Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

ড. ইউনূসের বিশ্বজয়ের অনন্য গল্প

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ২১:৪২

ড. ইউনূসের বিশ্বজয়ের অনন্য গল্প

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

গত সোমবার (৫ আগস্ট) গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরের দিন মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মনোনীত করে আন্দোলনের মূল শক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক উত্থান-পতনে ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর ভরসা রাখছেন আপামর ছাত্র-জনতা। 

ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা

১৯৭২ সালে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন ড. ইউনূস। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কারণে দারিদ্র্যের অর্থনৈতিক দিকগুলি অধ্যয়ন শুরু করেন । তিনি সে সময় তার ছাত্রদের ক্ষেতে গিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করতে বলেন। তবে তিনি তখন অনুধাবণ করেন শুধুমাত্র কৃষি প্রশিক্ষণই ভূমিহীন দরিদ্রদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপকৃত করবে না। কারণ ভূমিহীন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়ার চেয়ে তার অর্থনৈতিক অবস্থাকে পরিবর্তন করা বেশি জরুরীঅ বলে মনে করেন ড. ইউনূস।  তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, অর্থের অ্যাক্সেস যা তাদের ছোট ব্যবসা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে; প্রথাগত মহাজনরা সুদ আদায় করত তার জাল থেকে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেরিয়ে আসতে পারবে। 

১৯৭৬ সালে এই লক্ষ্যে ড. ইউনূস ‘মাইক্রো’ ঋণের একটি প্রোগ্রাম শুরু করেছিলেন। এই ক্রেডিট সিস্টেম যা বাংলাদেশের দারিদ্র্যের সম্মুখীন হওয়া মানুষের চাহিদা মেটাতে ডিজাইন করেন তিনি। ঋণগ্রহীতাদের মাঝে তিনি ২৫ ডলারের মতো ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা করেন। আর এই ঋণে প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি ঋণদানকারী গ্রুপকে গুরুত্ব দেন। এতে করে ঋণগৃহীতার ঋণ ফেরত পাওয়া বিষয়টির নিশ্চয়তাও মেলে। ফলে গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে সহায়তা (সহকর্মী চাপ ছাড়াও) ঋণগ্রহীতাদের তাদের ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য করে। বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পকে ১৯৮৩ সালে একটি স্বতন্ত্র ব্যাংকে পরিণত করে। আর এই মডেল পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে মাইক্রোলেন্ডিংয়ের অন্যান্য রূপকে শুধু উৎসাহিতই করেনি তাকে ভিন্ন এক স্তারে পৌঁছে দিয়েছেন। যার জন্য তাকে সারাবিশ্বের অন্যতম এক প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

মুক্তিযুদ্ধে ড. ইউনূসের অবদান

১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত, ইউনুস মার্ফ্রিসবোরোতে মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি একটি নাগরিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন। তিনি ন্যাশভিলের তার বাড়ি থেকে 'বাংলাদেশ নিউজলেটারও' প্রকাশ করতেন। যুদ্ধ শেষ হলে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে নিযুক্ত হন। তবে কাজটি তার কাছে একঘেয়ে লাগায় তিনি সেখানে ইস্তফা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

সাহিত্যের অবদান এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি

অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বিল্ডিং সোশ্যাল বিজনেস: দ্য নিউ কাইন্ড অফ ক্যাপিটালিজম দ্যাট সার্ভস হিউম্যানিটি'স মোস্ট প্রেসিং নিডস (২০১০) এবং এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস: দ্য নিউ ইকোনমিক্স অফ জিরো পোভার্টি, জিরো বেকারত্ব, এবং জিরো নেট কার্বন নির্গমন (২০১৭)। তার সম্মানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৮৭), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৯৪), এবং ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (২০০৯)। তিনি কিং হোসেন মানবিক পুরস্কারের প্রথম প্রাপক ছিলেন (জর্ডান, ২০০০)।

ড. ইউনূসের গড়া যত প্রতিষ্ঠান

এরপর গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে তিনি গড়ে তোলেন একের পর এক প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো- ১. গ্রামীণ টেলিকম লি: ২. গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি: ৩. গ্রামীণ শিক্ষা ৪. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৫. গ্রামীণ ব্যবস্থা বিকাশ ৬. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৭. গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৮. গ্রামীণ সলিউশন লি: ৯. গ্রামীণ ডানোন ফুডস: লি: ১০. গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি: ১১. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. গ্রামীণ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফ্যাশন লি: ১৩. গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন।

অন্যদিকে, গ্রামীণ কল্যাণের আদলে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠন করা হয় আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো- ১. গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি:, ২. গ্রামীণ সল্যুশন লি:, ৩. গ্রামীণ উদ্যোগ, ৪. গ্রামীণ আইটেক লি:, ৫. গ্রামীণ সাইবারনেট লি:, ৬. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি:, ৭. গ্রামীণ আইটি পার্ক, ৮. টিউলিপ ডেইরী অ্যান্ড প্রোডাক্ট লি:, ৯. গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি:, ১০. গ্রামীণ বাইটেক লি:, ১১. গ্রামীণ সাইবার নেট লি:, ১২. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি:, ১২. রফিক আটোভ্যান মানুফ্যাকটার লি:, ১৩. গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি:, ১৪. গ্রামীণ ব্যবস্থা সেবা লি:, ১৫. গ্রামীণ সামগ্রী।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যত সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ডঃ ইউনুস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬২টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

এদিকে মুহাম্মদ ইউনূস তার কাজের জন্য বিশ্বব্যাপি প্রদত্ত পুরস্কার পান। এর মধ্যে ১৯৭৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহ প্রায় ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে-১৯৮৪ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, ফিলিপাইন, ১৯৮৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ২০০৪ সালে ফিলাডেলফিয়ার হোয়ার্টন স্কুল অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব পেন্সিল্ভেনিয়া তাকে গত "২৫ বছরে ২৫ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন" হিসেবে নির্বাচন করে, ২০০৬ সালে তার অর্থনৈতিক কাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার, ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে শীর্ষ ১২ জন ব্যবসায়িক নেতার মধ্যে স্থান দেয়, তাকে "এশিয়ার ৬০ বছরের নায়ক"দের মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত করে, ২০০৮ সালে ইউনুসকে যুক্তরাজ্যের 'প্রসপেক্ট ম্যাগাজিন' এবং যুক্তরাষ্ট্রের 'ফরেন পলিসি' কর্তৃক পরিচালিত একটি উন্মুক্ত অনলাইন জরিপে শীর্ষ ১০০ জন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দেওয়া হয়, ২০০৮ সালে ইউনুসকে যুক্তরাজ্যের 'প্রসপেক্ট ম্যাগাজিন' এবং যুক্তরাষ্ট্রের 'ফরেন পলিসি' কর্তৃক পরিচালিত একটি উন্মুক্ত অনলাইন জরিপে শীর্ষ ১০০ জন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দেওয়া হয়, ২০০৯ সালে ইউনুস স্লোভাকিয়ার ইনফরমাল ইকোনমিক ফোরাম ইকোনমিক ক্লাব দ্বারা প্রদত্ত সর্বোচ্চ পুরস্কার গোল্ডেন বিয়াটেক অ্যাওয়ার্ড পান (যারা স্লোভাক প্রজাতন্ত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তাদের এটি দেয়া হয়), ২০২১ সালে ইউনুস ক্রীড়া (ইউনুস স্পোর্টস হাবের মাধ্যমে) উন্নয়নের জন্য তার বিস্তৃত কাজের জন্য অলিম্পিক লরেল পুরস্কার পান, এছাড়া ২০২১ সালে ইউনুসকে ইউনাইটেড নেশনস ফাউন্ডেশনের চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ পুরস্কার দেওয়া হয়। মানব মর্যাদা, সমতা এবং ন্যায়বিচার বৃদ্ধির জন্য তার আলোকিত নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

টোকিও  ও প্যারিস অলিম্পিকে সম্মাননা

২০১৬ রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ ধাপে মশাল বহন করেছিলেন ড. ইউনূস। এ ছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভায় বক্তব্যও রেখেছিলেন। এরপর ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে (২০২১ সালে অনুষ্ঠিত) ড. ইউনূসকে লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শান্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দিতে ২০১৬ সালে এই অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তন করা হয়। ড. ইউনূস ছিলেন এই অ্যাওয়ার্ড পাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি।

চলতি প্যারিস অলিম্পিকে ড. ইউনূসকে আরো বড় সম্মান দেয়া হয়। বিভিন্ন দিক দিয়েই এবারের আসরকে ব্যতিক্রম এবং টেকসই অলিম্পিক গেমস হিসেবে উল্লেখ করেছেন আয়োজকেরা। ড. ইউনূসের ‘তিন শূন্য’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ) খ্যাত থিমকেই এবারের অলিম্পিকের মূল বার্তা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। প্যারিস ইএসএস-২০২৪ এবং সলিদেও নামের দু’টি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয় ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার আদর্শে ইতিহাসের সবচেয়ে টেকসই অলিম্পিক গেমসে পরিণত করার।

এর আগে ২০১৭ সালে প্যারিস অলিম্পিক মূলমন্ত্র কী হবে- সেটা ঠিক করতে ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানায় অলিম্পিক কমিটি। পরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রে, প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগোকে নিয়ে গঠিত প্যারিস অলিম্পিক টিমের সদস্য হিসেবে অংশ নেয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিন সদস্যের এই দলটি লুজানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছে প্যারিস অলিম্পিকের মূলমন্ত্র উপস্থাপন করেন।

এরপরে আসরের সামাজিক ও টেকসই বেইস নিশ্চিত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই দলটি জানায়, ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্যারিস অলিম্পিকের মোট উপকরণ সংগ্রহে ৪০০টি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তার পরামর্শ এবং রূপকল্প অনুযায়ীই নির্মাণ করা হয় প্যারিস গেমসের অলিম্পিক ভিলেজ। আসলে অলিম্পিক গেমসের জন্য যে বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, বেশির ভাগ আয়োজক দেশই গেমস শেষে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু ইউনূসের পরামর্শে প্যারিস ভিলেজ নির্মাণের সময় এমন পরিকল্পনা করা হয়, যাতে অলিম্পিক শেষে এই কাঠামোগুলোকে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। অর্থাৎ সম্পদের অপচয় হবে না।

রাজনীতিতে প্রবেশ ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বরখাস্ত

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে ড. ইউনূস নাগরিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দল  গঠন করেন এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা ঘোষণা করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বান্দ্বিক প্রেক্ষাপটে চরম অস্থিরতাকালে তার এই ঘোষণা আসে। ড. ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তার আন্দোলন সুশাসন পুনরুদ্ধার এবং দুর্নীতি দূর করতে সচেষ্ট থাকবে। কিন্তু, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ড. ইউনূস ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসেন।  

২০১১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬০ বছর বাধ্যতামূলক অবসরের বয়স উল্লেখ করে ড. ইউনূসকে গ্রামীণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে বরখাস্ত করে। ড. ইউনূস এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ শুরু করেছিলেন। তবে বাংলাদেশের আদালত পরবর্তীতে তার অপসারণ বহাল রাখে। 

সম্প্রতি শ্রম আইনের একাধিক মামলায় তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছিলো। ড. ইউনূস এসব মামলাকে হয়রানিমূলক উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এ বছরেরই শুরুর দিকে শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ৬ মাসের কারাদণ্ড  দেয়া হয়। এইসাথে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময়ই তাকে হয়রানিমূলক মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এসেছে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। তার নেতৃত্বে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫