সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৮

বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা যেন এই সুযোগ হেলায় না হারাই। এমন অবস্থা তৈরি করতে হবে যেন এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আপনারা হচ্ছেন সেই ভ্যানগার্ড, পাহারাদার। আপনারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করবেন।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে ও আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপি সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ বছর দেশের জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে গেছে। সেই স্টিমরোলার উপেক্ষা করে দীর্ঘ সংগ্রাম করে মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে পার্লামেন্টারি শাসন নিয়ে এসেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়ে সংস্কারের কথা বলেছিলেন। বছর দুয়েক আগে আমরা ৩১ দফা দিয়ে সংগ্রাম করেছি। গত ১৬ বছরে আমাদের অসংখ্য প্রাণ গেছে, অনেকে কারাগারে গেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সরকারের মধ্যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা অবস্থান করছে। তারা আমাদের গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে এখনো বসে আছে। এই চক্রান্তকে রুখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন আবার ফিরে আসবেন। আজ আমি গণতন্ত্রের সংগ্রামে আহত-পঙ্গু সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। নিহতদের পরিবারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুরোধ করছি। এটিই হোক আজকের দিনের শপথ।
সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, আমার সৌভাগ্য আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমি জেলে গিয়েছিলাম ২০০৮ সালে। তাকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমরা জেল থেকে বের হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি নির্বাচনে গেলেন। তিনি বললেন, নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হয়েছে। আমি নির্বাচনে না গেলে তোমাদের জেল থেকে বের করতে পারতাম না।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার কর্মীদের জন্য দেশে থেকে গেলেন। তিনি পালাননি। দেশনেত্রী বলেছিলেন, এ দেশ আমার, মাটি আমার, বাইরে আমার কেউ নাই, আমি বাইরে যেতে পারব না।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, আর আজ তথাকথিত নেত্রী নেতাকর্মীদের ফেলে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার বলছেন চট করে চলে আসবেন। আমাদের দেশের জনগণ আপনার অপেক্ষায় আছে। আপনি আমাদের নেত্রীকে দীর্ঘদিন জেলে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এ দেশের জনগণ আপনার বিচার করবে।
সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে আমরা বিজয়ের খুব কাছাকাছি আছি। আর একটু বাকি। আশা করছি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দিক-নির্দেশনায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই রাস্তাটুকু সফলভাবে অতিক্রম করব।
তিনি বলেন, আমরা অনেকবার বলেছিলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেন। শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আমাদের কথা শোনেন। কিন্তু আমাদের কথা শুনলেন না তিনি। শুনলেন দাদাবাবুদের কথা। যদি আমাদের কথা শুনতেন, তাহলে জনগণের এত ক্ষোভ হতো না, এভাবে পালাতে হতো না। এখন বলেন, সীমান্তের ওপারেই আছি। আরে আসেন না।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে দলের নেতারা কর্মীদের রেখে পালিয়ে যায় সেই দল কইরেন না। আর একটি কথা বলতে চাই, যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, যিনি মাত্র ১৫ দিনে ৯০০ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, গুম করেছে—এই সিরিয়াল কিলার শেখ হাসিনাকে যারা আশ্রয় দিয়েছেন, ফোনও দিয়েছেন, কান পেতে শোনেন, যদি ঢাকা শান্তিতে না থাকে, দিল্লিও শান্তিতে থাকতে পারবে না। কীভাবে তা করতে হয়, আমরা তা ভালো করে জানি।
সমাবেশে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, জনগণের টাকা লুটপাট করেছে সব টাকা ফেরত আনতে হবে। আমাদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এটি আমাদের দাবি, জনতার দাবি।