মৎস্য ভবনের সামনে ইশরাকের হাজারো সমর্থক, যান চলাচল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১৩:৪৯

মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ করেছে ইশরাকের সমর্থকেরা।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় এবার মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ করেছে তার সমর্থকেরা।
ইশরাকের শপথ গ্রহণে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তারা এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে।
সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট গেট, প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবনের মোড়ে জড়ো হয়। পরে তারা একত্রে মৎস্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং চারপাশের রাস্তা অবরোধ করেন।
সড়কে অবস্থান নিয়ে ‘খালেদা জিয়া, তারেক রহমান’, ‘ইশরাক ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘নগরপিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে উচ্চ আদালত তথা মৎস্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া রফিকুল ইসলাম জানান, ইশরাকে মেয়র করার দাবিতে চলমান যে আন্দোলন রয়েছে সেটার অংশ হিসেবে আজ আমরা এইখানে জড়ো হয়েছি। তাকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানো পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এ কর্মসূচির ফলে ওই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
এর আগে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে কাকরাইল মোড়ে যমুনার প্রবেশপথের কাছাকাছি অবস্থান নেয় ইশরাকের সমর্থকেরা। তবে সেখানকার রাস্তা আটকে দেয় পুলিশ।
ইশরাক হোসেনের পক্ষে চলমান কর্মসূচির সমন্বয়কারী ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে ষষ্ঠ দিনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে বলেন, “বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।” তিনি ঢাকা অচলেরও হুমকি দেন।
এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। তারা দাবি মেনে না নিলে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
নগর ভবনের কার্যক্রমও স্থগিত
নগর ভবনের কর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসনিক কার্যক্রম আজও স্থবির। মেয়রের দায়িত্ব বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনের কারণে নাগরিক সেবা কার্যত বন্ধ রয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে নগর ভবনের সিঁড়িতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। তারা জানান, মেয়র না থাকায় কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে এবং নাগরিক সেবা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন তারা।
নগর ভবনের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করলেও মূল দপ্তরগুলো কার্যত অচল। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ডিএসসিসির মশক ওয়ার্কার্স পরিষদও।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয়ও নগর ভবনের মধ্যেই অবস্থিত। আন্দোলন শুরুর দিন ১৪ মে থেকে সেখানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে আর দেখা যায়নি, কার্যালয়টিও কার্যত বন্ধ রয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ‘তোমার আমার মেয়র কে—ইশরাক ছাড়া আর কে’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা চলবে না’—এমন নানা স্লোগানে নগর ভবন প্রাঙ্গণ মুখর করে রেখেছেন।
সিটি করপোরেশনের এক কর্মচারী মুশফিক ইব্রাহিম সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি—ইশরাক হোসেনকে দ্রুত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন।
তবে আজ সকালে নগর ভবনের বাইরে ইশরাক হোসেনের সমর্থক বা বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। মূল ফটকের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চটিও আজ ছিল অনুপস্থিত। ভিতরে নিরাপত্তা জোরদার করতে অতিরিক্ত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ইশরাক মেয়র পদে বসতে পারবেন কি না, উত্তর মিলবে বুধবার
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন দায়িত্ব নিতে পারবেন কি না—সেই প্রশ্নে হাইকোর্টে আদেশ দিতে পারে বুধবার। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট স্থগিত চেয়ে করা একটি রিটের শুনানি শেষে মঙ্গলবার এ আদেশের দিন ঠিক করেছেন বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে ছিলেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস জয়ী হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই ভোটে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে একই বছরের ৩ মার্চ আদালতের দ্বারস্থ হন বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকে অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সরকার পতনের পর ইশরাক আগের মামলা সংশোধন করে নিজেকে মেয়র ঘোষণা করার আবেদন করেন। ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ২৭ মার্চ ওই আবেদন মঞ্জুর করে তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করেন এবং ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন।
আদালত রায়ে বলেছিলেন, ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। সে অনুযায়ী গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে।
তবে একই দিন, রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি ওই রায় ও গেজেটের বিরুদ্ধে আপিলের উদ্যোগ নেন এবং ইশরাককে শপথ না নেওয়ার আইনি নোটিশ পাঠান। পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন, যেখানে রায় ও গেজেট কেন বাতিল করা হবে না এবং কেন ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল চাওয়া হয়।
এই রুলের ওপর আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। হাইকোর্টে বুধবার আদেশ দিলে পরিষ্কার হতে পারে, ইশরাক মেয়রের দায়িত্ব পেতে চলেছেন কি না।