ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াও, অধিকার ছিনিয়ে আনো: নেতা-কর্মীদের ফখরুল

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ২২:২৬

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মী ও তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন, “তরুণরা জেগে ওঠো, ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াও, অধিকার ছিনিয়ে আনো।”
শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড ময়দানে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের মহাসমাবেশে তিনি একথা বলেন।
“আজকে সময় এসেছে ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় জানানোর। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না।”
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “একদিকে আমরা এখানে সমাবেশ করছি, আরেকদিকে ঢাকায় সমাবেশ হচ্ছে নিউ মার্কেটে। দাবি একটাই-আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশে তারা বাকশাল কায়েম করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “অথচ বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়েছিলেন তিনিই। আর গার্মেন্টস শিল্পের ভিতও তার হাতে গড়া। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা এনেছিলেন খালেদা জিয়া। আজ যারা বিদেশ থেকে এসে বড় বড় কথা বলেন, তারা যেন এই ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে না পারেন।”
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমরা চাকরি চাও, ব্যবসা চাও, শান্তিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাও— এসব কিছুই তখনই সম্ভব, যখন দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে। আজকের সমাবেশের আহ্বান, তরুণরা জেগে ওঠো— ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াও, অধিকার ছিনিয়ে আনো।”
ফখরুল ইসলাম বলেন, “এক-দুজন নয়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অত্যাচারে লাখ লাখ মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। ১৫ বছর সে গোটা জাতির ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ২০ হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। ১ হাজার সাতশোর বেশি মানুষকে গুম করেছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছিল। আমাদের নেতা তারেক রহমান যার দিকে বাংলাদেশ তাকিয়ে রয়েছে, তিনি এখনো দেশে ফিরতে পারেননি। এই অবস্থার অবসান হয়েছে শুধু আমাদের তরুণ ভাইদের জন্য।”
তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তিনি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। দেশের স্বার্থের সঙ্গে আপস করবেন না। তিনি বলেছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে— আজ সেটাই বাস্তব।”
“যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের প্রচেষ্টায় প্রলোগ্রাউন্ড মাঠে আজ অভাবনীয় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রামকে আমরা সবাই বিশেষ চোখে দেখি, কারণ আপনাদের এই শহর থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।”
বক্তব্যের একপর্যায়ে শহীদ ওয়াসিমকে স্মরণ করে তিনি বলেন, “ওয়াসিমের রক্তের বিনিময়ে এসেছে নতুন স্বাধীনতার সূচনা। তাকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাই।”
এদিকে সমাবেশে যোগ দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে খেলাধুলা নিয়ে ব্যারিস্টার মীর হেলাল ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। স্পোর্টসকে কীভাবে আমরা আবার আগের জায়গায় ফেরত দিতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা হয় ইসরাফিল খসরু এবং হুম্মাম কাদের ভাইয়ের সঙ্গেও। আমি শতভাগ নিশ্চিত তারা যখন সুযোগ পাবেন, তারা তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চট্টগ্রামের সিগনেচার সব জায়গায় রাখবেন।”
“ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টনসহ যেই ধরনের খেলাধুলাই হোক না কেন সেটাকে তারা প্রমোট করবে সঠিক নিয়মে। এভাবেই চট্টগ্রাম থেকে আমরা আবার আগের দিনে ফেরত যাব” বলেন তামিম ইকবাল।
সমাবেশের আগে পলোগ্রাউন্ড এলাকায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ছাত্র, যুবক, শ্রমজীবী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিছিল নিয়ে আসেন কেউ হেঁটে, কেউ বাসে, কেউ ট্রাকে।
অনেকেই ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পলোগ্রাউন্ডে পৌঁছান। অনেকে আবার টাইগারপাস মোড়ে জমায়েত হন বড় মিছিলের প্রস্তুতি নিতে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতা ও চসিক মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদুল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান নাজিম।