লন্ডনে খালেদার সঙ্গে কী কথা? শফিকুর বললেন, ‘সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৩০

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারামুক্ত বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে যান জামায়াত আমির শফিকুর রহমান। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যেও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন তিনি। এই বৈঠক নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্য সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বহুল চর্চিত বৈঠকে কী কথা সে নিয়ে মুখ খুললেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। বৈঠকটিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ হিসেবে উল্লেখ করলেও সেই আলোচনায় রাজনৈতিক বিষয় উঠে এসেছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।
ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে কথা বলছিলেন জামায়াত নেতা।
লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হলো- এই প্রশ্নে শফিকুর বলেন, “আমরা উনার (খালেদা জিয়া) সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল উনাকে দেখা।”
আলোচনায় রাজনীতিও উঠে এসেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ অপরিচিতদের সঙ্গেও কথা বলে রাজনীতিক আলাপ শুরু করে দেয়। আর আমরা দুই দলের দায়িত্বশীল নেতারা আলোচনায় বসব, রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হবে না এটা তো বাস্তব না।"
গত বরিবার লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের সাক্ষাৎ হয়। এই বৈঠক নিয়ে রাজনীতিতে নানা আলোচনা ছড়িয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা তাদের মতো করে সূত্রের বরাত দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা কিছু লিখছেন। এসব লেখনী নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা একে অপরের সমালোচনাও করছেন।
রাজনীতি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কী কথা, এই প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, “কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়নি। কীভাবে নির্বাচন হবে, বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা সাধারণ আলোচনা করেছি। ওটা ডিসাইসিভ কোনো কিছু আসলে ছিল না।”
কোন কোন ‘মৌলিক সংস্কার’ করা যায় তা নিয়ে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না- এক সংবাদকর্মীর এমন প্রশ্নে তিনি আবার বলেন. “আমরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করিনি। এটা একটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ ছিল।”
সংবাদকর্মীদের একজন জানতে চান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ নিয়ে কথা হয়েছে কি না।
জবাবে জামায়াত আমির বলেন, "না, শুধু ম্যাডামের বিষয়ে অনুধাবন করেছি যে তিনি মানসিকভাবে একটু ভালো আছেন। কারণ, দীর্ঘদিন পরে তিনি আপনজনকে পাশে পেয়েছেন, তাদের সঙ্গে থাকতে পারছেন।”
খালেদা জিয়া দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন- এই বিষয়টি অনুমান করছেন জানিয়ে শফিকুর বলেন, “সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু বলেননি। তারেক সাহেবের পক্ষ থেকে দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরাও এমন কোনো কিছু তুলিনি। তিনি তার দেশে আসবেন, এতে অসুবিধা কী? এ দেশ তো আমাদের সবার।”

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান। এ সময় যুক্তরাজ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়েও কথা বলেন তিনি।
সামাজিক মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের ‘বাগ্যুদ্ধ’ নিয়ে এক প্রশ্নে শফিকুর বলেন, “যদি দুই দলের ‘বাগ্যুদ্ধ’ নিয়ে কথা বলেন তাহলে বলব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তাকান, তাহলে তো এটা কোনো কিছুই না। সেখানে ‘বাগ্যুদ্ধ’ তো হয়েছে আরও। কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাবার পরেই করমর্দন।
“রাজনীতিতে আমরা চাই মত পার্থক্য থাকুক। না হলে রাজনীতিবিদেরা অন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ চোখ খুলে দেওয়ার জন্য এ মত পার্থক্য। কিন্তু এটাও আমরা মনে করি যে এটা যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়।”
এই বৈঠক নিয়ে সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে যে নানা কথা লেখা হচ্ছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জামায়াত আমির বলেন, “মিডিয়াগুলো যে বিশ্লেষণধর্মী নানা আলোচনা করছে, আমি মনে করি এ থেকে আমাদের পাওয়ার অনেক কিছু আছে।"
বিএনপির সঙ্গে জোট নয়
আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে আবার জোটভুক্ত দেখতে পাওয়া যাবে কি না, এই প্রশ্নে শফিকুর বলেন, "দেশ এবং জাতির স্বার্থ বিবেচনায়, রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক জোট করব না’।”
১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার ২৩ বছর পর ২০২২ সালের শেষ দিকে জামায়াত জোট ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে নিজের দলের নেতাকর্মীদেরকে জানায়। বিএনপির পক্ষ থেকে শুরুতে ধোঁয়াশায় রাখা হলেও ডিসেম্বরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট তুমুল গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও জামায়াত নেতা ও কর্মীরা একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। এর মধ্যে শফিকুর রাজধানীতে দলীয় এক আলোচনায় প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন, বিএনপির সঙ্গে আর কখনও জোট করবেন না তারা। তার ভাষ্য, বিএনপি কর্মীরা ‘দখলবাজ-চাঁদাবাজ।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা তখন থেকে জামায়াতকে দলটির মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে থাকেন। দলটিকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’, ‘পাকিস্তানের গণহত্যার সহযোগী’ বলে বক্তব্য আসতে থাকে।
বিএনপির সঙ্গে না হলে জামায়াত কি জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে জোট করতে পারে?
শফিকুর বলেন, "এই দলটা (এনসিপি) কিন্তু এখনো পুরোপুরি ফর্ম করেনি। তারা ফরমেশনে আসতে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় এখনই তাদের বিষয়ে কোনো কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমরা দেখতে চাই, তারা কীভাবে আসে। এরপর সব কিছু বিবেচনা করে, অবশ্যই আমরা আমাদের কর্তব্য নির্ধারণ করব।"
দলীয় নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, "কেন পাব না, অবশ্যই ফিরে পাব।"