
রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার বিষয়ে নিজেদের তৈরি করা একটি রূপরেখা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সংস্কার প্রস্তাবে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণের মতো বিষয়গুলোকেই মূল বিবেচনায় আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এই প্রস্তাব কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে হস্তান্তর করেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা মৌলিক সংস্কার বলতে শুধু নির্বাচনি ব্যবস্থা বা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের মতো বিষয়কে বুঝি না। আমাদের দৃষ্টিতে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা এবং বিকেন্দ্রীকরণ—এই তিনটি বিষয়ই মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি।”
সংলাপে আখতার হোসেন বলেন, “আমরা মনে করি, সাংবিধানিক ও রাষ্ট্র কাঠামোকে স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী উপাদান থেকে মুক্ত করা, সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণের বাইরে গিয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রতিফলিত করা এবং বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা—এসবই মৌলিক সংস্কারের অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ যে শাসন কাঠামোর মধ্যদিয়ে পরিচালিত হয়েছে, সেখানে স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী উপাদান রয়ে গেছে। এর ফলে জনগণ নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।”
আখতারের ভাষ্য, “এই স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে মুক্ত হয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা জীবন দিয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ যেন স্বার্থক হয়, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ অতীতের মতো যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ না থাকে, বরং একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে পারে—এই লক্ষ্যেই এনসিপি ‘মৌলিক সংস্কার’-এর রূপরেখা হাজির করেছে।”
সংলাপের শুরুতে ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, 'আজকের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের পাশাপাশি, জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে যে সমস্ত মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা এসেছে আমরা গ্রহণ করলাম। এটি পর্যালোচনা মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এর একটি প্রতিফলন থাকবে বলে আমরা মনে করি।”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অগ্রসর হচ্ছি। তার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে। যার লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথরেখা তৈরি করা। সেই প্রক্রিয়া আপনাদের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখাগুলো অবশ্যই সহায়তা করবে।”