
তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। ২০০১ সালে গাজীপুর-৪ আসন (কাপাসিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর পর ২০০৯ সালে আবারও জয় লাভ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেব শপথ নেন। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন। চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। এর তিন বছর পর সংসদ সদস্য হিসেবেও পদত্যাগ করেন তিনি। বলা চলে এক প্রকার স্বেচ্ছায় সবকিছু ত্যাগ করেন তিনি।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে আবারও আলোচনায় তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। সারাদেশে জোর আলোচনা, বাবা-মায়ের পথ অনুসরণ করে তিনিও কি আওয়ামী লীগ পুর্নগঠনে ভূমিকা রাখবেন কিনা। তবে সোহেল তাজ জানিয়েছেন, আপাতত এমন কোনো চিন্তা তার নেই। তিনি রাজনীতিতে ফিরছেন না সহসাই।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় এক অনলাইন পোর্টালে তার সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমার এই মুহূর্তে রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছে নেই। আমি কোনো পরিকল্পনাও করিনি। আমার প্রিয় একটা টপিক সেটা হচ্ছে স্বাস্থ্য। কারণ আমি মনে করি একটা মানুষের জীবনে স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। আমি নতুন প্রজন্মের কাছে এটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। নিজেকে একজন ভালো মানুষ, শুধু শারীরিকভাবে না মানসিকসহ সার্বিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য এটার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি মনে করি এটাও একটা সার্ভিস।
অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলেও দাবি করে তিনি।
এমন বাংলাদেশ চাই যেই বাংলাদেশের জন্য আজকে যুবসমাজ জেগে উঠেছে বলে উল্লেখ করে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, এই বাংলাদেশ নিয়েই কিন্তু আমি গত ১৫ বছর ধরে কথা বলছি। কারণ আমিও রাজনীতিতে ঢুকেছিলাম এই বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আর এটা কোন বাংলাদেশ? এটা হচ্ছে যে বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল, সেই বাংলাদেশ। একটি বাংলাদেশ যেখানে বৈষম্য থাকবে না। একটি বাংলাদেশ যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। যেখানে সবার শিক্ষার অধিকার থাকবে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এখানে গরিব, ধনী কারো মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। সবার গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে। মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হবে। এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে আমরা সবাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মিলেমিশে বসবাস করব, সেটাই কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল। এটাই হচ্ছে আমারও বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, আজকে যুব সমাজ-ছাত্র সমাজ যেটা করছে, এগুলো তারই মিলন। এটা আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষেরই এটা আশা-আকাঙ্ক্ষা। আমি খুবই আশাবাদী, এখন আশা বুকে ধারণ করে কঠিন কাজ করতে হবে। কারণ আমাদের কিছু কালচার তৈরি হয়েছে যেগুলো একেবারে নষ্ট, একেবারে পচা। আমাদের রাজনীতিক কালচারটা পচে গিয়েছে, ধসে গিয়েছে। এই কালচারটাকে ঠিক করতে হবে, এটা কিন্তু কঠিন কাজ। কারণ এটা ছড়িয়ে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আমাদের মানুষ হিসেবে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে যে, এই দেশটা আমাদের সবার। সবার দেশ হলে সবার কিছু দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বগুলো হচ্ছে একজন ভালো নাগরিক হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।
ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে বলে দাবি তুলে সোহেল তাজ বলেন, এটার মূল বাধা হচ্ছে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা। তার পেছনে আছে একটি জঘন্য ধরনের ক্যান্সার, সেটা হচ্ছে দুর্নীতি। আমাদের এইগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সিস্টেমটাকে আবার গড়ে তুলতে হবে। সিস্টেমটাকে মজবুত করতে হবে। সিস্টেমটাকে চলতে দিতে হবে এবং তিনটি জিনিসকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। সেগুলো হলো- দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা।
তিনি বলেন: আমার মূল বিশ্বাস, আমরা যে যেখানে আছি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমরা আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা অবদান রাখতে পারি। অবদান রাখতে রাজনীতিই যে করতে হবে সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আমরা যে যেখানে আছি, সাংবাদিকরা তাদের পবিত্র দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করলে তারাও দেশের জন্য কিছু করতে পারবে। যিনি রাষ্ট্রের কাজ করছেন তিনি সঠিকভাবে দুর্নীতি না করে, অনিয়ম না করে তার দায়িত্ব পালন করলে তিনিও কন্ট্রিবিউট করছেন দেশের জন্য। একজন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া ঠিকভাবে করে নিজেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুললে সেও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য অবদান রাখছে। আমরা যে যেখানে আছি বাংলাদেশের জন্য অবদান রাখতে পারি। সেটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।