Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

৫ আগস্ট ‘ধরা পড়েছিলেন’ ওবায়দুল কাদের

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১৬:০৬

৫ আগস্ট ‘ধরা পড়েছিলেন’ ওবায়দুল কাদের

২০২৪ সালর ৫ আগস্ট সংসদ ভবনের চিত্র। ওবায়দুল কাদেরের ভাষ্য, তিনি সংসদ ভবনের কাছেই একটি বাসায় ছিলেন। সেখানেই তাকে আটক করে একদল ছাত্র জনতা। ছবি: উইং শট।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের দিন ছাত্রদের একটি দলের কাছে ধরা পড়েছিলেন বলে ভারতের কলকাতায় একটি বাংলা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।

ক্ষমতাচ্যুতির আগে থেকে আত্মগোপনে থাকা এই নেতা এও জানিয়েছেন, সেই ছাত্ররাই শুরুতে তাকে সেনাবাহিনী বা জনতার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবলেও পরে নিরাপদে দূরে কোথাও দিয়ে যায়।

এরপর তিন মাস দেশে থেকে ভারতে যান ওবায়দুল কাদের।

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে হামলার ভূমিকায় গত ১০ নভেম্বর নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির নেতা পশ্চিমবাংলার সংবাদভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল দ্য ওয়ালের নির্বাহী সম্পাদক অমল বোসের কাছে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

২৩ মিনিটের এই সাক্ষাৎকারটি টেলিফোনে নেওয়া হয়েছে। এতে নিষিদ্ধ দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ভারতের কলকাতায় আছেন বোঝা গেলেও তিনি সেখানকার কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।

সাক্ষাৎকারে ছাত্রদের হাতে ধরা পড়ার পর কীভাবে তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়, সেই বর্ণনা ছাড়াও তিন মাসে দেশে থেকে কী করেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কী কী বিষয়ে কথা হয়েছে, সেটি ফুটে উঠেছে।

কাদের এও বলেছেন যে, তারা আবার দেশে ফিরে এসে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছেন। আর সরকারে থাকার সময় কোনো ভুল ত্রুটি হলে সে বিষয়ে ক্ষমা চাওয়ার যে প্রসঙ্গ বারবার আসছে, সেটি নিয়ে দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্ত হবে।

কাদের যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি দেশকাল নিউজ ডটকম। তার যে ভাষ্য, সেই দাবি যাচাইয়ের সুযোগও সীমিত। লাখো মানুষের মধ্যে কাদের হাতে তিনি ধরা পড়েছেন, সেটি নিয়ে নিশ্চিতভাবে কারও পক্ষে কথা বলা অসম্ভব একটি ঘটনা।

গত বছর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা আপনার সম্পর্কে প্রায় কিছু জানতে পারছিলাম না, আপনার বক্তব্যও পত্র পত্রিকায় আসছিল না। আজকে একটা বিবৃতি দেখেছি, আপনি মো. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছেন, আপনি প্রথমেই যদি এটা ব্যাখ্যা করেন, প্রশ্ন রাখেন অমল বোস।

কাদেরের জবাব: এই বিষয়টা তো দেশে বিদেশে ভারতবর্ষেও সবার কাছেই পরিষ্কার। আমি ৫ আগস্টের সেদিনের যে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ ছাত্র অভ্যুত্থান, সে সময় আমি খুবই ভাগ্যবান, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না, মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম।

আমি সংসদ এলাকায় আমার নিজের বাসাকে এড়িয়ে পার্শ্ববর্তী আরেকটা বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন চার দিক থেকে মিছিল আসছিল। ওইটা আসলে ছিল প্রধানমন্ত্রীর গণভবনকেন্দ্রিক এবং আমরা অবাক হলাম যে সংসদ এলাকাতেও এটা ছড়িয়ে পড়ে এবং একটা লুটপাটের লুম্পেনস্টেট, কতগুলো ঘটনা ঘটে।

সেখানে বিভিন্ন ধরনের লোক আসে এবং এদের মধ্যে বেশিরভাগই মনে হয়েছে, এটা কোনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান, এটা ‘লুটপাটের অভ্যুত্থান’।

আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সে বাসাতেও হামলা করে। তারা জানত না যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসা তারা লুটপাট করেছে, যে বাসাতে গিয়ে আমি আশ্রয় নিলাম, সেখানে তারা হামলা করবে, এটা আমি ভাবতে পারিনি।

সেখানেও গিয়ে আমি দেখলাম, অনেক লোকজন ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর, লুটপাট করতে থাকে। আমি আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে ঢুকে পড়ি, অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় ৫ ঘণ্টা।

একটা পর্যায়ে এরা বাথরুমের ভেতর, সেখানেও কমোড, বেসিন- এগুলোও তো লুটপাট করেছে সব জায়গায়। সেগুলোর লোভে… প্রথমে তাদেরকে আমার ওয়াইফ, সে বাথরুমের মুখে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিল যে, ‘আমি অসুস্থ’। এ কথা বলে তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল।

একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে যেগুলো আছে, সেগুলো লুট করার জন্য জোরপূর্বক প্রবেশের হুমকি দেয়।

প্রায় ১০ মাস আত্মগোপনে থাকার পর ওবায়দুল কাদের পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়ালে টেলিফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

সে সময় আমার ওয়াইফ জিজ্ঞেস করে কী করব? আমি বললাম খুলে দাও, যা হওয়ার হবেবে। তারপরে ৭/৮ জন ছেলে ঢুকল খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভঙ্গি। হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকায়। আমাকে বলে, ‘নেত্রী চলে গেল, আপনি যাননি কেন?’ আমি কিছু বলছিলাম না।

ছেলেদের মধ্যে কী ভাবের উদয় হয়েছে জানি না। তারা আমাকে বলে, ‘আপনার ছবি তুলব’। তারপর আমার ছবি তুলতে শুরু করে, সেলফি নিচ্ছিল।

এরা ছাত্র, অনেকে আমাকে চিনত। কী কারণে যেন, তাদের আক্রমণাত্মক যে মনোভাবটা ছিল সেটা নেমে এসে শীতল হয়ে গেল। তারা ঠান্ডা মেজাজে কথা বলছিল।

এদের মধ্যে আবার এক পর্যায়ে একটা গ্রুপ চেয়েছিল আমাকে রাস্তায় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। কেউ কেউ আবার এটাও চেয়েছিল যে জনতার হাতে তুলে দিতে। তখন মানসিকভাবে ভেতরে ভেতরে খুব ভেঙে পড়েছিলাম।

এরপরে এরা এদের একটা শার্ট, এদের ওই ব্যাজ, লাল পতাকা শরীরে লাগিয়ে মুখে একটা মাস্ক দিয়ে আমাকে হাঁটতে হাঁটতে সংসদ এলাকা থেকে বড় রাস্তায় গণভবন অভিমুখী রাস্তা, ওখানে নিয়ে যায়।

হঠাৎ করে কোত্থেকে একটা ট্যাক্সি আসে, একটা ইজিবাইক। সেটা থামিয়েছিল। ওখানে কোনো গাড়িঘোড়া ছিল না। ওটা হঠাৎ করে ওটা কোত্থেকে যেন আসল। হয়ত আমার ভাগ্য।

এরা দুজনে মিলে আমাকে নিয়ে উঠল। তখন অসংখ্য মানুষ, বলতে লাগল, ‘চেকআপ, চেকআপ’। এরা বলতে লাগল যে, ‘আমাদের চাচা, চাচি অসুস্থ হাসপাতালে নিচ্ছি, ডিসটার্ব করো না’।

এই করে করে নিয়ে গেল অনেক দূরের একটা জায়গায়। বেঁচে থাকাটাই সেদিন একটা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। অপ্রত্যাশিতভাবে বেঁচে গেছি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সে সময়।

আমাকে আর্মির হাতে তুলে দিতে পারত, রাস্তায় অসংখ্য মানুষ। সেখানে অনেকেই তো আছে আমাদের অপজিশনে, মেরে ফেলতে পারত।

তারপর আপনি কোথায় রইলেন? থাকলেন কী করে ও রকম পরিস্থিতিতে?

আমি বাংলাদেশেই ছিলাম ৩ মাসের মতো। আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল। ওখান থেকে কিছু করা যায় কি না, সংগঠিত করা যায় কি না। বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক অসন্তোষ, কর্মচারীদের অসন্তোষ, এগুলো প্রতিদিনই লক্ষ্য করতাম।

মানে পেশাজীবীদের যে ক্ষোভগুলো আরকি।

ক্ষোভগুলো রাস্তায় নেমে এসেছিল। বিশেষ করে গার্মেন্টস। সে সময় নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি কিছু করা যায় কি না। এই চিন্তাতেই তিন মাস পরে রইলাম।

ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তিনি তিন মাস দেশে থেকে শ্রমিক ও পেশাজীবী বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করেছেন।

এরপরে একে একে সবাই অ্যারেস্ট হচ্ছে। আমি তো নেত্রীর পরের স্থানেই। তখনই ২১২টা খুনের মামলায় আমি আসামি হয়ে গেছি। এই অবস্থায় অনেকেই বলল, এখান থেকেও (কলকাতা) অনেক অনুরোধ আসছিল, আমি যেন সতর্কভাবে এইদিকে চলে আসি।

এভাবেও চিন্তা করলাম, আমার বাইপাস সার্জারি হয়েছে, অনেকগুলো ওষুধ খেতে হয়। আমি এখানে ধরা পড়লে ওষুধ পাব কীভাবে? তারপরে অনেক কিছু ভাবনা চিন্তা করে…

আপনি রইলেন, তখন আপনার কোনো সমস্যা হলো না? ছেলেগুলো কোথাও আপনাকে পৌঁছে দিল। ওরা এটা আর ফাঁস করেনি?

আমি রাতেই ওখান থেকে আবার…

কিন্তু এই ছেলেগুলো এ রকম করল, এটার কারণটা কী মনে হয়, ওরা যে কেন আপনার প্রতি সদয় হলো, আপনাকে বাঁচাল?

এর মানে আমিও বুঝিনি।

এটা কি হতে পারে যে এরা আওয়ামী লীগেরই? তাৎক্ষণিকভাবে ওরা বিক্ষুব্ধ হয়েছিল…

না, আওয়ামী লীগের হলে তো আমি চিনতাম।

অনেকে বলে আপনার কিছু ভূমিকা তখন বিতর্কিত ছিল, আপনি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে যেভাবে মাঠে নামিয়েছিলেন পাল্টা, তার ফলেই এ রকম একটা বড় জনরোষ তৈরি হয়ে গেল?

এ কথা মোটেও ঠিক না, আমি কখনও বলিনি ছাত্রলীগকে ‘এই অভ্যুত্থান দমাও’। সেটা লন্ডন থেকে আমাদের এক ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার, ও এ কথা বলে।

ও তখনকার ভিডিও নিয়ে এটা প্রচার করেছে মাস তিনেক আগে। সেখানে ছাত্রলীগের নামও ছিল না। ওই দিন ছাত্রলীগই যথেষ্ট- এই ধরনের কোনো বক্তব্যই ছিল না আমার বক্তব্যে।

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার চিত্র। কাদেরের দাবি, তিনি ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেননি।

আর আমি পার্টির সেক্রেটারি। তারা আমার মেট্রোরেল পুড়িয়ে দিচ্ছে, আমার সেতু ভবন পুড়িয়ে দিচ্ছে। তারা বিটিভি ভবন পুড়িয়ে দিচ্ছে, তারা আমার অফিস আক্রমণ করতে কতবার আসছে, পার্ট অফিস, তারা গণভবনমুখি আক্রমণ শানাচ্ছে, সে সময় আমি কি আমাকে সেইভ করব না? আমার দলকে সেইভ করব না? আমার নেত্রীকে সেইভ করব না?

তখন সে সময় আমি পার্টির সেক্রেটারি হিসেবে আমার ওপর সময় আরোপিত যে দায়িত্ব, সে দায়িত্ব পালন করেছি। এটা যে কেউ করত, আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তিনিও করতেন।

আপনারা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, এত বড় পার্টি, আপনারা দেশ তৈরি করছেন, আপনারা বুঝতে পারলেন না এত বড় একটা জনমত তৈরি হয়েছে? এটা কেন হলো?

এইটা একটা আকস্মিক ঘটনা। এটা তো শুরু হয়েছে কোটা দিয়ে, শেষ হয়েছে এক দফায়।

এটা এক দিনের পরিকল্পনায় হয়েছে নাকি দীর্ঘ দিনের?

এটা একটা ‘ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা’, একটা বিস্ফোরণ হয়ে যায়। সেটা ইন্টেলিজেন্সের একটা ব্যর্থতা তো ছিল। ব্যর্থতা যে ছিল না তা তো বলা যাবে না।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনি কি কোনো দায় নিচ্ছেন? আপনি তিনবারের সাধারণ সম্পাদক, আপনার নেত্রী আপনাকে…

আমার নেত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে আমি কাজ করেছি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। আমি ভুলের ঊর্ধ্বে নই, মানুষের ভুল হবে। সে ভুল ত্রুটি আমারও থাকতে পারে।

আপনি কোনো ভুল চিহ্নিত করেছেন যে এটা আপনার ভুল হয়েছিল?

আমি কাজ করেছি।

কাজ করলে ভুল হয়…

চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি, পার্সেন্টেজ নেইনি। আমার মন্ত্রণালয়ে এটা সবাই জানে। তারপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করতে কমিশন নেইনি, কাউকে পদায়ন করিনি, চাঁদাবাজি করিনি, আমি সেই দিক থেকে নিজেকে একদম নির্দোষ বলে নিজেকে সাব্যস্ত করতে পারি।

আপনাদের সময়ের নির্বাচন, মানবাধিকার হরণ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এই সমস্ত অনেক অভিযোগ এবং দুর্নীতির বিষয়ও সামনে আসছে, অবশ্যই সব হয়ত সত্য নয়। কিন্তু আপনারা এতবড় একটা ঘটনার পর ভুল স্বীকার কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেননি। এই প্রশ্নটা আসে বিভিন্ন মহল থেকে।

দেখুন, আমরা এই দেশকে যা কিছু দিয়েছি, যা কিছু করেছেন আমাদের নেত্রী এটা কোনো দুর্নাম নয়। এই উন্নতি বাংলাদেশে কল্পনাই করা যায় না। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ, ১৫ বছর পরের বাংলাদেশ দিন আর রাতের মতো পার্থক্য। তাদের সমালোচনা তারাই করুক।

আন্দোলনের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের যে অভিযোগ উঠেছে, সে ঘটনায় আওয়ামী লীগ ক্ষমা চাইবে কি না, এই প্রশ্নে কাদের বলেছেন, দেশে ফেরার পর এ নিয়ে আলোচনা হবে

যারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে, যারা অমাবশ্যায় দেখে পূর্ণিমায়, তারা সমালোচনা করুক। সমালোচনার জবাব তো আমাদের আছে। সময় হলে দেশের মাটিতে… সব কিছুরই মূল্যায়ন আমরা করছি, দেশের মাটিতে গিয়েও করব, যখন সময় আসবে।

আপনি দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন, বলা হচ্ছে যে আপনার ভুল ত্রুটির কারণেই আপনাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছিল। এটা এক ধরনের সাজার মতো।

কিছু লোক আছে, তারা এসব বলে শান্তি পায়। তাদের একটা সুখানুভূতি আছে। আমাকে তিন তিনবার সাধারণ সম্পাদক করল, এটা তো অনেকের হওয়ার কথা না। আমাদের মতো পার্টিতে এ ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা ছিল, এটা এখনও আছে… কাজেই এটা অবাস্তব কোনো কিছু না।

এটা আমাদের মতো দেশে, আমাদের যে পার্টি সিস্টেম, এখানে আওয়ামী লীগের মতো পাল্টিক্লাস পার্টি, এখানে দলের অভ্যন্তরেও প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে এ ধরনের কিছু অপ্রিয় কিছু ঘটনা ঘটতে পারে।

আপনার নীরবতার তাহলে কারণ কী ছিল?

আমাকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই খোঁজ নিয়েছিলেন। ওনি সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন আমার অসুস্থতা নিয়ে। যে অবস্থায় আমি দেশে ছিলাম, ওনি বলেছেন, টোটাল চেকআপ করো, তোমার অন্য কিছু করতে হবে না। পারলে কিছু লেখ, ওখান থেকে এ দেশে নিয়ে লেখ, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে, তোমার চোখে যা দেখেছ। এগুলো নিয়ে লেখালেখি করো, কখন কী করতে হবে আমি সেটা বলব।

আমি কখনও ওনার সঙ্গে দেখা করতে চেষ্টা করিনি। কারণ, ওনি যেখানে আছেন, সেখানে হাই সিকিউরিটি। সেখানে কেন দেখা করতে চাইব? ওনার যখন প্রয়োজন তখন আমাকে (ডেকে নেবেন)

আমি ভালো করেছি কি মন্দ করেছি তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সব কিছু জানেন। আমার জীবন আমাদের কর্মধারা।

কিন্তু আমরা তো শুনতে পারছিলাম, আপনার জায়গায় কে হবেন, এটাই এখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ এবং মাঝারি স্তরের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে ইঁদুর দৌড়। পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থাকছেন না। এবার কে হবেন, সে নাম দিয়ে কামড়াকামড়ি, ইঁদুর দৌড়, এটাই কিন্তু পাচ্ছি খবর।

এই কামড়াকামড়ি, এটা অসুস্থ রাজনীতি। এখনও আমরা দেশের বাইরে। যে ক্ষমতা আমরা হারিয়েছে, সে ক্ষমতা কখন পাব সে বিষয় তো… আগে দেশ নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। দলে কে কী হবে, দেশে গিয়ে সেটা ঠিক করা দরকার। এখন এখানে বসে আমরা কামড়াকামড়ি করলে তাদের আমাদেরই ক্ষতি।

এখন আমাদের সবার ঐক্য আমাদের দেশকে আবারও বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আপনারা কি আবার আশাবাদী যে আপনারা ফিরবেন এবং শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন?

আমরা শতভাগ আশাবাদী।

এটা কেন? আমরা আরও অনেকের মুখে শুনছি, এর কারণটা কেন আপনারা মনে করছেন?

আমরা মনে করছি এ কারণে, বাংলাদেশের জনগণ… আপনি এখন জনমত নেন, বেশিরভাগ মানুষ বলছে, শেখ হাসিনাই ভালো ছিল, শেখ হাসিনাই ভালো চালিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে হারিয়ে আমরা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি।

আমাদের কাছে যেটা, সেটা আমাদের আদর্শ। বাংলাদেশের জন্মের চেতনা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। এই জায়গায় আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

ভারত সরকার ছাড়া আর কোনো দেশ কিন্তু আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ করা নিয়ে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দিল না। আবার আপনারাও দুঃখ প্রকাশ কিংবা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন না। এই জায়গায় কি একটা কোনো জেদাজেদির জায়গা তৈরি হলো? মানে আওয়ামী লীগ কি একটু একঘরে হয়ে যাচ্ছে না?

না, এখানে জেদাজেদির কিছু নেই। ভারত আমাদের দুঃসময়ের বিশ্বস্ত বন্ধু। সংকটে আমরা বারবার ভারতের কাছে ছুটে এসেছি। অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। আমরা কোনো দেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছি না, তারাও সমালোচনা করছে না। আমরা এখন আমাদের দেশকে যেখান থেকে আমরা বাংলাদেশে স্থানচ্যুত হয়েছি, যেখান থেকে দেশে শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, সেখানে আমাদের ফিরে যেতে হবে।

তার জন্য আমাদের চিন্তা আমরা কারও বিরুদ্ধে নেই, কারও সমালোচনাও করি না।

কিন্তু তার জন্য তো দেশবাসীর কাছে ন্যূনতম ভুল তো স্বীকার করতে হবে।

ভারতে বসে আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কেন করব? আমি দেশে গিয়ে করব। আমার ভুলের জন্য আমার ভুল ত্রুটি হলে আমাদের নেত্রী আছেন, তিনি দেশবাসীকে বলবেন। এখান থেকে বলা কি ঠিক?





Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫