
আনোয়ারা ইসলাম রানী ও জিএম কাদের। ফাইল ছবি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে দুটো আসন- গঙ্গাচরা ও সদর আসনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাকি চারটি আসনে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছে।
সদর আসন বা রংপুর-৩ আসন ছিল দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদের মূল আসন। যেখানে এবার লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদ। তবে শেষ পর্যন্ত আসনটি থেকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন এরশাদের ছোট ভাই ও দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে আরও পাঁচজন। তবে স্থানীয়রা বলছেন- এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করায় জিএম কাদের ‘ওয়াকওভার’ পেয়েছেন। সেজন্য প্রচার প্রচারণায় তার কোনও গরজও নেই।
আসনটির বাকি প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক, এনপিপি’র আব্দুর রহমান, জাসদ-এর শহিদুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী।
প্রচার প্রচারণায় অন্য কোনও প্রার্থীকে মাঠে না পাওয়া গেলেও সরব আছেন আনোয়ারা ইসলাম রানী। শহরে যেসব পোস্টার রয়েছে সেগুলোর মধ্যে জিএম কাদের এবং আনোয়ারা ইসলাম রানীর পোস্টার চোখে পড়ার মতো। সাধারণ মানুষের আলোচনাতেও আছেন এই প্রার্থী।
ভোটাররা মনে করছেন- ৭ জানুয়ারি লড়াইটা হবে এই প্রার্থীর মাঝে। অর্থাৎ জিএম কাদেরকে এবার নির্বাচিত হতে হলে মুখোমুখি হতে হবে একজন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীর।
যদিও রানী এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন, তবে রংপুর ৩ আসনে আলোচনায় আছেন এগিয়ে। তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী রানীর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশ প্রবল। তার জনসংযোগ থেকে নির্বাচনী কর্মসূচি সবকিছুতেই ভালো জনসমর্থনের উপস্থিতি দেখা মিলছে। ভোটের মাঠে রানীর অবস্থান কতটা ভালো হবে সেটা সময় বলে দেবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা সময় জাতীয় পার্টি ছিল অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি জাতীয় পার্টিকে নিজেদের জোটে ভেড়াতে চাইত নিজেদের শক্তিমত্তা ও সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে। জনসমর্থন বিবেচনায় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি ছিল রংপুর। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদ রংপুরের সন্তান।
যদিও তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন তার জেলায় জাতীয় পার্টি ততটা জনপ্রিয় ছিল না। লাঙ্গল প্রতীকের দলটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর।
১৯৯১ এবং ১৯৯৬ এর সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে লাঙ্গল প্রতীকে পাঁচটি আসনে জয় পান এরশাদ। রংপুর ততদিনে জাতীয় পার্টির দুর্গ হয়ে ওঠে। কারাগারে থাকার কারণে ওই দুই নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি এরশাদ। রংপুর জেলায় জাতীয় পার্টি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, ২০০১ সালের নির্বাচনেও লাঙ্গল প্রতীক জেলার সবগুলো আসনেই জয়লাভ করে।
বলা চলে ১৯৯১ থেকে ২০০১ নির্বাচন পর্যন্ত রংপুরের সবগুলো আসনই ছিল জাতীয় পার্টির। সেই সময় দলটি স্থানীয়ভাবে এতোটাই জনপ্রিয় ছিল যে লাঙ্গল প্রতীকে যে কেউ নির্বাচন করলে নিশ্চিতভাবে নির্বাচিত হতেন।
তবে বিপত্তি ঘটে ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার তিনটি আসন আওয়ামী লীগের কাছে হারায় জাতীয় পার্টি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে রংপুরে প্রভাব ক্ষয় হতে শুরু করে দলটির। এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুরে জৌলুস হারাতে থাকে দলটি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে ১৫ বছর ধরে জাতীয় পার্টির উপর আওয়ামী লীগের প্রভাব। অনেকে মনে করেন, এ সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের মধ্যে ‘বিলীন হয়ে গেছে’ এবং তাদের নিজের ‘সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা’ নেই।