অবস্থান পাল্টে ‘আগামী ফেব্রুয়ারির’ মধ্যে নির্বাচন চাইল জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৫৩

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। ছবি- সংগৃহীত
আগামী রোজার মাসের আগেই নির্বাচন চায় জামায়াত ইসলামী। দলটি বলছে, জুন মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকায় নির্বাচন অনিশ্চিত হতে পারে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা শুধু এতটুকু জানতে চেয়েছে যে, কখন আমরা নির্বাচনটা দেখতে চাচ্ছি। আমরা বলেছি যে, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যে তিনি এই বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন।
আমরা তার কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন এটা দেখতে চাই। আর আমাদের ভিউ (দৃষ্টিকোণ) হচ্ছে যে, এটা রমজানের আগেই শেষ হয়ে যাওয়া দরকার। জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তখন বর্ষা, ঝড়, ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। তখন আবার নির্বাচনটা অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। আমরা এ জন্য চাচ্ছি, রমজানের আগেই যাতে নির্বাচন হয়ে যায়।”
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় বসে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মতভিন্নতা দেখা দেয়।
বিএনপি শুরু থেকেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে বলে আসছে। সেখানে জামায়াত গুরুত্ব দিয়ে আসছিল সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারে। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার বিষয়েও অবস্থান নিয়েছিল। যদিও সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিল দলটি।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, সংস্কারের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।
বুধবার বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছে, নির্বাচন কোনোভাবেই ডিসেম্বরের পরে নেওয়া যাবে না। ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হলে দেশের পরিস্থিতি ‘খারাপের দিকে’ যেতে পারে।
লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার দুই দিন পরে বুধবারই জামায়াত আমির নির্বাচন প্রশ্নে তার দলের আগের অবস্থান থেকে সরে আসার বার্তা দিল। আগামী রোজা শুরু হবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। আর তার আগেই নির্বাচন চাইছে দলটি।
গত রবিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান। প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে সোমবার দেশে ফেরেন তিনি।
সাংবাদিকদের জামায়াতের আমির বলেন, তার দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, “আমরা আগামী নির্বাচনটা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে করতে চাই। যা ইতিমধ্যে আমরা বলেছি। কেন চাই, সেটাও আমরা বলেছি। আপনারা জানেন, নতুন করে বলার দরকার নাই।”
বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াত। আমির শফিকুর রহমান এবং সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে জামায়াতের আমির বলেন, “তারা আমাদের কাছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন, তারা আগামী নির্বাচন কখন এবং কীভাবে হবে এটা জানতে চেয়েছেন। তারা জানতে চেয়েছেন যে সবগুলো দল রিফর্ম (সংস্কার) চেয়েছেন, সে রিফর্মটা কী হতে পারে। আমরা কী চাচ্ছি। আমরা যদি আগামীতে দেশের দায়িত্ব পাই তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি ও ফরেন রিলেশনটা কেমন হবে। তারা আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন। আমরা সমস্ত বিষয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছি।”
শফিকুর রহমান বলেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি) মাইনোরিটি ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। তারা এখানে নারী অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। তারা লেবার রাইটস নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা সবগুলো বিষয়ে নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, পাশাপাশি আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি যে, আমাদের দেশ, এখন একটা ক্রুশিয়াল সময় পার করছে। এ সময় আমেরিকার পক্ষ থেকে ৩৭ পারসেন্ট যে ট্যারিফ দেওয়া হয়েছে, এটা যেন তারা পুনঃবিবেচনা করে।”
জামায়াত আমির বলেন, “আমরা বলেছি যে, অলরেডি আমরা ডেমোক্রেটিক নর্মসের ওপর কমিটেড। আমরা আমাদের দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা করি। আমরা দেশেও একই গণতন্ত্রের চর্চা করতে চাই। এ জন্য আমরা যা করার তা করব।