Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট আর নেই’

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৮

‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট আর নেই’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ফাইল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের যে জোট ছিল, আন্দোলনের জন্য জোট, সেটা অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে। এটা এখন কোনো কাজ করে না। অনেক আগেই আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রোগ্রাম ঠিক করে যুগপৎ আন্দোলন করেছি সরকার পতন অবধি। এটা এখন বলবত নেই। তবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি, কারণ এখনো কেয়ারটেকার সরকার আছে, এরপর নির্বাচন আছে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা বজায় রাখছি, এটা জরুরি। এই মুহূর্তে আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা জোটবদ্ধ নই।

আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাতকার। তিনি সেখানে বলেন, ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে বিএনপি। দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছিল এবং বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। দণ্ড মাথায় নিয়ে ছেলে তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ দেশে দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসনের ফলে যে গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, সেগুলোকে একটি জায়গায় নিয়ে আসা, যে জায়গায় আনতে পারলে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব।

অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি সিলেক্টেড সরকার বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি নির্বাচিত সরকার থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকার হতে যে সময় দরকার। এটি কোনো নির্বাচিত সরকার নয়।তাদের প্রধান দায়িত্ব দেশে দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসনের ফলে যে গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, সেগুলোকে একটি জায়গায় নিয়ে আসা, যে জায়গায় আনতে পারলে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব। এবারের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বলা মুশকিল, কারণ এবার এত বেশি ড্যামেজ হয়েছে, দীর্ঘকাল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে।

সংস্কারের রোডম্যাপ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটাই নষ্ট হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একবারে নষ্ট হয়েছে। বিচার বিভাগ, যেটা রাষ্ট্রের জন্য সবচাইতে জরুরি, সেখানে দলীয়করণ চূড়ান্ত হয়েছে, দুর্বৃত্তায়ন চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা খুব বেশি প্রয়োজন। অর্থনীতিতে বেসিক সমস্যা আছে, যদিও এর তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব না। কতগুলো ইমিডিয়েট পদক্ষেপ দরকার যাতে অর্থনীতি সচল থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরে আমূল সংস্কার দরকার। সেটা দ্রুত হয়ত সম্ভব না, তবে শুরুটা করা দরকার। প্রধানত যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে চাই, সেগুলো হলো নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিচার বিভাগ, এই চারটি বিষয়ে নূন্যতম যে সংস্কার সেটি হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে এই সংস্কারগুলো করার আগে বর্তমান সরকারের উচিত হবে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা। কথা বলে ধারণাগুলো নেওয়া। এটি করা উচিত এবং এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি সংস্কার হয় তাকে অবশ্যই সমর্থন করব আমরা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার  বিষয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমান সাহেবকে তো আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতেই চাই। তিনি আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান। দ্বিতীয়ত উনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, আমরা মনে করি এবং বিশ্বাস করি সেগুলোর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। পুরোপুরি বানোয়াট, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মামলাগুলো করা হয়েছে। তার ফিরে আসা দেশের জন্য, দলের জন্য খুব প্রয়োজন।

পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জবরদখলের বিষয়ের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা দুঃখজনক। আমাদের দেশে যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় কিছু ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের পুরো সমাজটা তো বদলে যায়নি রাতারাতি। এই সমাজে এখনো বহু মানুষ আছেন যারা দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তকে যখন পার্টির সঙ্গে, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখন আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। একজন ব্যক্তি হয়ত বিএনপির সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু সে যখন এগুলো করে তখন দল থেকে কোনো সমর্থন পায় না। আমার ইতোমধ্যে দলীয় ব্যবস্থা নিয়েছি, দল থেকে বহিষ্কার করেছি। বিএনপির দখলদারিত্ব, এটাতে আমার আপত্তি আছে।

তিনি আরও বলেন, একটি সিস্টেম অবশ্যই দাঁড় করাতে হবে যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। যদি নির্বাচনের চর্চাটা থাকত, যেমন: পশ্চিমা বিশ্বে বা ভারতে। আমরা তো ৫৩-৫৪ বছরে এখন পর্যন্ত একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে পারলাম না, যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল হবে। হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরাতে হয়, নয়ত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আসতে হয়। এই যে কালচার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ, এটা ভয়াবহ কালচার। এটা চিরতরে নির্মূলের জন্য একটা রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। গণতন্ত্রকে চলতে দিতে হবে। ৯০-এর পর একটা সুন্দর সময় এসেছিল- কেয়ারটেকার সিস্টেম। সেটাকে কন্টিনিউ করাতে হবে। আমাদের প্রস্তাব আছে, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন, সেটাকে পার্মানেন্ট করতে চাই। সেটা সংবিধানে সন্নিবেশিত হওয়া উচিত আমাদের আরও গণতান্ত্রিক হতে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫