সংস্কারের সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের পর নির্বাচন: এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২১

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি- সংগৃহীত
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশগুলো ‘অক্ষরে অক্ষরে’ বাস্তাবায়নের পর সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই সংস্কার বাস্তবায়ন করে নির্বাচন সম্ভব বলেও মনে করছে নতুন গঠিত দলটি।
রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন এনসিপির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনুভা জাবীন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন হয়েছিল। সংস্কারের প্রতিটি পাতা এবং প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। পুরনো সিস্টেমের মত যেমন ইচ্ছা সময় নিয়ে একটি নির্বাচন আয়োজন করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করার সুযোগ এবার আর ছাত্র জনতা দেবে না।”
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৩২টি সুপারিশে নির্বাচন কমিশন ভিন্নমত জানিয়েছে, সিইসির সঙ্গে ভিন্নমতগুলো নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে এনসিপির এই নেতা বলেন, “সংস্কারের সুপারিশগুলো ঐক্যমত্য কমিশনে আলোচনাধীন। আলোচনা শেষে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠাবে। আমরা সেগুলোর বাস্তবায়নের কথাই বলছি।”
প্রধান উপদেষ্টা যৌক্তিক সংস্কার শেষে এ বছরের ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, এই টাইম লাইন বিবেচনায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে এনসিপির প্রতিক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “আমরা চাই একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার অতীব জরুরি। ঐকমত্য কমিশনের মধ্য দিয়ে এ সংস্কার হবে। সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হলে আমরা আশা করি সেটি সুষ্ঠু হবে। সিইসি আমাদের জানিয়েছেন, যেগুলো বিধি আকারে রয়েছে সেগুলো ইসি সংস্কার করবে। আর যেগুলো আইন আকারে রয়েছে সেগুলো ঐক্যমত্য কমিশনের মধ্য দিয়ে আসতে হবে।”
“আমরা মনে করি প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময় সীমার মধ্যে সংস্কার শেষ করা সম্ভব। দ্বিতীয় সংস্কার শেষ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই আমরা সময় চেয়েছি।”
ইসির প্রতি অনাস্থা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন
গত ১৭ এপ্রিল রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য ইসিতে আবেদন জমা দিয়েছিল এনসিপি। ওই আবেদনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে চলমান সংস্কারের আলোকে ইসি পুর্নগঠনের দাবি জানিয়েছিল দলটি।
মৌলিক সংস্কারসহ ইসির পুনর্গঠন চেয়েছে এনসিপি, সেক্ষেত্রে বর্তমান ইসি পুনর্গঠন বা বর্তমান ইসির প্রতি আস্থা আছে কি না- জানতে চাইলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা স্পেসিফিক বলেছিলাম, ২০২২ সালের যে আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া আমরা ওই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করি। সংস্কারের মধ্য দিয়ে, একটা সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেখানে যদি ঐকমত্য কমিশন সম্মত হয়, তারা যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়। তার পরবর্তীতে যদি হয় এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।”
“যারা কমিশনার রয়েছেন, সে বিষয়ে না, আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আকারে সরকার, ঐকমত্য কমিশন থেকে ডিসিশন আসে সে বিষয়ে ইসি পুনর্গঠন হলে আমরা দেখব। যদি না হয় তখন এ বিষয়ে কমেন্ট করব।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “২০২২ এর আইন (সিইসি ও ইসি নিয়োগ) রয়েছে আমরা পূর্বে জানিয়েছিলাম, আইনটা অবৈধ। অন্যান্য দলও জানিয়েছে অবৈধ। সে আইনের অধীনেই হয়েছে বর্তমান ইসি। আমরা এ আইনের বিরোধিতা করি। কিন্তু এখন যারা আছেন, তাদেরকে সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট আসার পরে যদি উনারা থাকতে পারলে থাকবেন; না থাকতে পারলে থাকবেন না। এটা ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে। কারও প্রতি কোনো অবজেনকশন নেই, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের অনুযায়ী হোক।”
তিন নির্বাচনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচার দাবি
বৈঠক বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে মন্তব্য করে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
বৈঠকের বিষয়ে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশ ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিস্ট কাঠামোতে নিয়ে গিয়েছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এর দায় নির্বাচন কমিশনেরও। বিগত তিন নির্বাচনগুলোতে যারা প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সঠিক প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কোনো দলের পক্ষে না যেতে পারে।”