দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত ডেসটিনির রফিকুল এবার রাজনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫৮

ঢাকার শেরাটন হোটেলে নতুন রাজনৈতিক দল আ-আমজনতার পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান
অর্থ পাচার ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন মামলায় কারাভোগের পর ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্ট’।
বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলটি আত্মপ্রকাশ করে। রফিকুল আমীন দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়েছেন। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তিনি।
সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন গণঅধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা ফাতিমা তাসনিম। গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নাহিদ ইসলামের বোন বলে আলোচনায় আসে ফাতিমা তাসনিম। ২৯৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে এই দল।
রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে গত ১৫ জানুয়ারি কারামুক্ত হন বিতর্কিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন।
গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে অর্থ পাচারে রফিকুল আমীনকে ২০২২ সালে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া কোম্পানির ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদেরকে ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছিল। রায়ের পর ১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় তারা মুক্তি পান। তবে তার রফিকুল আমীনের স্ত্রী ফারহা দিবার সাজার ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তিনি কারাগারেই আছেন
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কলাবাগান থানায় ২০১২ সালের মামলা করে ৷ ২০১৪ সালে একটি মামলায় ১৯ জনের এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক।
অভিযোগপত্র বলা হয়, আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং পাচারের আরও ২ লাখ ৬ হাজার ডলার রয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয়। এরপর জাতীয় সঙ্গীত শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রফিকুল আমীন। এ সময় তিনি দলের নাম ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে ৯টি লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেন রফিকুল আমীন।
আত্মপ্রকাশ কালে রফিকুল আমীন বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আপামর জনতা ‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)’ নামে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছে।
বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টির স্লোগান হলো, ‘শিক্ষা-সমতা সু-বিচার যেখানে, আ-আম জনতা হাঁটবে সেখানে’।
বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টিকারী স্বৈরাচার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আ-আমজনতা পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
দলের ৯ লক্ষ্যে:
# ক্ষমতা কুক্ষিগত করা নয়, বরং সুযোগ্য নাগরিক ও ভোটার তৈরির মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা;
# মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা, আইনের সুশাসন, সবার জন্য শিক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ, জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন করা
# উৎপাদনমুখী কৃষিব্যবস্থা, প্রযুক্তি ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন;
# সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, আধিপত্যবাদ থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি ও উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান উন্নতি করা;
# গ্রামীণ জীবনভিত্তিক উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার প্রদান এবং খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার চাহিদা পূরণ;
# বহুদলীয় রাজনীতির অবাধ সুযোগ, গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদীয় সরকার পদ্ধতির মাধ্যমে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবারভিত্তিক অগ্রাধিকার বিলোপ করার মাধ্যমে দলের মধ্যে গণতন্ত্রের ধারা সৃষ্টি ও এই চর্চা বজায় রাখা।
# সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করা;
# স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিচার বিভাগের জন্য নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথককরণ, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঢেলে সাজানো ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা;
# জনসাধারণের ভোগান্তি ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা এবং কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সব সেবা সহজলভ্য করা। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির মেরুকরণের ভারসাম্য বুঝে জোট নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব রক্ষা করা।
ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়াও রফিকুল আমিন একটি টেলিভিশন ও একটি পত্রিকার সম্পাদক। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠিত হলে রাজনীতিতে যোগ দেন তাসনিম। দলটির সাথে সাত বছরের সম্পর্ক শেষে গত রবিবার পদত্যাগ করেন ফাতিমা তাসনিম।