
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এক সময় জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নীতি নির্ধারণী নেতা থাকলেও এক সময় মতবিরোধে দল ত্যাগ করেন।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন।
রবিবার বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডি শংকরের ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে সাম্প্রতিক দেশকালকে জানিয়েছেন জামায়াতের ঢাকা উত্তরের প্রচার মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার।
রাজ্জাক এক সময় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচারের সময় আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিরোধের মুখে এক সময় দলটি ত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফেরেন।
রাজ্জাক ১৯৪৯ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও পরের বছর দেশে ফিরে বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন, পাশাপাশি জামায়াতের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯০ সালে ‘দ্য ল কাউন্সেল' নামে একটি আইনি ফার্মও প্রতিষ্ঠা করেন।
৭৬ বছর বয়সী রাজ্জাক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের পক্ষে প্রধান আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আসামিদের মধ্যে ছিলেন গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মোজাহেদ ও আবদুল কাদের মোল্লা।
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে দলটি জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল এবং তিনি দুই দশক ধরে দলকে এই বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
জামায়াত থেকে পদত্যাগ করার পর দলটির সংস্কারপন্থিদের নিয়ে গঠিত দল এবি পার্টির উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন রাজ্জাক। তবে সে পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেন ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর।
লন্ডন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি লেখেন, "এবি পার্টির সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। এজন্য আমি আর দলটির প্রধান উপদেষ্টা নই" ।
এবি পার্টির সে সময়ের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু তখন দেশের সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, আব্দুর রাজ্জাক প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সারজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অসুস্থতার কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানিয়েছেন।’
দলের নাম নির্ধারণ বিষয়ে রাজ্জাকের ভিন্নমত ছিল বলেও স্বীকার করেন মঞ্জু। বিষয়টিতে তিনি ‘একটু মনঃক্ষুণ্ন’ ছিলেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
২০২০ সালে আবদুর রাজ্জাকের প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন আব্দুর রাজ্জাক।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মনির ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, এশার নামাজের পর রাত সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে এবং সোমবার বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে রাজ্জাকের জানাজা হবে।