Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

দ্বিতীয় দিনের প্রথম দফা বৈঠক শেষে যা বললেন রাজনৈতিক নেতারা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১১:৩০

দ্বিতীয় দিনের প্রথম দফা বৈঠক শেষে যা বললেন রাজনৈতিক নেতারা

রবিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। ছবি: দেশকাল নিউজ

দ্বিতীয় দিনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রবিবার রাতে আলোচনায় বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সব সংস্কার নয়, বরং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সব সংস্কার এই সরকারকেই করতে হবে তা নয়। আর এটা সম্ভবও হবে না। নির্বাচন বেশি বিলম্ব হলে উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

প্রথম দফায় ১১টি দলের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাবেক আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া আসেননি।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনীতির গতিধারা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি যে, পরিস্থিতির দিকে আমাদের খুব ভালো করে নজর রাখতে হবে।

গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে নষ্ট করতে দেশের ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র আরও পেকে উঠছে। সেখান থেকে যদি দেশকে রক্ষা করতে না পারি, রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।”

“এই কাজটা করার জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যেটুকু করণীয়, সেটাকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হব, সরকারেরও উচিত হবে এই সহযোগিতাটাকে আরও ফলপ্রসু করা, যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ রচনা করতে পারি।”

তিনি বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে এরশাদের পতনের পর যেরকম আচরণবিধি তৈরি করেছিলাম, সেরকম একটা আচরণবিধি তৈরি করা যেতে পারে এবং এটা একটা সুষ্ঠু ধারা হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “মতের তারতম্য থাকবে। সেটাকে এনকারেজ করা উচিত। কিন্তু কোনটা কার্যকর হবে সেটা নির্বাচন করার দায়িত্ব জনগণের। জনগণের মতামত যাতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়, তাই নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে।”

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সংস্কার অর্থবহ করতে হলে জনগণকে নিয়ে করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামত নেওয়ার জন্য পদ্ধতি হচ্ছে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

এজন্য যেগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন সেগুলো করে নিয়ে, আমরা যদি জনগণের অংশগ্রহণে সংস্কার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই, এটাই হবে স্বার্থকতা। একচোটে সব কাজ করে ফেলতে পারব, এটা না ভেবে অথবা এই সরকারকেই সব সংস্কার করতে হবে এটার কোনো মানে নেই।”

তিনি বলেন, “সরকারকে বলেছি সমাধানের জন্য যদি বেশি সময়ক্ষেপণ করেন তবে উল্টাটাও হতে পারে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।”

জুনের পর নির্বাচন কোনোভাবেই গড়াবে না

নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের কথা হয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের এই পরিবর্তনকে একদমই স্বীকার করতে চায় না। বরং তারা আমাদের একদিনে ধ্বংস করে দিতে চায়। এজন্য যা যা করা দরকার, তারা তাই করছে- এই ছিল উনার (প্রধান উপদেষ্টা) কথা।

এজন্য উনি বেশ চিন্তিত, উনি চাইছেন সমস্ত জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকবদ্ধ হওয়া দরকার, কিন্তু দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে। এজন্য উনি চিন্তিত ও হতাশ।”

“আমরা বলেছি এই বিষয়টাতে সবাই ঐকবদ্ধ থাকব। আরেকটা বিষয় উনি বলেছেন- ‘আমি ভেবেছিলাম যে আমার সব কাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে, তাই আমার দায়িত্বে থাকার দরকার নেই। এজন্য হয়তোবা আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম আমি পদত্যাগ করছি। এরপর একটা কাহিনী বললেন, বাকিরা তাকে আটকিয়েছে, পদত্যাগ লিখতে দেয়নি। তাকে ধরে রেখেছে।”

মান্না বলেন, “আমরা একটা ফেয়ার ইলেকশন চাই। সেজন্য যা করার তিনি করবেন। উনি বলেছেন, আমি পদত্যাগ আকারে লিখে দিচ্ছি যে, জুনের পর নির্বাচন কোনোভাবেই গড়াবে না। যারা যারা স্বন্দেহ করে যে, আমি নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাই, ক্ষমতায় থাকতে চাই। তাদেরকে বলব এই সরকার সময় বাড়াতে চায় না। সামনে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেওয়ার জন্য যা করা দরকার করব।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বললেন, গত কয়েকদিনের ঘটনায় বিব্রতবোধ করেছেন। এজন্য তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। এটা খোলামেলা প্রকাশ করেছেন। আমরা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ এই মুহূর্তে কোনো সমাধান করবে না। বরং বাংরাদেশ একটা সংকটের মধ্যে পড়তে পারে।

আমরা বলেছি মাঝ নদীতে মাঝি বদলাতে হয় না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা রাখতে চাই। আমাদের কাছে মনে হয়েছে আপনারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছেন না। তাই আমরা বলেছি, সবাইকে সমানভাবে বিচার করবেন। আপনার নেতৃত্বে একটা সরকার দেখতে চাই।”

তিনি বলেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্ত- মানবিক করিডোর, বন্দর এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। সিদ্ধান্তগুলো নির্বাচিত সরকার এসে নেবে। আগামী ১৫ থেকে এক মাসের মধ্যে যেসব প্রশ্নে ঐকমত্য রয়েছে বেশিরভাগ দল, সেগুলো যাতে বাস্তবায়ন হয়।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, “আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষের মতো দেখা ভুল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যদি আপনাদের ভালো বোঝাপড়া থাকে, তবে ৩১ ডিসেম্বরের পরেও নির্বাচনের জন্য সময় লাগে, যদি আরও কয়েক মাস সময় লাগে সমস্যা হবে না। আপনাদের উপদেষ্টাদের কারও কারও কারণে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এখন যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেটা আপনার প্রজ্ঞার মাধ্যমে সমাধান করবেন।”

বৈঠকে ছিলেন- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমেদ, নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫