়েছে বিএনপি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন ভিসা নীতিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। এর মধ্যে ঢাকায় যুব ও ছাত্র কনভেনশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে। সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার আগে চলতি মাসে পর্যায়ক্রমে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিও চলতে থাকবে।
একদফা দাবিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে এখন রোডমার্চ ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। আজ ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ের কর্মসূচি সমাপ্ত হবে। এরই মধ্যে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় আটটি সমাবেশ হয়েছে। রোডমার্চ হয়েছে চারটি। এ ছাড়া ঢাকায় মহিলা সমাবেশ, শ্রমিক কনভেনশন ও কৃষক সমাবেশ হয়েছে। পেশাজীবী কনভেনশন হয়েছে।
বৈঠকে এসব কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি নীতিনির্ধারকরা মূল্যায়ন করেছেন। তাদের কথা হচ্ছে- এসব কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। শ্রমিক কনভেনশনের মধ্য দিয়ে একদফার চলমান আন্দোলনে আগামীতে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। এতে করে আন্দোলন আরও বেগবান হবে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরও শক্তভাবে মাঠে নামবেন তারা, যা হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবর মাসকে ঘিরে কর্মসূচির নানা পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন তারা। এটি হবে তাদের দিক থেকে সরকারবিরোধী টানা আন্দোলন-কর্মসূচির শেষ ধাপ। এই শেষ ধাপের কর্মসূচি সব রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে সাজানো হচ্ছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী পক্ষটি মনে করছে, সরকারকে চূড়ান্ত ধাক্কা দেওয়ার সময় এখনই। কেননা অভ্যন্তরীণভাবে সুস্থির নেই সরকার। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুরোদস্তুর অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক-সামরিকভাবে যেসব রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল সেসব রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা-নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। এর বাইরে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বড় পরিসরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টেও বাংলাদেশ ইস্যুটি উত্থাপিত হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার অনেকটা বেকায়দার রয়েছে। তাই এ সুযোগকে কাজে লাগাতে এ মুহূর্তে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি আরও কঠোর করার চিন্তুা করছে বিএনপি।
২ অক্টোবর রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির যে বৈঠক হয়েছে সেখানেও চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়টিই আলোচনায় এসেছে বেশি। সেদিক থেকে ঘেরাও-অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচির কথা আলোচনায় আছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
আগে শরিকদলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে বিএনপি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল যে, সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, বিচারালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক সংস্থার সামনে অবস্থান বা ঘেরাও কর্মসূচি দিতে পারে। ভিসানিষেধাজ্ঞার কারণে এখন সেই সুযোগ এসেছে বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করার চিন্তা করেছে বিএনপি। এই সময়ে যুব ও ছাত্র কনভেনশন করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ছাত্র কনভেনশনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের বটতলায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূজার সময়টুকুতে বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না বিএনপি ও তার মিত্ররা।
জানা যায়, বৈঠকে হরতালের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অধিকাংশ নেতা হরতালের পক্ষে মতামত দিলেও বিএনপি মহাসচিব আপাতত হরতাল না দিয়ে অবস্থান ধর্মঘট দেওয়ার কথা বলেন। এটা নিয়ে যদিও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত যে রোডমার্চ হয়েছে সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য।
নেতারা জানান, বিএনপি ও তার মিত্রদের কর্মসূচি কেমন হবে তা সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। সরকারের আচরণ কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তার আচরণ পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। সরকারপ্রধানের আচরণ নির্ধারণ করবে বিরোধী পক্ষের কর্মসূচির ধরন কেমন হবে।
আন্দোলনের কর্মসূচির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে যাব, নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাব। এরপর যদি কেউ আন্দোলনে বাধা দেয় সেই বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করব।’