অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। তারা সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সব ছাত্রের পদত্যাগও দাবি করেছে।

শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গণঅধিকার পরিষদ।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারুণ্যের রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায়। তবে সরকারের থাকা তিন ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আস্থা ধরে রাখতে সরকারে থাকা অন্য দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সকল ছাত্রদের পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে শুক্রবার। এই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রাজনীতিতে নামতে কদিন আগে সরকারের উপদেষ্টার পদ ছাড়েন। তবে ছাত্র থেকে উপদেষ্টার পদে যাওয়া আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া ও মাহফুজ আলম সরকারে রয়েছেন। নতুন গঠিত রাজনীতি দলে এই দুজন কোনো পদে নেই।

নূরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদের এক সময়ের নেতা আখতার হোসেন এনসিপির সদস্য সচিব। ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে ২০২৩ সালে নতুন ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠন করেন আখতার। এই সংগঠনেরই সদস্যসচিব ছিলেন নাহিদ ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের উদ্দেশে নূর বলেন, “গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক ছাত্রনেতা সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অযাচিত হস্তক্ষেপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনগণের মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।”

নির্দিষ্ট বলয় কেন্দ্রিক সরকার গঠিত হয়েছে দাবী করে ঢাকসুর সাবেক ভিপি নূর বলেন, “বাংলাদেশ বির্নিমাণে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে একটি অর্ন্তভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হলেও দেশি-বিদেশি অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে সেটি হয়নি। যার ফলে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল আজ তাতে ফাটল ধরেছে, বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। যা এই মুহুর্তে জাতির জন্য কোনভাবেই কাম্য ছিল না। দুঃখজনক হলেও সত্য গত ছয় মাস সেটিই অবলোকন করা গেছে।”

নূর বলেন, “গতকালকের (শুক্রবার) নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেও জেলা প্রশাসকের নোটিশে ঢাকার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মতো বিষয় দেখা গেছে, গাড়ি সরবরাহে মালিক সমিতি ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠন বা নেতৃবৃন্দের দ্বারা সংগঠিত হয়নি।”

নূর এসময় চারটি দাবি জানান। তার দাবিগুলো হলো- জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুর্নগঠন, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুর্নবাসন এবং শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসন, গণহত্যার বিচার ও আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফারুক হাসান, শাকিল উজ্জামান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ।