
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন)।
শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিযোগ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হিসেবে ইসকন প্রতিষ্ঠিত হলেও হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠন নানাবিধ কর্মকাণ্ডে এখন বিতর্কিত। নিরীহ সনাতনীদের ওপর হামলা, সামাজিক নৈরাজ্য সৃষ্টি, সন্ত্রাসবাদ এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ইসকনের বিরুদ্ধে। ভক্তিবাদ আন্দোলনের আড়ালে সহিংসতা ছড়াচ্ছে ইসকন- এমন বিতর্কও উঠেছে।
অভ্যুত্থানের তিন মাসের মাথায় সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার বিষয়টি নতুন করে ইস্যু আকারে হাজির হয়েছে। এসব অস্থিরতার পেছনে দেশের ইসলামপন্থি দলগুলো ‘ইসকন’-এর সম্পৃক্ততার কথা বলছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামে একজন আইনজীবীকেও হত্যা করা হয়। তার আগে চট্টগ্রামের হাজারি লেনে ইসকনকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর এক মুসলিম ব্যবসায়ীর ওপর হামলা করেন স্থানীয় কিছু হিন্দু ব্যবসায়ী। এই ঘটনা ছাড়াও গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রংপুরসহ সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ-কর্মসূচির পেছনে ইসকনের ‘ইন্ধন’ দেখছে অনেকে।
ইসকন কী?
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘকে সংক্ষেপে ইসকন বলা হয়। এটি বৈষ্ণব মতবাদের একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন, যারা তাদের আধ্যাত্মিক দর্শন প্রচার করে থাকেন। বিশ্বের অনেক দেশে ইসকনের শাখা রয়েছে।
ইসকনের ওয়েবসাইট বলছে, এটি হরে কৃষ্ণ আন্দোলন নামেও পরিচিত। সারা দুনিয়ায় ইসকনের ৫০০টি বড় কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর আওতায় রয়েছে মন্দির ও গ্রামীণ সংগঠনও। এ ছাড়া রয়েছে প্রায় ১০০ নিরামিষ খাবারের রেস্টুরেন্ট, কয়েক হাজার স্থানীয় জমায়েত কেন্দ্র, স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও লাখ লাখ সদস্য। সবমিলিয়ে ইসকনকে দুনিয়ার একটি বড় ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহর থেকে ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করে ইসকন। এর প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। ইসকন মূলত গৌড়ীয়-বৈষ্ণব মতাদর্শের সংগঠন। দার্শনিকভাবে ভগবদগীতা ও ভগবদ পূরাণ অনুসরণ করে থাকে। নিবেদনমূলক ভক্তিবাদের অনুসারী ইসকন একেশ্বরবাদ চর্চা করে।
রাজনীতি ও ভারতীয় আধিপত্যবাদে ইসকন
ইসকন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সংগঠন হলেও এর সঙ্গে ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতির সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।
ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গেও ইসকনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ইসকন নিজেকে ধর্মীয়-সমাজসেবামূলক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও রাজনীতিতে এর অংশ নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ‘ইন গড উই ট্রাস্ট পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দলও খুলেছিলেন ইসকনের ধর্মীয় নেতারা। পরে অবশ্য রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা রাশিয়ায় গেলে সেখানে ইসকনের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাক্ষাতের ঘটনা রয়েছে। এ ছাড়া ভারতে ইসকনের মন্দির উদ্বোধন ও গীতার সবচেয়ে বড় সংস্করণের উদ্বোধনেও অংশ নিয়েছিলেন মোদি। ২০২১ সালে ইসকনের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মোদি মন্তব্য করেন, ‘ইসকন প্রকৃত বিশ্বাসের শিক্ষা দিচ্ছে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক গৌতম দাস লিখেছেন, “চলতি শতকে (২০০০+) এসে আমেরিকান সংসদে ও সিনেটে ভারত সরকারের পক্ষে আমেরিকান নীতি পলিসিকে প্রভাবিত করা বা লবি করতে ভারত আমেরিকায় যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মিলিত এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল, ক্রমে ইসকনই হয়ে ওঠে এর এক প্রধান অংশ ও প্রধান ভূমিকায়। এর নিট ফলাফল হলো ইসকন। ফলে এটা আর নেহায়েতই ধর্মপ্রচারের সংগঠন থাকেনি। এর ফোকাস বদলে রাজনৈতিক সংগঠন হয়ে যায়। শুধু তা-ই না, এটি ভারতের ‘র’-এর অন্তর্ঘাতমূলক কাজের কুখ্যাতির সংগঠনের মতো গোয়েন্দা সংস্থাও এতে শামিল হয়ে যায়।”
তিনি আরো লিখেছেন, “এক কথায় বললে বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি মোদির সম্পর্ক করার মধ্যস্থতাকারী সংগঠন যেন হয়ে ওঠে ইসকন! যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিকরা সুরক্ষা চায় ও তা পেতে পারে কেবল নিজ রাষ্ট্রের কাছ থেকে; এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু মোদির (বিজেপি-আরএসএস) লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের ক্ষেত্রে তারা হিন্দু বলে তাদের সুরক্ষাদাতা এক বিদেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা ও হাজির করতে চান মোদি! যাতে এসব (ইসকন তৎপরতার ভেতর দিয়ে) প্রভাবিত হিন্দুদের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ ও প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা যায়। অথচ ঘটনা হলো কোনো নাগরিক নিজ রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা কোনো ভিনদেশি প্রধানমন্ত্রীর থেকে আশা করতে পারে না বা গ্রহণও করতে পারে না। কারণ এটি নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হবে। ভিনদেশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুরক্ষা চাওয়া হবে, যা প্রকৃত অর্থেই এই প্রকৃত রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ।”
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয় রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ বা আরএসএসকে। সংগঠনটি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ লিখেছেন, ‘জন্মকালে আরএসএসের লক্ষ্য ছিল হিন্দু পুনর্জাগরণ। ঔপনিবেশিক শাসনমুক্তির সঙ্গে তারা ধর্মীয় জাগরণকে যুক্ত করে এগোতে চেয়েছে। শুরু থেকে হিন্দু রাষ্ট্রও গড়তে চেয়েছে তারা; এখন যা সামনের বড় লক্ষ্য। ক্রমাগত সফলতা সংঘকে বাড়তি আত্মবিশ্বাসী করেছে। আগামী দিনে তাদের চাওয়া অনেক কিছু। সংগঠকদের অতীত স্মৃতিচারণা এবং ভবিষ্যৎ নির্দেশনার এই মুহূর্তে সংঘ পরিবারের সূচনাকালের দীর্ঘ সময়ের গুরু এম এস গোলওয়ালকরের দর্শনের কথা বারবার আসছে, যিনি নিজে জার্মান নাৎসিদের বিশেষ ভক্ত ছিলেন এবং ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরের ধারণাবীজ তার দ্বারাই বপিত হয়।’
এমন হিন্দুত্ববাদী আরএসএসের সঙ্গেও ইসকনের দহরম-মহরম রয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের উজ্জানিতে ইসকনের কেন্দ্রে যান আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবত। সেখানে তিন দিন অবস্থান করেন তিনি। এর মধ্যে দুই দিনই ইসকন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কাটান। মোহন ভাগবতের সঙ্গে আরএসএসের ১৭০ ‘অতিথি’ ওই ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। বিশ্বে সনাতন ধর্মের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইসকনের প্রশংসা করেন মোহন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আক্রমণাত্মক প্রচারণা কৌশলের কারণে সত্তর দশকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করেছে সিঙ্গাপুর। সংগঠনটিকে সামাজিক মূল্যবোধ ও সংহতির জন্য ক্ষতিকর মনে করায় এখনো এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রেখেছে দেশটি। সিঙ্গাপুর ছাড়া রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ইসকনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বিধি-নিষেধ রয়েছে।
সনাতনীদের সঙ্গে ইসকনের দ্বন্দ্ব
প্রায়ই সনাতনী হিন্দুদের সঙ্গে ইসকনের অনুসারী একেশ্বরবাদী হিন্দুদের বিবাদের কথা শোনা যায়। এর বেশির ভাগ ঘটনার পেছনেই রয়েছে মন্দিরের দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রশিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজা নিয়ে অনুসারীদের সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইসকন ভক্তদের হামলায় ফুলবাবু নামের একজন সনাতন ধর্ম অনুসারী মারা যান। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা প্রশাসন মন্দির সিলগালা করে দেন। একই সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। পরে একই মন্দির নিয়ে বিরোধের জেরে ২০২৪ সালে এসে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় প্রশাসনকে।
গত ৫ নভেম্বর রাতে ইসকনবিরোধী এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানে সনাতনীদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটে। ৫০০ থেকে ৬০০ দুর্বৃত্ত সংঘবদ্ধ হয়ে এই হামলা চালায়। এর পেছনে ইসকনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবি
চট্টগ্রামে মুসলিম দোকানির ওপর হামলার ঘটনার সূত্র ধরে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি দলগুলো।
হেফাজত নেতা মাওলানা কামরুল ইসলাম কাশেমী বলেন, ‘ইসকন নিয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। ইসকনকে বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব ইসকন সনাতনের কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন ইহুদি ও খ্রিস্টানদের লালিত-পালিত একটি জঙ্গি সংগঠন। তাই আমাদের হিন্দু ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা ইসকনের ফাঁদে পা দেবেন না।’
একই দিন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইসকনের নেতারা দাবি করেন, চট্টগ্রামে হাজারী গলির ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
চট্টগ্রামে ইসকনের হামলায় আইনজীবী নিহতের প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ইসকন দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। গত কয়েকদিন তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে।
বিতর্কে চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী
গ্রেপ্তার হয়েছেন ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউ মার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। ওই দিন চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জন নিউ মার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই নিয়ে মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে তিনি মামলাটিকে সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকনের (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) বাংলাদেশ শাখাতেও ছিলেন। তবে সম্প্রতি ইসকন তাকে বহিষ্কার করে।
তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ইসকন নেতা চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী ২০২৩ সালে শিশু নিপীড়নের দায়েও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এ জন্য ১৮ বছর বয়সের নিচে কেউ যাতে তার সান্নিধ্যে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছিল যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইসকন ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড প্রটেকশন অফিস।
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলো। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত সরকারের কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বানও জানিয়েছে ইসকন। নিজেদের সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত একজন নেতার জন্য ইসকনের এমন উদ্বেগ কেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। এ ছাড়া চিন্ময়ের গ্রেপ্তার ঘিরে বাংলাদেশবিরোধী উসকানিমূলক বিবৃতিও দিচ্ছেন ভারতের রাজনৈতিক নেতারা। দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমও এ-সংক্রান্ত খবরকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে।
এ বিষয়ে ইউনূস সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে ইউনূসের সরকার মুক্তি না দিলে আগামীকাল থেকে সীমান্তে সনাতনীরা অবরোধ করবে। ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে কোনো পরিষেবা বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না।’ একই সঙ্গে কলকাতায় থাকা বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের অফিসও টানা ঘেরাও অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই বিরোধী দলনেতা।
যা বলছে ইসকন
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কথা বলার জন্য ইসকন বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয়-সামাজিক সংগঠন হিসেবে ইসকন বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মিডিয়া মুখপাত্র জয়প্রভু। তবে নিবন্ধনের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। পরে বিস্তারিত জেনে বলতে পারব।’
ইসকনের কার্যক্রম সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে যোগাযোগ করা হয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মিহির রঞ্জন হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।