বাংলাদেশের ‘স্বার্থবিরোধী চুক্তি’ করবেন না: সরকারকে ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ১৮:৫১
-68136e6e1ca58.jpg)
মে দিবসে নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে বাংলাদেশের বিষয়ে কোনো চুক্তি না করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গৃহযুদ্ধে জর্জর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়তা পাঠাতে মানবিক করিডোর গঠনে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানোর মধ্যে মে দিবসে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক দলের সমাবেশে এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “দয়া করে রাজনৈতিক দল ও জনগণকে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না, যেটি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।”

তার এই বক্তব্য বিতর্কের ঝড় তোলে। মিয়ানমার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ এখন বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। দেশটির জান্তা সরকার এই রাজ্যে খাদ্য ও জরুরি সরবরাহ করতে দিচ্ছে না, যে কারণে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে এবং এই প্রসঙ্গেই সহায়তা পাঠাতে মানবিক করিডোরের বিষয়টি এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব অবশ্য রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সরকার জাতিসংঘ বা কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা করেনি। তবে সরকার যে নীতিগতভাবে একমত, সে বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন তিনি।
বাসস গত মঙ্গলবার লিখেছে, প্রেস সচিব বলেছেন, “আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।
“এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করব।”
রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর পক্ষে অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।”
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মির্জা ফখরুল এর আগে বলেছেন, তার দল বাংলাদেশকে ‘আরেকটি গাজায়’ পরিণত হতে দেখতে চায় না।
শ্রমিক দলের সমাবেশে মির্জা ফখরুল দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবিও জানান। তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে আমরা এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বসবাস করছি। ফ্যাসিবাদ পতন ঘটলেও গণতন্ত্র ফিরে আসেনি।”

নয়াপল্টনে শ্রমিক দলের সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো যে সংস্কার পক্ষে একমত হয়েছে, সেগুলো সামনে নিয়ে আসুন এবং নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যেগুলো হয়নি, সেগুলো নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে পার্লামেন্টে আইন পাস হবে।”
এই সমাবেশকে ঘিরে দুপুর থেকেই নয়াপল্টন ও আশেপাশের এলাকা লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এতে শ্রমিক দলের পাশাপাশি বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “সংস্কারের শুরু করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সংস্কার তো আমাদের দাবি, সংস্কার আমাদের সন্তান।” “দেশের অস্তিত্ব নির্ভর করছে গণতন্ত্রের ওপর। নির্বাচনই গণতন্ত্র উত্তরণের পথ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেই সব সমস্যা দূর হবে।”
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানও বক্তব্য রাখেন।