কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান এমপি আজিজের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৩:১৭

সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়েছেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে কে এম আজিজ নামে ফেসবুক পেজে স্ট্যাস্টাস দেন আজিজুল ইসলাম। যা দুপুরের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে সংসদ সদস্যের এ পোস্টকে কেন্দ্র করে উপজেলাতে পক্ষে-বিপক্ষে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শিক্ষার্থীরা ওই পোস্টটি শেয়ার দিয়ে প্রশংসা করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরো উসকে দেওয়া হলো বলে সমালোচনা করছেন।
‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনের কষ্ট দূর করতে এ মুহূর্তে করণীয় কী?’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার কে এম আজিজ নামে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট দেন আজিজুল ইসলাম। সেখানে তিনি লেখেন ‘যেভাবে চলছে, তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগে যাওয়ার কথা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার কোনো সলিউশন হতে পারে না। আমি মনে করি, যেসব শিক্ষার্থীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই, তাদের গ্রেপ্তার করাটা অযৌক্তিক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় করাটা মোটেও সুখকর হবে না। এ মুহূর্তে সরকারের উচিত যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, শিক্ষামন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, অভিভাবক, আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক ও জাতীয় অধ্যাপকদের নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিস্থিতি ফেরাতে একটা সর্বজনীন ডায়ালগের ব্যবস্থা করা।’
ফেসবুক পোস্টে আরো বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রশমিত করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখানোই হবে সময়ের সেরা সিদ্ধান্ত। একটা পক্ষ তো চাচ্ছেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাঁধে বন্দুক রেখে সরকার পতন করতে। দুষ্কৃতকারীদের সেই সুযোগও নষ্ট হবে এ রকম কিছু করলে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় যে দুজন লোকের ওপর শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ, সেই ওবায়দুল কাদের সাহেব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এখনো শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখলাম না। অবশ্যই শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ পোস্টে দেশের মঙ্গলে রাষ্ট্রকেই শিক্ষার্থীদের মনের ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মৃত্যু তাকে ব্যথিত করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রীর কথায় যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই দায়ভার তাদের। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সব শিক্ষার্থীকে জামায়াত-শিবির বানিয়ে দেয়া ঠিক না বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি কথাগুলো বলবেন।
এদিকে সংসদ সদস্যের পোস্টটি ঘিরে উপজেলাতে একদিকে শিক্ষার্থীরা যেমন তাকে প্রশংসা করছেন অন্যদিকে সমালোচনা করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংসদ সদস্যের পোস্টটি স্কিনশট বা পোস্টটি শেয়ার দিয়ে চলমান আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। অন্যদিকে ওই পোস্টটি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরও উসকে দেওয়া হলো বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন। তিনি বলেন, সংসদ সংসদের ওই পোস্টটি অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত। উনি এ ধরণের কথা বলতে পারেন না। উনি তো দলের কেউ না, তাই তিনি দলের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীদের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করেছেন। কোটা আন্দোলন ছাত্র ছাত্রীদের যৌক্তিক আন্দোলন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি জামাত-বিএনপিদের জালাও পোড়াও আন্দোলনে রূপ নেয়। সেটা দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এমপির পোস্টটিতে শিক্ষার্থীদের আরও উসকে দেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আজিজুল ইসলাম এক সময়ে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সদসদস্য নির্বাচিত হন আজিজুল। এরপর ২০২৪ সালে সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে পরাজিত করে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সংসদে ২৮ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ এমপি হয়ে দেশে আলোচনায় আসেন মো. আজিজুল ইসলাম।