Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস জাপানের

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১৩:৩৭

অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস জাপানের

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রগঠনের প্রচেষ্টা ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণের যাত্রায় জাপানের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার সকালে টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।

দুই দেশের মধ্যে স্বাধীনতার পর থেকে গড়ে ওঠা দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে উভয় নেতা কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদারে একমত হন। তারা ‘মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক’ (এফওআইপি) ধারণায় অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন—এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও যৌথ সমৃদ্ধির পথে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।

জাতিসংঘ সনদের নীতিমালাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তা রক্ষায় সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকারও করেন দুই নেতা।

বৈঠক শেষে জাপান-বাংলাদেশ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয়পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও পারস্পরিক আগ্রহের নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জাপান আমাদের যে ধারাবাহিক সহযোগিতা দিয়ে এসেছে, বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড কাঠামোর আওতায় মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (এমআইডিআই), তা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে।”

তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা জোরদারের লক্ষ্যে উন্নয়ন নীতিগত ঋণ এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রুটে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে জাপানের অর্থায়নের জন্য ধন্যবাদ জানান।

বৈঠকে বিনিয়োগ ও ব্যবসা প্রসারে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও আলোচনা হয়, যার মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন, ব্যাটারিচালিত সাইকেল কারখানা গড়া, তথ্য নিরাপত্তা পাইলট প্রকল্প, এবং বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত চুক্তি।

দুই দেশ অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) দ্রুত চূড়ান্ত করতে আলোচনার গতি বাড়াতে সম্মত হয়।

নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে জাপান থেকে পাঁচটি টহল নৌযান সরবরাহ এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার আগ্রহের কথাও জানায় উভয়পক্ষ।

মানবসম্পদ উন্নয়ন, সংস্কৃতিগত সম্পর্ক জোরদার ও দক্ষ জনবল আদান-প্রদানে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে একমত হন দুই নেতা।

প্রধান উপদেষ্টা হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ প্রকল্পে জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও দুই নেতা আলোচনা করেন। শিগেরু ইশিবা বাংলাদেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয় এবং তাদের জন্য মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস ভাসানচরসহ রোহিঙ্গাদের জন্য জাপানের অব্যাহত সহায়তার প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এই সংকটের স্থায়ী সমাধান হচ্ছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন।”

দুই দেশ এই সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক সংলাপ জরুরি বলেও মত দেয়।

বৈঠক শেষে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আশা করছি, সুবিধাজনক সময়ে তিনি আমাদের দেশে আসবেন।”

বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫