পারভেজ হত্যা: ‘বৈষম্যবিরোধী’দের আসামি না করতে চাপের অভিযোগ ছাত্রদলের

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২২:১১

নিহত জাহিদুল ইসলাম পারভেজের কবর জেয়ারতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাবিবুল ইসলাম রাকিব।
প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে আসামি না করতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাবিবুল ইসলাম রাকিব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে পৌঁছে পারভেজের বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রদল নেতা। পরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
রাকিব বলেন, “পারভেজ হত্যার পর পরই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি বনানী থানায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। এ সময় তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীরা যেন এই মামলায় আসামি না হয়, সেজন্য প্রেসার ক্রিয়েট করে।
“পরবর্তীতে রাতের বেলায় তারা একটি সংবাদ সম্মেলন করল, এটি তাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতা হিসাবে দেখব।”
গত ১৯ এপ্রিল বিকাল ৪টার দিকে বনানীর ক্যাম্পাসের সামনে ছুরিকাঘাতে জাহিদুল নিহত হন। তিনি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন।
পরেরদিন ছাত্রদল এক বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার দুই নেতাকে দায়ী করে।
বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম-সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীর নেতৃত্বে এই খুন হয়েছে।
এর পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাল্টা বিবৃতিতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ এনে বলেছে, “তারা হত্যাকাণ্ডের পেছনের প্রকৃত কারণ আড়াল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে জড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”
সিসিটিভি ফুটেজে যাদের আক্রমণ করতে দেখা গেছে, তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “দ্বিতীয় ফুটেজে কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমাদের দুজন সদস্য এবং ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তবে আমরা কারও দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে কোনো পক্ষকে দায়ী করছি না।”
পরে পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বনানী থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন, যাদের মধ্যে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা ইউনিটের যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজী, ও বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার।
ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, “আমরা নাকি বৈষম্যবিরোধী নেতাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ হল, তখন দেখা গেল বৈষম্যবিরোধী নেতাদের দুজন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল এবং বেশ কয়েকজন আশপাশে ছিল। এরপর থেকে তাদের কোনো স্টেটমেন্ট নেই।”
পারভেজ হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আস্থার সংকটে পড়েছে বলেও মনে করেন রাকিব। তিনি বলেন, “যে কোনো ঘটনায় আমি তাদের সঠিক তথ্য প্রদানের আহ্বান জানাই এবং যে কোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদেরকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।”
পারভেজের পরিবারের পাশে ছাত্রদল সবসময় থাকবে বলে ঘোষণা দিয়ে তিনি পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবিএম ইজাজুল কবির রুয়েল, মশিউর রহমান মামুন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আবু হোরায়রা, সাধারণ সম্পাদক এম রাজীবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু, ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাঈমুল করিম লুইন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা, সাধারণ সম্পাদক দাউদ রায়হান, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।