এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। সে ঘটনারই জন্ম হয়েছে এবার। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ এবার ইতিহাসের পাতায়। স্বর্ণাক্ষরে লেখা রবে এই ক্যাডেট কলেজের নাম। বহু ঘটনার জন্ম হয়েছে এ ক্যাডেট কলেজ থেকে। কিন্তু এবারের ঘটনা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সৃষ্টির শুরু থেকেই এ কলেজ মানবিকতা, সামাজিকতা, দেশাত্মবোধ, একতা, উন্নতিসহ সকল সেক্টরে তার কৃতিত্ব দেখিয়ে চলেছে। কিন্তু রাজনীতিতে এবারই প্রথম এমন ঘটনার জন্ম দিয়েছে এ কলেজের একজন না দুইজন কৃতি সন্তান। তাদের বাড়িও আবার ঝিনাইদহ জেলায়।

ঝিনাইদহ থেকে দুই জন এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ হয়েছেন। দুই জনই প্রথমবার। একজন ঝিনাইদহ-৩ আসন মহেশপুর-কোটচাঁদপুর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সালাহ উদ্দীন মিয়াজী নৌকা প্রতীক নিয়ে বাজিমাৎ করেছেন। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ১৯৭৫ সালে ভর্তি হন। পাশ করে বের হন ১৯৮১ সালে। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সেখানে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ সময়। তিনি মেজর জেনারেল হিসাবে অবসরে যান। নৌকায় ভোট করে ৫৭৫৮৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্ব ট্রাক প্রতীক নিয়ে ৪৭১৭৮ ভোট পান। তিনি জয়লাভ করেন ১০৩৫৮ ভোটে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবেন বলে ঝিনাইদহ তথা দেশের মানুষ আশা করে।

এরপরের গল্প আরো নান্দনিক। তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন ১৯৬৯ সালে। পাশ করে বের হন ১৯৭৫ সালে। বাংলাদেশে ওষুধ জগতে বিখ্যাত রেডিয়েন্ট ফার্মার চেয়ারম্যান তিনি। তার বাড়িও ঝিনাইদহ শহরে। তিনি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। এই মানুষটি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। নৌকার বিরুদ্ধে ঈগলের জনপ্রিয়তা ছিল নির্বাচন শুরুর প্রথম থেকেই। ঈগল পাখির গণজোয়ার ওঠে ঝিনাইদহ-২ আসনে। ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুন্ড) নিয়ে গঠিত জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এ সংসদীয় আসনে তিনি নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করেন। তিনি ভোট পান ১৩৭৫৮৭। তিনি ২২৪৩৫ ভোট পেয়ে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। সেখানে নৌকার প্রার্থী ১৫২১১৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।

বিজয়ী হয়ে ছোট ভাই সালাহ উদ্দীন মিয়াজী বড় ভাই নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। দুজনে কুশল বিনিময় করেন। একে অপরকে আনন্দের সাথে জড়িয়ে ধরেন। ভালোবাসার এক ভিন্নতা ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত সকলের মাঝে। এরপর শুরু হয় দুইজনের পারস্পরিক কথাবার্তা। যা শ্রোতাদের বিমুগ্ধ করে।

ক্যাডেট কলেজ নিয়ে যাদের বিভিন্ন মতবাদ আছে আমরা আশা করি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের এই দুই কৃতি সন্তানকে দেখে তা সম্পূর্ণ বদলে যাবে। নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ।