দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্য গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসলামিক দলগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতারা। কেউ কেউ চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে ঐক্যের আপত্তি নেই বলেও মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে তা নিষিদ্ধের দাবি জানান তারা।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই মাদ্রাসা ময়দানে বার্ষিক মাহফিল মঞ্চে ওলামা-সুধী সম্মেলনে এ ঐক্যের কথা বলেন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। এ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরও অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র চলছে। এখন ক্ষমতা এবং স্বার্থের নেশায় থাকলে চলবে না। ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে স্বপ্নের স্বদেশ বিনির্মাণে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

দেশের সমসাময়িক ঘটনা টেনে হিন্দু সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আপনারা এ দেশে মায়ের কোলের মত আছেন। কিন্তু কেউ কেউ দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য আপনাদের ব্যবহার করছে, আপনারা সতর্ক থাকুন।

সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, বাংলাদেশ ফরায়েজী জামায়াতের আমির হাজী শরীয়তুল্লাহর উত্তরসূরী বাহাদূরপুরের পীর হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন হাফেজ মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী, ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা হাফিজুর রহমান সিদ্দিক, গণ অধিকার পরিষদ সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, কমল নগরের পীর আল্লামা খালিদ সাইফুল্লাহ, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ তার বক্তৃতায় বলেন, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হব। 

এদিকে, চরমোনাই পীরের ইমামতিতে কাজ করতে একমত জানিয়ে বাহাদূরপুরের পীর হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানান।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত চিন্ময় দাস দেশকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন বিবৃতি দিবে? ভারতীয় মিডিয়াগুলো অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশে ভারতের মিডিয়াকে নিষিদ্ধ করেছে। আমরা ইসলামী রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।

এদিকে, গণ অধিকার পরিষদ সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যদেরকে অবজ্ঞা করা যাবে না। সকল দলের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সকল কাজ করতে হবে। ছোটখাটো বিরোধের কারণে যাতে আমরা নতুন করে দেশ গড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হই সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্লোগান ‘নেতা নয় নীতির পরিবর্তন চাই’ এই স্লোগান বাস্তবায়নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নতুন কিছু করতে হবে।

এছাড়া ইসকন নামক সন্ত্রাসী সংগঠন দিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী। তিনি বলেন, আমরা চরমোনাই পীর সাহেব ও আল্লামা মামুনুল হক সাহেবের সাথে একসাথে বসেছি এবং হাতে হাত রেখে একত্রে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা নেছার উদ্দীন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী এবং মুফতি দেলোয়ার হোসাইন সাকীর যৌথ সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন- কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ নূর বক্স, ইসলামী আন্দোলন কাতার কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুল হালিম, যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মাওলানা বজলুর রহমান খান, মালয়েশিয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুফতি আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে ২৯ নভেম্বর সকাল ১০টায় চরমোনাই মাহফিল মঞ্চে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘ছাত্র গণজমায়েত’ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় চরমোনাই পীরের আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপি মাহফিল শেষ হবে।

মাহফিলে আসা মুসল্লীদের মধ্যে বুধবার দুইজন বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। উভয়ের জানাজা শেষে মাহফিল হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।