‘ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদ সংগ্রামে শ্রমিকদের ভূমিকা রাখতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৪, ১৭:৫৮

মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের শ্রমিক সমাবেশ।
সমাবেশের সভাপতি ফয়জুল হাকিম বলেছেন, প্রতিবছর মহান মে দিবসে বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিক্ষোভে রাস্তায় নেমে আসেন। বাংলাদেশেও এবারের মে দিবসে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে পুঁজিবাদী শোষণ-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে, মজুরি দাসত্বের অবসানের দাবিতে, হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদের সংগ্রাম জোরদার করার লক্ষ্যে।
আজ বুধবার (১ মে) সকাল ৯ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের এক শ্রমিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফয়জুল হাকিম বলেন, সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণি এ বছর মে দিবসে একাত্মতা প্রকাশ করে প্যালেস্টাইনের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে, গাজায় গণহত্যার মদদদাতা সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, ভারতের বিরুদ্ধে।
জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে গত ১৬ বছর ধরে হাসিনা সরকার দেশে যে ফ্যাসিবাদী শাসন জারি রেখেছে তা উচ্ছেদের সংগ্রামে বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণিকে রাজনৈতিক ভূমিকা রাখতে তিনি আহ্বান জানান।
এসময় দেলোয়ার হোসেন বলেন, হাসিনা সরকার ‘উন্নয়ন’ ‘উন্নয়ন’ করে, অথচ দেশে শ্রমিকদের মনুষ্যোচিত মজুরি দেওয়া হয় না। বরং আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি করে শ্রমিক হত্যা করে, সে দেশে উন্নয়ন কোথায়?
তিনি বলেন, হাসিনা সরকার ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে এক লাখ শ্রমিককে বেকার করেছে। এই সরকার শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী লুটেরা বড়লোকদের সরকার। এই সরকারকে হটাতে হবে।
প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, আজ যখন আমরা বাংলাদেশে মে-দিবস পালন করছি সে সময় বান্দরবানে বম জাতির নিরীহ জনগণ রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার।
অবিলম্বে গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে বড়লোক শ্রেণির ফ্যাসিবাদী শাসন অবসানে নিপীড়িত জাতিসত্তাকে ভূমিকা রাখতে হবে।
শামসুল আলম মে দিবসের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বেকারি জীবন, মজুরি শোষণ, বাজারি শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির লড়াইয়ে অংশ নিতে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সৌরভ রায় বলেন, শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে বড়লোক শ্রেণির শোষণ লুণ্ঠন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।
কাইয়ুম হোসেন বলেন, মে দিবসে শ্রমিক শ্রেণির অন্যতম দাবি হতে হবে -প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র দিতে হবে।অধিকাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না, ফলে মালিকেরা কথায় কথায় শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে পারে।
রফিক আহমেদ বলেন, মহান মে দিবসে আহ্বান জানাই ঐক্যবদ্ধ হোন। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন, নৌযান, রিকশা ভ্যান, ইজিবাইক, পাটকল, ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, ইটের ভাটা, বিড়ি, সাফাই কর্মী, রেলওয়ে, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, পুস্তক বাঁধাই, চা শিল্প প্রভৃতি সেক্টরের নারী পুরুষ সবাইকে এক মঞ্চে আসতে হবে। জাতীয় নিম্নতম মজুরির দাবি আদায়ে, অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রতিষ্ঠায়,জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) ঢাকা অঞ্চলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, রিকশা মজদুর ঐক্য সংগঠক শামসুল আলম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়,জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক কাইয়ুম হোসেন ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক রফিক আহমেদ।
মে-দিবসের কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ লেখক শিবির সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, মাসিক সংস্কৃতি পত্রিকা ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মুঈনুদ্দীন আহমেদ ও বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ভীমাপল্লী ডেভিড রাজ।
সমাবেশে ‘দুনিয়ার মজদুর ভাইসব, তোরা সব এক মিছিলে দাড়া’ ‘আঠারো ছিয়াশির ১ লা মে শিকাগোর হে মার্কেটে ‘ প্রভৃতি গণসঙ্গীত করে মুক্তির মঞ্চ গণসঙ্গীত দল।