Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট দাবির একদিনেই পাল্টে গেল জামায়াতের সুর

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৪৯

ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট দাবির একদিনেই পাল্টে গেল জামায়াতের সুর

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে কথা বলছিলেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান।

রোজার মাসের আগেই জাতীয় নির্বাচন চাওয়া জামায়াত ইসলামী ঠিক একদিনের মধ্যে বক্তব্য পাল্টে ফেলল।

বুধবার এক আয়োজনে দলটির আমির শফিকুর রহমান রোজার আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে যুক্তি তুলে ধরার পরের দিনই সাংবাদিকদেরকে বলেন, “আমি তো বলি নাই যে ফেব্রুয়ারির ভেতরেই নির্বাচন হতে হবে।

ফেব্রুয়ারিতে যেন নির্বাচন করা  যায় সে সম্পর্কিত অনেকগুলো কারণ দেখিয়েছি। তবে বাস্তবের প্রয়োজনে এটি একটু আগাতেও পারে, পেছাতেও পারে।”

ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে কথা বলছিলেন জামায়াতের এই নেতা।  

আগের দিন বললেন রোজার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চান, সেই অবস্থান থেকে সরে আসলেন কি না?- একজন সংবাদকর্মী প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে জবাবে আমীর  বলেন, "কালকে (বুধবার) সেখানে বৃষ্টি ঝড়ছিল। আপনাদের মধ্যে কেউ এ সময় একটি ছাতা আমার মাথার উপর ভালোবেসে ধরেছিলেন। এমন পরিস্থিতি সব কথা কি বলা যায়?  শুধু এইটুকু বলব আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরে আসিনি।" 

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াত আমির সাংবাদিকদেরকে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমাদের ভিউ (দৃষ্টিকোণ) হচ্ছে যে, এটা রমজানের আগেই শেষ হয়ে যাওয়া দরকার। জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তখন বর্ষা, ঝড়, ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। তখন আবার নির্বাচনটা অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। আমরা এ জন্য চাচ্ছি, রমজানের আগেই যাতে নির্বাচন হয়ে যায়।”

জামায়াতের এই বক্তব্য গত আট মাস ধরে দলটির অবস্থানের বিপরীতই বলা চলে। বিএনপি যেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে জোরালো অবস্থান নিয়েছে সেখানে দুই যুগের সঙ্গী দলটি ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ এর কথা বলতে থাকে। বরং বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করতে থাকায় তাদের সমালোচনাও করেছে জামায়াত। 

বিএনপি আগে জাতীয় নির্বাচন এবং পরে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলতে থাকলেও জামায়াত আগে স্থানীয় নির্বাচন ও পরে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে নিজের অবস্থান জানিয়েছে।

বিএনপি যে ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করছে, সেই দাবি যদি পূরণ হয়ে যায়, তাহলে আপত্তি নেই বলেও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জানান জামায়াত আমির। তিনি, “ফেব্রুয়ারির আগেই যদি জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে নির্বাচন হয়, তাহলে আমাদের আপত্তি থাকবে কেন। আমরা সাড়ে ১৫ বছর অপেক্ষা করেছি, আরও অপেক্ষা করতে পারব।"

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে ‘দেশের পরিস্থিতি খারাপ হবে’ বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে জামায়াতের বক্তব্য জানতে চান এক সংবাদকর্মী।

জবাবে দলটির আমির বলেন, “আমরা এরকম কিছু এখনই প্রেডিক্ট করতে চাই না। বরং আমরা ভালোটাই প্রত্যাশা করি।

“তবে যেভাবে মির্জা সাহেব বলেছেন যে, ‘কাট অফ লাইন’। আমরা সেভাবে বলতে চাচ্ছি না। কারণ, এটা একজন ঠিক ফিক্সআপ করে দিলে ‘পয়েন্ট অফ নো রিটার্নের’ মতো হয়ে যায়।"

সরকারে থাকা ব্যক্তিদের সতর্ক হয়ে বক্তব্য দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, “সরকারে যারা আছেন তাদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে কিছু কথা বলে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে ফেলেন। এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।”

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিয়ে কী ভাবনা 

ইউরোপ সফরের সময় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো পক্ষের কোনো বিশেষ মন্তব্য ছিল কি না- এই প্রশ্নে শফিকুর বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ জানাতে চেয়েছে।” এ ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান কী, সেটি সরাসরি বলেননি দলের আমির।

তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে বলেছি জুলাই-আগস্ট মাসে (২০২৪ সাল) বিগত সরকার গোটা জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা পক্ষের ছিল না। এটা ছিল জনতার আন্দোলন। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ তো একটানা তিনটা নির্বাচন তাদের অধীনে করেছে। সেখানে তারা নির্বাচনের ‘জান কবজ’ করেছে। এমনকি তাদের ভোটাররাও ভোট দিতে যায়নি।

“সে রকম একটা দলকে বাংলাদেশের মানুষ এই মুহূর্তে গ্রহণ করবে কি না, আওয়ামী লীগও তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করেছে কী না এটা একটা বিশাল প্রশ্ন।"

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে আরেক প্রশ্নে শফিকুর বলেন, "এটা সময় আসলে দেখা যাবে। আমরা আগেই বলতে চাই না বাঘ এসেছে বাঘ এসেছে।"

‘কিছু বিচার দৃশ্যমান হতে হবে’

গণঅভ্যুত্থানে প্রাণহানির বিচার আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দৃশ্যমান হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির।

সংবাদকর্মীদের মধ্যে একজন প্রশ্ন রাখেন, “আপনার মনে কি এমন শঙ্কা আছে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার ঠিকমতো করবে না?”

তিনি আরও বলেন, “আপনি বলেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার ফেব্রুয়ারির মধ্যে দৃশ্যমান হতে হবে। না হলে কী হবে তার ঠিক নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরের ট্রাইবুনাল তো একটি স্বাধীন সংস্থা। তাহলে স্বাধীনভাবে বিচার করার বিষয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কি না?”

জবাবে জামায়াত আমির বলেন, "আমরা বলেছি, কিছু বিচার দৃশ্যমান হতে হবে যাতে জাতির মনে আস্থা তৈরি হয়। বিচারের এ ধারাটা অব্যাহত থাকবে।

“আমরা মনে করি যারা সরকারে আসবে তারা জনগণের সমর্থন নিয়ে আসবে, জনগণের পালস বুঝে আসবে। জনগণও তাদেরকে বুঝেই গ্রহণ করবে। আমরা বিচারকে বাধ্য করিয়ে দিতে পারি না, আমরা বলে দিতে পারি না যে, এত দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে এটা হবে বিচারের উপরে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ।"





Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫