
রাশেক রহমান, মাহবুবুর রহমান, মাহজারুল ইসলাম, সুলাইমান সেলিম। ছবি- সংগৃহীত
৮২ বছর বয়সী এইচ এন আশিকুর রহমান রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১৯৮৬ সাল থেকে রংপুর-৫ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করে আসছিলেন তিনি। সাতটি নির্বাচনে লড়াই করার পর তিনি তার আসনে ছেলে রাশেক রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। দলের কোষাধক্ষ্যের অনুরোধ ফেলেনি আওয়ামী লীগ।
জাতীয় পার্টির শাসনামলে ১৯৮৬ সালে রংপুরের মিঠাপুকুর আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আশিকুর। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে হেরে যান। তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জয় পান তিনি।
এরপর ২০০১ সালে আবার হেরে গেলেও গত তিনটি নির্বাচনে জয় পেয়েছেন আশিকুরই। জাতীয় পার্টি তার এক সময়ের ঘাঁটিতে আশিকুরের কাছে পেরে উঠছে না।
বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছেন রাশেক রহমান। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য হন। এর আগে দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি রংপুর জেলা কমিটির সদস্য রাশেক। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে তার সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
বাবার আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি রাশেক।
উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনিও সাতবারের সংসদ সদস্য। তার বদলে ছেলে মো. মাজহারুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া দবিরুল রাজনীতিতে পোড় খাওয়া মানুষ। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সেই আসন থেকে অংশ নেন সিপিবির প্রার্থী হিসেবে, জয়ও পান।
পরে ১৯৯৬ সালে দবিরুল যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ওই বছরের ১২ জুনের সপ্তম সংসদ নির্বাচন, ২০০১ সালের অষ্টম, ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে ভোটে জেতেন।
মনোনয়ন পাওয়া বড় ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে জড়িত। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। পাশাপাশি শিক্ষকতা করেন।
এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত হাজী সেলিম ১৯৯৬ সালে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর চলে আসেন আওয়ামী লীগে। জয়ও পান।
২০০১ সালে অল্প ভোটে হেরে যাওয়ার পর দুটি নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকের মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে দেন। পরে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবার তিনি নৌকা নিয়ে প্রার্থী হন।
দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে সম্প্রতি। এই অবস্থায় তিনি বড় ছেলে সুলাইমান সেলিম ও ইরফান সেলিমের নামেও দুটি ফরম জমা দেন।
সুলাইমানকে নানা সময় হাজী সেলিমের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখা গেছে। পাশাপাশি তিনি তার বাবার ব্যবসা-বাণিজ্যও দেখাশোনা করেন বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠজনরা।
সুলাইমান সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাবা এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য, এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সব সময় কাজ করে গেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন। যেহেতু বাবার হাত ধরেই আমার রাজনীতি শেখা, উনার আদর্শ ধরে রেখে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাব।
চট্টগ্রামের-১ (মিরসরাই) আসনটিকে বলতে গেলে নিজের করে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেন। সেখানে নৌকা আর তার নাম ছিল সমান্তরাল।
অবশেষে ক্ষ্যান্ত দিলেন তিনি। তার আসনে ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলকে গত কয়েক বছর ধরেই পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ তার প্রবীণ নেতার ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করেছে।
চট্টগ্রামের এই আসনটিতে মোশাররফের জনপ্রিয়তা সব সময় ছিল প্রশ্নাতীত। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হওয়ার পর অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩, ১৯৮৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও জয় পান তিনি। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে অল্প ভোটে হেরে গেলেও পরে উপনির্বাচনে জয় পান। খালেদা জিয়া এই একবারই ভোটে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন।
মাহবুব রহমান রুহেল চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি স্টার সিনেপ্লেক্স মুভি থিয়েটারের মালিক শোমোশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেও তার পরিচিতি আছে। তার ‘ন ডরাই’ সিনেমা ২০১৯ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে।
মাহবুব রহমান রুহেল গণমাধ্যমকে বলেন, আমার উপর আস্থা রেখেই বাবা আর ভোট করছেন না। গত দুইবার সংসদ নির্বাচনে আমি বাবার পাশে থেকে কাজ করেছি। উনার থেকেই আমার রাজনীতি শেখা। আমি ১৫ বছর ধরে তরুণদের নিয়ে কাজ করি। তাই তরুণদের সিংহভাগ ভোট আমি পাব।