ক্ষমতাচ্যুত ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে বিএনপি চেষ্টা করছে, নানা মহল থেকে আসা এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি এই অভিযোগকে বরং ‘ফাইজলামি’ বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, বরং কেউ এই চেষ্টা করলে বিএনপিই তার বিরোধিতা করবে।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।

‘বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস নয়’ বলে মন্তব্য করে নজরুল বলেন, “আমরা আওয়ামী পুনর্বাসন করছি বলে আলোচনা হচ্ছে! যেই দলটা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, দলের চেয়ারপারসনকে বিনা কারণে কারাগারে রেখেছে, তারেক রহমানকে নির্বাসনে রেখেছে, তার ছোট ভাই মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন।

“বিএনপির মহাসচিবসহ এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি। আর আমরা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করছি! এটা কি সম্ভব? এসব ফাইজলামির শেষ হওয়া উচিত।”

“আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস হবে? কেউ করতে গেলেও আমরা বাঁধা দেবো”, বলেন বিএনপি নেতা।

কারা বিএনপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন, সেই বিষয়টি স্পষ্ট করেননি নজরুল। তবে গত ১৭ মে জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ প্রশ্ন রেখেছেন, আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপি চলে কি না।

সেদিন কুমিল্লায় একটি আয়োজনে বক্তব্য রাখেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আমরা নিষিদ্ধ করতে পেরেছি কিন্তু আওয়ামী লীগের যে ডোনার, আওয়ামী লীগের অর্থ ব্যবস্থা, সেটা এখনো অক্ষত। আমি কুমিল্লায় আছি, যে উপজেলায় আছি, সেই উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে, বিএনপির রাজনীতিও এখন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে।”

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি’

আওয়ামী লীগ শাসনামলে দেশে গণতন্ত্র ছিল না বলে অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা সরকার পতন আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল, তা নিয়েও বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, “মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা ও ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের পতন ঘটানো।”

দলমত নির্বিশেষে দেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষ এই লড়াইয়ে শরিক হয়েছিল মন্তব্য করে নজরুল বলেন, “তবে জনগণের নির্বাচিত সরকার তথা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি।"

শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো কোন কোন বিষয়ে একমত হয়েছে, তার একটা তালিকা করে ‘সনদ’ করার দাবিও জানান বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “তাহলেই তো সমস্যা থাকার কথা না। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে বাধা কোথায়?

“নির্বাচন দেরি কেনো হবে তার ব্যাখ্যা তো আপনাদেরকে দিতে হবে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার চাই।"

সংবিধান সংশোধন সংসদে

সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদের এই নেতা। তিনি বলেন, “আমরা সংস্কার চাই। তবে সেটি অবশ্যই প্রয়োজন এবং সক্ষমতা অনুযায়ী হতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য পরবর্তী সংসদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্যই ২০১৭ সালে খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০‘ এবং ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই তারেক রহমান ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেন বলেও মন্তব্য করেন নজরুল।

তিনি বলেন, “যেটি সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে ৩১ দফা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার প্রস্তাব করছে সেগুলো আমাদের ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে।"

জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে সেই রূপরেখা বাস্তবায়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না সেটি আমরাই প্রথম বলেছি। ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বলেছি।

“কারণ, আমরা চাই রাষ্ট্রটি ভালো চলুক। যাতে কেউ একক ক্ষমতার অধিকারী এবং জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।"

নির্বাচন বানচালের ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে সেই ষড়যন্ত্র ‘প্রতিহত’ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।

আলোচনায় জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাও বক্তব্য রাখেন।