
নির্বাচনের দাবি করা এখন ‘অপরাধ’ বলে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে-এটাই স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক রীতি। অথচ গত কিছুদিন ধরে দেশে এমন একটি আবহ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নির্বাচন আয়োজনের দাবিটাই যেন এক অপরাধ।”
জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আবারও বলতে চাই, সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন প্রশ্নে দুটি সময়সীমা দিচ্ছে।
সীমিত পরিমাণে সংস্কার চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে আর বড় পরিসরে সংস্কার চাইলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন- এমন অবস্থানের কথা একাধিকবার বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি বরাবরই বলছে, তারা নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ‘রোডম্যাপ’ চায়।
এবি পার্টির অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, “রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে, এটাই স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক রীতি। অথচ গত কিছুদিন ধরে সুকৌশলে দেশে এমন একটি আবহ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানোই যেন এক অপরাধ! জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য-মন্তব্য কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারকে আনন্দ দেয়। অপরপক্ষে এটি গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য অপমানজনক। রাষ্ট্র-রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে চলমান সংস্কার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি অবজ্ঞা করে, তাহলে সংস্কারের তাৎপর্যটা কী? এটি বহু মানুষের প্রশ্ন আজ।”
“দেশের প্রতিটি দল সংস্কারের পক্ষে। তারপরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এতো সময়ক্ষেপণ করছে, এ নিয়েও জনগণের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়ে চলেছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগ নিতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে। ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ ও সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকবে। রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন এবং পরিবর্তনে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে বাংলাদেশকে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে পারবে না।”
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজনীতির ময়দানে আমরা তাদের স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, দেশের স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন। উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য এক ও অভিন্ন। কী সেটি? সেটি হলো, দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং অবশ্যই জনগণের কল্যাণ সাধন।”
তিনি বলেন, “যে রাজনৈতিক দলটি (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্র হারিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্ম দিয়েছিল, মানুষের অধিকার হরণ করেছিল, গুম-খুন-অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল, বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল, গণঅভ্যুত্থানে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গণতন্ত্রকামী জনগণ দেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তিকে কখনোই মেনে নেবে না।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজ জানতে চায়, সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের আগামী দিনের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্লেইম গেম দিয়ে কিন্তু দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেবে।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের বলতে চাই—লুটপাট ও দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা হাতে নিয়ে সারা দেশের স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার অপেক্ষায়। স্থানীয় নির্বাচন পলাতক স্বৈরাচারের জন্য পুনর্বাসিত হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ। যারা বলেছেন, তারা হয়তো এই বিষয়টি বিবেচনা করেননি। আমি অনুরোধ করবো, বিষয়টিকে বিবেচনা করার জন্য।”