নারীমূর্তি ঝুলিয়ে জুতাপেটা নারীর বিরুদ্ধে ভয়ংকর বার্তা: নারী মৈত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১৪:০১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ফাঁসিতে ঝুলানো নারী প্রতিকৃতি। ছবি: সংগৃহীত
নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে চলমান তৎপরতা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শ্রমজীবী নারী মৈত্রী। সংগঠনটির সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী ও সাধারণ সম্পাদক স্নিগ্ধা সুলতানা ইভা এক বিবৃতিতে এসব কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ঘিরে যেভাবে কিছু মহল গালিগালাজ ও হুমকি দিচ্ছে, তা শালীনতার সব সীমা অতিক্রম করেছে। এসব কর্মকাণ্ডে নারীরা ক্ষুব্ধ, আতঙ্কিত।’
তারা আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারীমূর্তি ঝুলিয়ে যেভাবে জুতাপেটা করা হয়েছে, তা নারীর বিরুদ্ধে ভয়ংকর বার্তা দিচ্ছে। এটি কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। এই কাজ শুধু নারীর মর্যাদাকে কালিমালিপ্ত করছে না, বাংলাদেশকেও বিশ্বের চোখে খারাপভাবে তুলে ধরছে।’
তারা বলেন, “নারী সংস্কার কমিশনের কোন সুপারিশ সম্পর্কে কারও ভিন্নমত বা আপত্তি থাকতে পারে। কিছু সুপারিশ সম্পর্কে আমাদেরও ভিন্নমত রয়েছে। একটি বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক সমাজে এটিই স্বাভাবিক। কোনো কমিশনের কোনো সুপারিশই এখনও গৃহীত হয়নি। রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সুপারিশ গৃহীত হবে। কিন্তু আলাপ আলোচনার আগেই যেভাবে কমিশনের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেওয়া হচ্ছে তাও জবরদস্তিমূলক ফ্যাসিবাদী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ছিল বৈষম্যে বিরুদ্ধে এবং এই গণজাগরণ-গণ অভ্যুত্থানে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নারীর অধিকার ও মর্যাদাবিরোধী সাম্প্রতিক এসব তৎপরতা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থী।”
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নীরব ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন, “নারীর সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক অধিকার ও মর্যাদায় বিশ্বাসী হলে এসব অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে তাদেরকে পরিষ্কার অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।”
নারী মৈত্রীর নেতারা বলেন, “কমিশনের কোনো সুপারিশ এখনো গৃহীত হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়েই সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু এখন থেকেই কমিশনের বিরুদ্ধে যেভাবে হুংকার দেয়া হচ্ছে, তা ফ্যাসিবাদী মানসিকতার পরিচয়।”
তারা মনে করেন, “জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বর্তমান নারীবিদ্বেষী তৎপরতা সেই গণজাগরণের চেতনার পরিপন্থী।”
বিবৃতিতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর নিরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, “যারা নারীর সাংবিধানিক অধিকার ও মর্যাদায় বিশ্বাস করেন, তাদের এখনই এসব অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।”