নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘হতাশ’ ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪০

জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর কথা বলছেন মির্জা ফখরুল। ছবি- সংগৃহীত
জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ হয়েছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট, এটা কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি।
বুধবার সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর এসব কথা বলেন ফখরুল।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছেন বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দল। এমন পরিস্থিতিতে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।”
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব হতাশ হয়েছেন জানিয়ে অবিলম্বে ‘স্পষ্ট রোডম্যাপ’ দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা (ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে) ভ্যাগ… এটা অত্যন্ত অস্পষ্ট কথা। ডিসেম্বর থেকে জুন .. ছয় মাস। সুতরাং এটা কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি।
“আমরা বার বার বলে আসছি যে, স্পষ্ট রোডম্যাপ এবং দ্রুত নির্বাচন। তা না হলে যে সংকটগুলো সৃষ্টি হচ্ছে এই সংকটগুলো কাটবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত হতাশ হয়েছি যে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য রেখেছেন সেই বক্তব্যে তিনি নির্বাচনের রোডম্যাপের কথা বলেননি।
“আমরা হতাশ হয়েছি যে, তার বক্তব্যের মধ্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তমের নাম একবারও উচ্চারণ করেননি। অথচ এটাই ছিলো ইতিহাস।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা আবারও চাই না, আওয়ামী লীগ যে ইতিহাস বিকৃত করেছেন এখন আবার সেই ইতিহাস বিকৃত হোক। প্রকৃত সত্যকে উদঘাটিত করে জনগণের যে আকাঙক্ষা একটি গণতান্ত্রিক সরকার সেই গণতান্ত্রিক সরকারে যত দ্রুত ফিরে যাওয়া যাবে আমাদের সমস্যাগুলো ততই সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা…বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনের কথা বলছি না। বিএনপি জাতির স্বার্থে, জাতিকে রক্ষা করার স্বার্থে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার স্বার্থেই নির্বাচনের কথা বলছে এবং নির্বাচিত পার্লামেন্ট এবং সরকারের কথা বলছে।
“আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অতি দ্রুত তারা ন্যুনতম সংস্কারগুলো করে অর্থাৎ যেগুলো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন তার সম্পন্ন করে নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন।”
সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মী শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে যান। তারা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে তারা ফাতেহা পাঠ করেন।
এই সময়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
পরে জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তারা।
এ সময় মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও আলাদা আলাদাভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরে শীহদ হওয়া বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকের এই দিনে আমাদের দলের পক্ষ থেকে, আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমরা গোটা জাতিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং প্রত্যাশা করছি অতি শিগগিরই আমরা আমাদের কাংখিত গণতন্ত্র ফিরে পাব।”
একাত্তরে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই স্বাধীনতা জন্য আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, আমাদের অসংখ্য মা-বোন তাদের সভ্রম হারিয়েছে, কোটি মানুষ তাদের প্রিয়জন হারিয়েছে এবং অসংখ্য ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
“আজকে যে ৫৪ বছর আগে আমরা যে স্বাধীন হয়েছে … দুর্ভাগ্যের কথা তখন যে লক্ষ ও আশা-আকাঙক্ষাকে সামনে নিয়ে, যে চেতনাকে ধারণ করে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম… একটা স্বাধীন, মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।”